thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

‘রানা প্লাজা ট্র্যাজিডির কোনো পর্যালোচনা হয়নি’

২০১৭ এপ্রিল ২৩ ১৯:০০:০৬
‘রানা প্লাজা ট্র্যাজিডির কোনো পর্যালোচনা হয়নি’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনা জাতির জন্য লজ্জাজনক উল্লেখ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, ‘এ ঘটনার চার বছর পার হলেও এ নিয়ে কোনো ধরনের পর্যালোচনা হয়নি। সংসদীয় কোনো কমিটিও গঠন করা হয়নি। রানা প্লাজার ঘটনার ফলে দেশে-বিদেশে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে শীর্ষ পর্যায়ে একটি কমিটি থাকা উচিত ছিল, তাও হয়নি।’

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানের গার্ডেনিয়া গ্রান্ড হলে আয়োজিত সামাজিক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেছেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য করছে অভিযোগ করে রেহমান সোবহান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ৫ মার্কিন ডলারে পণ্য কিনে তা ২৫ ডলারে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা ৫ ডলার নিয়ে আলোচনা করছি; কিন্তু বাকি ২০ ডলার কোথায় যায়- তা নিয়ে কারো কোনো কথা নেই।’

সিপিডির সম্মানীত ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা পর্যাপ্ত সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি। তাদের পুনর্বাসনও হয়নি। এই ট্র্যাজিডির পর ট্রেড ইউনিয়ন, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে যে পরিমাণ অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।’

শ্রম সচিব মিকাইল সিপার বলেছেন, ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টরের উন্নয়নে ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকসহ এ খাতে কর্মজীবীদের আস্থা ফিরে আনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে সরকার।’

গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষায় ট্রেড ইউনিয়ন চালুর পক্ষে শ্রমিক নেতাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিজিএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুর রহমান খান বাবু বলেছেন, ‘অনেক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন চালু করা হলেও সেগুলো শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে পারেনি। ৫৯১টি কারখানার ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের পর ২৩১টি কারখানাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন চালুর পরও কারখানাগুলো কেন বন্ধ হয়ে গেল এটি নিয়ে গবেষণা হতে পারে।’

বিজিএমইএ গার্মেন্ট কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন চালুর পক্ষে নয়-এমন প্রচারণা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘আমরা পক্ষে বা বিপক্ষে কিনা, এটা বিষয় নয়। এটা আইনের বিষয়। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় ওয়ার্কাস পার্টিসিপেটরি কমিটি রয়েছে। এই কমিটি ট্রেড ইউনিয়নের বিকল্প নয়। যদি শ্রমিকরা প্রয়োজন মনে করে তাহলে গার্মেন্টে ট্রেড ইউনিয়ন চালু হতে পারে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘গার্মেন্টসের মোট শ্রমিক সংখ্যা কত, তা আমরা এখনও জানি না। গত ৮ মাস ধরে বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ তৈরির কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ১১ লাখ শ্রমিক এর আওতায় এসেছে।’

পোশাকের দামের বিষয়ে মাহমুদ হাসান বলেছেন, ‘বিদেশে ক্রেতারা তাদের ব্যবসা দেখবে; দাম বাড়ানোর চাপ দিলে তারা ইথিওপিয়া বা পার্শবর্তী দেশ ভারতে চলে যাবে। গার্মেন্টস খাতকে এগিয়ে নিতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে ভারত, বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।’

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুজ্জামান ভূঁইয়া বলেছেন, ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। গার্মেন্টস পরিদর্শন বাড়িয়ে দিয়েছি।’

শ্রমিক নেতা কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বিদেশি সংস্থা থেকে ক্ষতিপূরণের একটি প্যাকেজ পেয়েছি। আইনানুগ কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। স্পেকটার্ম গার্মেন্টস দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হলেও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর গত ৪ বছরে শ্রমিকদের কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি।’

শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার বলেছন, ‘যারা মরে গেছে তারা বেঁচে গেছে। যারা বেঁচে আছে তাদের নিয়ে শুধু আলাপ-আলোচনা হয়; আর কিছুই না। যতটুকু হয়েছে বিদেশিদের চাপেই হয়েছে। সরকার মন থেকে কিছু করেনি। উল্টো সামাজিক সংলাপের নামে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

শ্রমিক নেত্রী নাজমা বেগম বলেছেন, ‘সব প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ভরে গেছে। কিন্তু আমাদের হতাশ হলে চলবে না। সামনে জিএসপি ইস্যু কীভাবে রিকভারি করবো তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।’

শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহমান বলেছেন, ‘অনেক শ্রমিক এখনও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তারা কাজে যোগ দিতে ভয় পান; এমনকি বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করতেও ভয় পান। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে সাড়ে ১৪ শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। আর ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার রয়েছেন। তাদের ফেরানোর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।’

বাংলাদেশি পোশাকের ন্যায্যমূল্য দাবি করে শ্রমিক নেতা তোফাজ্জল হোসেন বলেছেন, ‘জিএসপি চলে গেলে বাংলাদেশের পোশাকের কী অবস্থা হবে তা ভাবা দরকার।’

(দ্য রিপোর্ট/এমকে/জেডটি/এপ্রিল ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর