thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

দাবি আদায়ের এ কেমন ভাষা?

২০১৭ এপ্রিল ১৮ ২০:৩৩:১৭
দাবি আদায়ের এ কেমন ভাষা?

রাবি প্রতিনিধি : দাবি আদায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চারুকলা অনুষদে শিক্ষার্থীদের ভাস্কর্য উল্টানোর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা একে ‘ন্যক্কারজনক’ ঘটনা হিসাবে অভিহিত করেছেন। তারা মনে করেন এটি কোন দাবি আদায়ের ভাষা হতে পারে না। এমন ঘটনা বিভ্রান্তি ছড়ায়। চারুকলার শিক্ষার্থীরা যা করেছে তা দুর্বৃত্তপনার পর্যায়ে পড়ে।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘দাবি আদায়ের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আপত্তি সবই দাবি আদায়ের ধরন। কিন্তু ভাস্কর্য ফেলে প্রতিবাদ করা দাবি আদায়ের ধরন হতে পারে না। এসব ভাস্কর্য নিশ্চয়ই একজন শিল্পী তৈরি করেছে। কিন্তু একজন শিল্পীর কাছ থেকে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। যে এমনটা করেছে তার ভেতরে শিল্পীসত্ত্বা নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘শিল্পকর্মগুলো অবহেলিত হচ্ছে, তারা এ কথা কর্তৃপক্ষকে বলতে চাইছে। কিন্তু সেই শিল্পকর্ম মাটির সঙ্গে শুইয়ে দিয়ে প্রতিবাদ করবে, সেটি প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। তাদের প্রতিবাদ শিল্পের ক্ষেত্রে যথার্থ না বলে আমি মনে করি। এছাড়া দেশে ও বিশ্বে এখন যে পরিস্থিতি এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে অনেকে অন্যরকম বার্তা পাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘দেশ যখন এগুচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় যখন এগুচ্ছে তখনই এক প্রকার কুচক্রি মহল অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। দাবি আদায়ে ভাস্কর্য ফেলে দেওয়া দুর্বৃত্তের পর্যায়ে পড়ে। এতে কোন গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এর পেছনে কারা আছে। কারা এর পেছনে ইন্ধন দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় বলেন, ‘ভাস্কর্যগুলোর নিরাপত্তা ও পরিচর্যার দাবিতে ভাস্কর্য ফেলে দেওয়া কোন দাবি আদায়ের ভাষা হতে পারে না। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন ঘটনা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। নিজের ভেতর শিল্পীসত্ত্বা পোষণ করা ব্যক্তি কখনোই এমনটা করতে পারবে না।’

এ ঘটনায় খোদ ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সঞ্জয় বলেন, ‘আমার মতে এ কাজটা ঠিক হয়নি। আমার কাজকে অপমান করা হয়েছে। একটা কাজ করতে গিয়ে ভাস্কর্য শিক্ষার্থীদের যে কী কষ্ট করতে হয় সেটা একজন ভাস্কর্য শিক্ষার্থীই বোঝে। আমরাও চাই আমাদের তৈরি করা ভাস্কর্যগুলোর পরিচর্যা, নিরাপত্তা। কিন্তু এ দাবি আদায়ে অন্য কোনও কর্মসূচি নেওয়া যেতো। কিন্তু তারা কেনো এটা করলো আমার মাথায় আসে না।’

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নূর আলম বলেন, ‘নিজেদের সৃষ্ট শিল্পকর্মাদি যদি তারা নিরাপদ মনে না করে তাহলে রাতের অন্ধকারে লোকচক্ষুর আড়ালে ভাস্কর্য ফেলবে কেন? দাবি আদায়ের এমন ধরন কখনোই মানা যায় না। ভাস্কর্য সংকটময় পরিস্থিতিতে এ ঘটনা বিভ্রান্তি ছড়াবে।’

প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় প্রায় তিন শতাধিক ভাস্কর্য সোমবার রাতে উল্টে ফেলেন ৭ জন শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভাস্কর্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী স্বাধীন ও ইমরান হোসাইন রনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে আমাদের বানানো এই ভাস্কর্যগুলো এখানে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু এগুলোর পরিচর্যা নেওয়া হয় না। এছাড়া এই চত্বরে একটা প্রাচীর দেওয়ার জন্য আমারা বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের বলেছি, কিন্তু এখানে কোনো প্রাচীর আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। প্রাচীর না থাকায় বাইরে থেকে এসে শিক্ষার্থীদের বানানো এই ভাস্কর্যগুলো ভেঙে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অতীতে।

তারা বলেন, ‘এ ভাস্কর্যগুলো সংস্কারের জন্য আমরা এগুলো উল্টায়ে রেখেছি। সোমবার রাতে আমরা ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী মিলে এটা করেছি। কিন্তু আমরা কোনও ভাস্কর্য ভেঙে রাখিনি। শুধু কর্তৃপক্ষ যেন উদ্যোগ নেয় সেজন্য এটা করা।’

এ ঘটনায় তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেবে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগ।

মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ আনোয়ার বলেন, ‘এ ঘটনায় মাস্টার্সের ৭ শিক্ষার্থী জড়িত ছিল বলে ইউসুফ আলী স্বাধীন নামে এক শিক্ষার্থী আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টা জানাবো। কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

ওই শিক্ষার্থীদের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের নাম আমি জানতে পারিনি। এদের মধ্যে আরেকজন তো মিডিয়ার সামনে স্বীকার করেছেই (ইমরান হোসাইন রনি)। আর বাকিদের বিষয়ে জানতে পারিনি। আমরা তো তদন্ত করতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটা করবে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টা শুনেছি। আমরা এ বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। যেহেতু ভিসি-প্রোভিসি নেই, তাই যে কোনও সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া ঠিক হবে না।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এপি/এপ্রিল ১৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর