thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

মরা মাছ আর পচা ধানের দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষণ 

ভারি হয়ে উঠেছে হাকালুকির বাতাস

২০১৭ এপ্রিল ১৭ ২০:০৯:০০
ভারি হয়ে উঠেছে হাকালুকির বাতাস

সেলিম আহমেদ, হাকালুকি হাওর থেকে ফিরে : হাকালুকি হাওরের ধান পচার ফলে কালচে আর ভারি হয়ে গেছে পানি। এতে ব্যাপক হারে মরছে মাছ। ধান গাছ পচা আর মাছ পচা গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছে বাতাস। এমন পরিস্থিতিতে হাওর তীরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

হাকালুকি হাওর তীরের ভাটেরা ইউনিয়নের কবির আহমদ, নোমান আহমদসহ বেড়কুড়ি, দক্ষিণভাগ গ্রামের অধিবাসীরা জানান, হাওর থেকে যখন বাতাস আসে তখন দুর্গন্ধে যেন নাড়ি-ভুঁড়ি ছিঁড়ে বমি আসে। মাছ আর ধান পচে একাকার। দুর্গন্ধে এলাকায় বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

হাকালুকি হাওরের চকিয়া বিলে গেলে দক্ষিণ হাকালুকি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির লোকজন জানান, চৈত্র মাসের অকাল বন্যায় ২৫ সহস্রাধিক হেক্টর জমির বোরো ধানের পাশাপাশি হাকালুকি হাওরের ছোটবড় ২৩৭টি বিলও তলিয়ে যায়। জলমহালগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগে হাওরময় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে অকালবন্যায় তলিয়ে যাওয়া ধান রোদে পচন ধরে। এতে পানি দুষিত হয়ে ব্যাপক হারে মাছে মড়ক লেগেছে। হাওরের চকিয়া বিল ৩ বছরের জন্য ইজারা নেওয়ায় ইজারাদার সেখানে ১৫ লাখ টাকার পোনা মাছ অবমুক্ত করেন। তাই মাছের মড়কে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

এ ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ সরেজমিনে রবিবার হাকালুকি হাওরের চকিয়া বিল পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে হাকালুকি হাওরে প্রচুর মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখা যায়। ভেসে ওঠা মরা মাছের মধ্যে ছিলো পুঁটি, টেংরা, ভেদা, বাইলা, বোয়াল, বোয়াল মাছের পোনা, চান্দা, পাবদা এবং রুই জাতীয় মাছের ছোট পোনা। তলিয়ে যাওয়া ধান ও পচা মাছের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে হাওর জুড়ে।

হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, হাকালুকি হাওর কেবল এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর নয়, দেশের সর্ববৃহৎ মিঠা পানির মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। এখানে ২-৪ বছরের ব্যবধানে পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যা হয়। কিন্তু এবারের মত চৈত্র মাসে কখনও বন্যা হয়নি। এই অকালবন্যায় ধানের পচনে মাছেও মড়ক লেগেছে। ফলে মিঠা পানির এই মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটিতে মৎস্য প্রজনন হুমকির মুখে পড়বে। সংকট সৃষ্টি হবে মাছের। এমনিতে ধান নেই, আর সেই সাথে যদি মাছও না থাকে তাহলে হাওর তীরের মানুষের জীবন-জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানা যায়, মাছ মরার কারণ হলো অকালবন্যায় তলিয়ে যাওয়া আধাপাকা ধান ও ধানগাছ পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট করেছে। ধান গাছ ও ঘাস নিধনে বিষের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে পানির পিএইচ ৫ দশমিক ৮। হঠাৎ পানির পিএইচ কমে যাওয়ায় অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি ও দ্রবীভূত অক্সিজেন হ্রাস (৫ পিপিএম) পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ অবস্থায় করণীয় হলো- হাওরে সকল ধরনের ফিশিং বন্ধ করা (জেলেদের প্রণোদনা দিয়ে হলেও) ও পানির ট্রিটমেন্ট করা (যদিও তা অনেক ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য)।

কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, এই অবস্থা এক ধরনের দুর্যোগ। হাকালুকি হাওরের সাময়িক মাছ ধরা বন্ধে মাইকিং করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাওর সংলগ্ন এলাকায় জনসচেতনতা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় লোকজনের সহায়তা একান্ত প্রয়োজন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এপি/এনআই/এপ্রিল ১৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর