thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

বিশেষজ্ঞদের অভিমত

বোনাস শেয়ার ইস্যুতে বাজারমূল্যকে ভিত্তিমূল্য ধরা যৌক্তিক

২০১৭ এপ্রিল ১৭ ২১:৪৩:৫১
বোনাস শেয়ার ইস্যুতে বাজারমূল্যকে ভিত্তিমূল্য ধরা যৌক্তিক

আমাদের দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো অভিহিতমূল্যকে ভিত্তি ধরে বোনাস শেয়ার ইস্যু করে থাকে। তবে অভিহিত মূল্যের পরিবর্তে বাজারমূল্যে বোনাস শেয়ার ইস্যু করাই অধিক যৌক্তিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আরও বলছেন, এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে যেসব কোম্পানি কোন কারণ ছাড়াই বছরের পর বছর বোনাস শেয়ার ইস্যু করছে সে প্রবণতা কমে যাবে এবং কোম্পানির প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে।

কোম্পানি আইন অনুযায়ী, একটি কোম্পানি বছর শেষে যে মুনাফা অর্জন করে সে মুনাফা থেকে কিংবা সংরক্ষিত আয় থেকে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে। নগদ কিংবা বোনাস আকারে এ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।

নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হলে কোম্পানি থেকে ক্যাশ আউট হয়ে যায়। যে হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয় সে পরিমাণ অর্থ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডা্রদের বিতরণ করতে হয়।

অপরদিকে লভ্যাংশ হিসাবে বোনাস শেয়ার ইস্যু করলে কোম্পানি থেকে কোন ক্যাশ আউট হয় না। শুধুমাত্র হিসেবের খাতায় বোনাস শেয়ার ইস্যুর পরিমাণ লিখে দিলেই হয়। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক কোম্পানি বছরের পর বছর বোনাস শেয়ার ইস্যু করে যাচ্ছে।

অভিহিত মূল্যে বোনাস শেয়ার ইস্যুর কারণে বাজারমূল্যের ওপর মূল্য সমন্বয় করা হয়। এর ফলে সমন্বয়জনিত ক্ষতির মুখে পড়তে হয় বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু বাজারমূল্যে বোনাস শেয়ার ইস্যু করলে এ ধরনের সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে না এবং এ ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে বিনিয়োগকারীরা মুক্ত থাকবেন।

বোনাস শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে ভিত্তিমূল্য হিসাবে বাজারমূল্য ও অভিহিত মূল্য বিবেচনার রেওয়াজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তবে আমেরিকাসহ বেশ কিছু দেশে বাজারমূল্যকেই ভিত্তি মূল্য হিসেবে ধরা হয়। আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৩৩ অনুযায়ী, বোনাস শেয়ার ইস্যুতে বাজারমূল্যকে ভিত্তিমূল্য হিসাবে বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আমাদের দেশে পেশাদার হিসাববিদ প্রতিষ্ঠান দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) তাদের শিক্ষার্থীদের বাজারমূল্যেই বোনাস শেয়ার ইস্যুর বিষয়টি অনুশীলন করিয়ে থাকে।

এমনই বাস্তবতায় বাংলাদেশেও বোনাস শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে ভিত্তিমূল্য হিসেবে অভিহিত মূল্যের পরিবর্তে বাজারমূল্যে বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করছেন পেশাদার হিসাববিদরা।

উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরা যেতে পারে। ধরা যাক, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘ক’ নামে একটি কোম্পানি শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা। যেহেতু আমাদের দেশে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। সে হিসেবে ‘ক’ কোম্পানিটি তার অর্জিত মুনাফা থেকে নগদ বা বোনাস হিসাবে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে। কিন্তু কোম্পানিটির বাজারদর যদি ৪০ টাকা হয় তাহলে ওই কোম্পানি ১০ শতাংশও বোনাস শেয়ার ঘোষণা করতে পারবে না। বাজারদরকে ভিত্তিমূল্য হিসেবে বিবেচনা করা হলে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইস্যুর জন্য ওই কোম্পানির কমপক্ষে ৪টাকা ইপিএস প্রয়োজন হবে। এর ফলে কোন কারণ ছাড়াই কোম্পানির বোনাস শেয়ার ইস্যুর প্রবণতাও কমবে এবং নগদ প্রদানে আগ্রহী হবে। কারণ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে অভিহিত মূল্যকেই ভিত্তি মূল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অসংখ্য কোম্পানি কোন কারণ ছাড়াই বোনাস শেয়ার ইস্যু করছে। এটাকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো তাদের দুর্বলতা আড়াল করছে। যেহেতু অভিহিত মূল্যের চেয়ে কোম্পানির বাজারদর বেশি সেক্ষেত্রে বাজারদরে বোনাস শেয়ার প্রদান করতে হলে কোম্পানির অনেক বেশি সংরক্ষিত আয় থাকতে হবে বা মুনাফা করতে হবে। এর মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টি ফুটে উঠবে।

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, বাজার দরে বোনাস শেয়ার হিসাব পদ্ধতি চালু করলে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে কোম্পানিগুলো নগদ লভ্যাংশ প্রদানে উৎসাহিত হবে। একইসঙ্গে কোম্পানির প্রকৃতচিত্র বেরিয়ে আসবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ২৯৮টি। সব কোম্পানির অভিহিত মূল্য ১০ টাকা করে হলেও বাজারদর ভিন্ন। কিন্তু সব কোম্পানিই বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে অভিহিত মূল্যকে ভিত্তিমূল্য হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু রাইট শেয়ারের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর সময় কোম্পানিগুলো তাদের পারফরমেন্স অনুযায়ী প্রিমিয়ামসহ কিংবা প্রিমিয়াম ছাড়া রাইট শেয়ার ইস্যু করে থাকে।

অভিহিত মূল্যের পরিবর্তে বাজারমূল্যে বোনাস শেয়ার ইস্যু করা হলে কি হতো তা দেখানোর জন্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কয়েকটি কোম্পানির চিত্র তুলে ধরা হলো-

ব্র্যাক ব্যাংক : ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া হিসেব বছরে ব্র্যাক ব্যাংক শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) করেছে ৫.৪৭ টাকা। চলতি বছরের ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। লভ্যাংশ ঘোষণার ওইদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংকের শেয়ার দর ছিল ৭৬.৬০ টাকা। এ হিসেবে ১০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণায় শেয়ারপ্রতি ১৬.৩২ টাকা মুনাফা প্রয়োজন। এ হিসাবে ইপিএসের অতিরিক্ত ১০.৮৫ টাকা সংরক্ষিত আয় থেকে দিতে হতো।

পূবালী ব্যাংক : ২০১৬ সালের ব্যবসায় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ১২ মার্চ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ ও ৮ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এদিন কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ২৫.৪ টাকা। এ হিসেবে নগদ লভ্যাংশ দিতে শেয়ারপ্রতি ০.৫ টাকা ও বাজার দরে বোনাস শেয়ার দিতে ২.০৩ টাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দিতে হবে ২.৫৩ টাকা। তবে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৫৮ টাকা। এ হিসেবে ইপিএসের অতিরিক্ত ০.৯৫ টাকা সংরক্ষিত আয় থেকে দিতে হতো।

ট্রাস্ট ব্যাংক : ২০১৬ সালের ব্যবসায় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ১৪ মার্চ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে। এদিন কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ২৬.৭ টাকা। এ হিসেবে বাজারদরে বোনাস শেয়ার দিতে ২.৬৭ টাকা ও নগদ লভ্যাংশ বাবদ ১.৫ টাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দিতে হবে ৪.১৭ টাকা। তবে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) করেছে ৩.৯৮ টাকা। এ হিসেবে ইপিএসের অতিরিক্ত ০.১৯ টাকা সংরক্ষিত আয় থেকে দিতে হতো।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/এমকে/এপি/এনআই/এপ্রিল ১৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর