thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

ব্যয় ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকা

এলএনজি সরবরাহে হচ্ছে নতুন পাইপলাইন

২০১৭ এপ্রিল ২৩ ১৪:১০:০২
এলএনজি সরবরাহে হচ্ছে নতুন পাইপলাইন

জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহে মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত নতুন পাইপ লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ১ হাজার ১০৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

পরিকল্পনা কমিশনের প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।

এ বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো বর্তমানে দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য নির্মাণাধীন মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানিতব্য গ্যাস মহেশখালী হতে আনোয়ারা পর্যন্ত সঞ্চালনের জন্য আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদিসহ ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ৭৯ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালনের সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। এই পাইপলাইন নির্মাণের ফলে প্রকল্প এলাকাসহ ঢাকা এবং চট্রগ্রাম বিভাগে বিদ্যমান ও নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সার কারখানা ও অন্যান্য কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি শিল্পোৎপাদন ও কর্মস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপিতে অবদান রাখবে যা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য গৃহীত গ্যাস সেক্টর উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একদিকে দেশের গ্যাস মজুদ হ্রাস পাওয়ায় এবং অপরদিকে দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস চাহিদা পূরণের জন্য সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির মাধ্যমে ২০১৮ সালের মধ্যে ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশে বর্তমান গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিন ৩ হাজার ৩০০ এমএমএসসিএফডি এর বিপরীতে গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে ২ হাজার ৭৪০ এমএমএসসিএফডি। অর্থাৎ বর্তমান গ্যাস ঘাটতি ৫৬০ এমএমএসসিএফডি। বাপেক্স দেশের জলে ও স্থলে তেল গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করলেও সাম্প্রতিক সময়ে নতুন কোন গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়নি।

এছাড়াও সমুদ্রবক্ষে অথবা স্থলে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কৃত হলে এ সংক্রান্ত ইনফ্রাস্টাকচার উন্নয়ন করে গ্রাহকপ্রান্তে গ্যাস সরবরাহ করতে প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর সময় প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে দেশের বেশ কিছু বড় গ্যাস ক্ষেত্রের মজুদ যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। ফলে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কৃত হলেও সার্বিকভাবে গ্যাসের ঘাটতি রয়ে যাবে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে গ্যাসের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য এলএনজি আমদানি আবশ্যক।

আমদানিকৃত এলএনজি হতে প্রাপ্ত গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সরবরাহের জন্য প্রস্তাবিত পাইপলাইন ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। অন্যদিকে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন ২০১০ এর ৫ ধারার বিধান অনুসারে কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইসড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে সমন্বিতভাবে ভারতের রিলায়েন্স কর্তৃক মহেশখালীতে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আমদানিকৃত এলএনজি হতে সরবরাহকৃত গ্যাস নির্মাণাধীন ৩০ ইঞ্চি পাইপলাইনের মাধ্যমে সঞ্চালন করা হবে না।

এ পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাণাধীন মহেশখালী-আনোয়ারা ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইনের সমান্তরাল বা প্যারালাল আরো একটি ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ৭৯ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার এ্যাক্সিলারেন্স এ্যানার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড (ইইবিএল) চুক্তি অনুসারে মহেশখালীতে নির্মাণাধীন ফসরু এর এলএনজি ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৩৮ মিলিয়ন ঘন ফুট এবং দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে ৬ দিন রি-গ্যাসফিল্ড এলএনজি সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ফসরুটি গভীর সমুদ্রে অবস্থান করবে সেখানে সমুদ্রের গভীরতা ৩০ মিটার।

পেট্রোবাংলার সাথে চুক্তি সম্পাদনের পর এ্যাক্সিলারেট এ্যানার্জি কর্তৃক মিটোসিন স্টাডি, জিওগ্রাফিক্যাল স্টাডি এবং জিটোকেনিক্যাল স্টাডি সম্পন্ন করা হয়েছে। মহেশখালীর অদূরে ফসরু অবস্থিত যেখানে সুমদ্রের গভীরতা যথেষ্ট থাকায় ২ হাজার ১০ মিলিয়ন ঘনফুট ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ নোঙ্গার করতে পারবে। গভীর সমুদ্রে ফসরু এর অবস্থান হতে জিটিসিএল এর ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার মহেশখালী-আনোয়ারা পাইপলাইনের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার অফসোর পাইপলাইন চুক্তি অনুযায়ী ইইবিএল নির্মাণ করবে। ফসরু এর অবস্থান গভীর সমুদ্রে হওয়ায় মহেশখালী চ্যানেলের দৈর্ঘ্য ও গভীরতা সম্পর্কিত কোন সমীক্ষা করার প্রয়োজন হয়নি। এই মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০১৮ সাল মেয়াদে মোট ১ হাজার ১০৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পের ওপর ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা এবং ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জিটিসিএল প্রকল্পের যৌক্তিকতা উপস্থাপনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, ২ দশমিক ৬ কিলোমিটারসহ ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ৭৯ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, সিপি সিস্টেম স্থাপন, সিপি সিস্টেম, রিভার ক্রসিং পাইপলাইনের মালামাল ক্রয়, পথস্বত্ব ও পরিবেশগত জরিপ এবং ১৫৮ দশমিক ৫৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৩১৩ দশমিক ২০৬ একর ভূমি অধিযাচন, ১২ হাজার ৫০০ ঘনমিটার ভুমি উন্নয়ন ও অফিস ডরমিটরি ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য পূর্ত কাজ করা হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য মোস্তফা কামাল উদ্দীন পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, দেশে বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য নির্মাণাধীন মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানিতব্য গ্যাস মহেশখালী হতে আনোয়ারা পর্যন্ত সঞ্চালনের জন্য আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদিসহ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদন যোগ্য।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এস/এআরই/এপ্রিল ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর