thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

ঢাকা যখন দ্বিতীয়, ঢাবিতে তখন হাহুতাশ!

২০১৭ এপ্রিল ১৫ ২৩:৫৯:৩৯
ঢাকা যখন দ্বিতীয়, ঢাবিতে তখন হাহুতাশ!

ওমর হায়দার, ঢাবি প্রতিনিধি : সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীর শহরের তালিকায় বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা; প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান দ্য নেক্সট ওয়েব ডটকমের জরিপ থেকে প্রকাশিত (শনিবার, ১৫ এপ্রিল) এ তথ্যই প্রমাণ করে আমাদের দেশে, বিশেষ করে ঢাকায়, তথ্য-প্রযুক্তি সেবাগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা কতটা বেড়েছে। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির এমন উৎকর্ষতার মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার সেন্টারের বড়ই দুর্দশা! সেখানে তথ্য-প্রযুক্তি সেবা রয়েছে, কিন্তু সেবা লাভে উচ্চমূল্যের ফি পরিশোধ করার শর্ত এবং প্রিন্টিং সুবিধা না থাকায় এই সাইবার সেন্টার ব্যবহারে আগ্রহ নেই ঢাবি শিক্ষার্থীদের। ব্যবহারকারীর পদচারণা না থাকায় সাইবার সেন্টারটিতে যেন শুন্যতার বসবাস, হাহাকার; শিক্ষার্থীদের হাহুতাশ।

গেল কয়েক বছরে তথ্য-প্রযুক্তির সেবার খরচ কমেছে কয়েক ধাপে। অথচ ঢাবির সাইবার সেন্টারটি এখনও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৯ বছর আগে নির্ধারিত ফি নিচ্ছে। কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নির্ধারিত ঘন্টা প্রতি ১২ টাকা ফি এখনও বহাল রয়েছে সেখানে। উচ্চমূল্যের কারণে এই সাইবার সেন্টারের সেবা নিতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দিনদিন কমছে। বছরে দুই লাখ টাকা বরাদ্দের এ সাইবার সেন্টারটির সুফল পাচ্ছে না দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তথ্য-প্রযুক্তি সেবা দিতে ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশেই প্রতিষ্ঠা করা হয় এই সাইবার সেন্টার। শুরুর দিকে এটি শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল বলে জানা গেছে। তবে এখন সেই চিত্র ভিন্ন। এই সেন্টার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীর অভাবে বেশির ভাগ সময়ই অব্যবহৃত থাকছে কম্পিউটারগুলো।

সাইবার সেন্টার ব্যবহার করতে গেলে একজন শিক্ষার্থীকে মাসিক ভিত্তিতে কার্ড নিতে হয় সাইবার সেন্টার থেকে। কার্ড ইস্যুর তথ্য লিপিবিদ্ধ করা বই থেকে জানা গেছে, গত ৭ মাসে সর্বমোট ৪২৫ জন শিক্ষার্থী সাইবার সেন্টারের সেবা গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ৪২ জন, অক্টোবরে ৪৪ জন, নভেম্বর ৬৬ জন, ডিসেম্বর ৬১ জন ব্যবহার করেছেন। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৭২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬৫ জন, মার্চে ৭৫ জন সেবা গ্রহণ করেছেন। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দুইজন শিক্ষার্থী এই সাইবার সেন্টার থেকে সেবা গ্রহণ করছে।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবহার কার্ডের অতিরিক্ত ফি, প্রিন্টিং সুবিধা না থাকার কারণে সাইবার সেন্টারে আসছেন না তারা।

এই সাইবার সেন্টারের প্রতি অনাগ্রহের কারণ জানাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুর রহমান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘এখানে কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য প্রতি ৩০০ মিনিটে ৬০ টাকা করে দিতে হয়। বাংলাদেশের কোথাও তথ্য-প্রযুক্তি সেবার মূল্য এত বেশি কিনা আমার জানা নেই। এ ছাড়া কোনো অ্যাসাইনমেন্ট কম্পিউটারে কম্পোজ করার পর তা প্রিন্ট করার ব্যবস্থাও নেই সেখানে। সবমিলিয়ে সাইবার সেন্টারটি শিক্ষার্থীবান্ধব নয়।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে প্রায় ২৫টি কম্পিউটার থাকলেও মাত্র একজন শিক্ষার্থী রয়েছে সাইবার সেন্টারে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় কিছু কম্পিউটারে ধুলা জমেছে। আবার কিছু কম্পিউটার অকেজো হয়ে যাওয়ায় পাশের রুমে ফেলে রাখা হয়েছে। এদিকে, ব্যাবহার না করার কারণে কম্পিউটারগুলোর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ঢাবি গ্রন্থাগার অফিস সূত্রে জানা যায়, আগে সাইবার সেন্টারে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হতো এর জন্য প্রতিমাসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিতে হতো। কিন্তু বর্তমানে ব্যবহৃত সফটওয়্যারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তি ইনিস্টিটিউট (আইআইটি) বিনামূল্যে করে দেয়। সে হিসাবে সাইবার সেন্টারটির পরিচালনা ব্যয় কমলেও কমানো হচ্ছে না সেবামূল্য।

শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাওয়ার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারিক ও অধ্যাপক ড. এস এম জাবেদ আহমদ বলেছেন, ‘এখন হাতে হাতে স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, ফ্রি ওয়াইফাই থাকার কারণে সাইবার সেন্টার ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীরা সংখ্যা কমে আসছে। তবে সবার তো ব্যক্তিগত কম্পিউটার নেই, তাই ফি কমালে এই সেন্টার ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা অবশ্যই বাড়বে। প্রিন্টার এর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।’

এদিকে, বেশ কিছু কম্পিউটার অচল হয়ে যাওয়ার কারণে ঢাবির ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সাইবার সেন্টারটিও গত তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। কম্পিউটারগুলো মেরামত না করায় বন্ধ রয়েছে সেন্টারটির প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও। ফলে তথ্য-প্রযুক্তির সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে খসে পড়েছে সেন্টারের ছাদ ও দেয়ালের আস্তরণ।

এ বিষয়ে টিএসসি সাইবার সেন্টারের সাবেক পরিচালক ও ঢাবির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেছেন, ‘সাধারণত একটি কম্পিউটারের সর্বোচ্চ মেয়াদ ধরা হয় পাঁচ বছর। টিএসসি সাইবারের কম্পিউটারগুলো এক যুগেরও বেশি সময়ের পুরনো। তাই এগুলো দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়।’

জানা যায়, ২০০৩ সালে টিএসসিতে ঢাবির প্রথম সাইবার সেন্টার স্থাপন করা হয়। এ সময় ২৫টি কম্পিউটার নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০০৭ সালে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ায় আরো ১০টি কম্পিউটার সংযোজন করা হয় সেখানে। কিন্তু অধিকাংশ কম্পিউটারই এখন অকার্যকর। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কম্পিউটারগুলো মেরামত না করায় ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে বন্ধ টিএসসির সাইবার সেন্টারটির কার্যক্রম।

তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের সেরা বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ‘আমি এ বিষয়ে জানি না। কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার সেন্টারগুলো শিক্ষার্থীবান্ধব হয়, এ ব্যাপারে আলোচনা করব।’

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/এপ্রিল ১৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর