thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস ২৫ এপ্রিল

দেশের তিন জেলা এখনো ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে

২০১৭ এপ্রিল ২৩ ২১:২৬:৪৪
দেশের তিন জেলা এখনো ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দেশে গত তিন বছরে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার ক্রমান্বয়ে কমলেও বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি এখনও অনেক বেশি। প্রতিবছর দেশে মোট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ রোগীই হচ্ছে এই তিন জেলার। এই তিন জেলাসহ ২০১৬ সালের ম্যালেরিয়া নির্মুল কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৭,৭৩৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইইডিসিআর ভবনের সম্মেলন কক্ষে রবিবার (২৩ এপ্রিল) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আগামী ২৫ এপ্রিল ‘বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস-২০১৭’ উপলক্ষে ম্যালেরিয়া নির্মূলে ভবিষ্যৎ করণীয়, ঝুঁকি মোকাবেলায় চ্যালেঞ্জ, সুপারিশ এবং ম্যালেরিয়া সম্পর্কিত বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি ও ব্র্যাক যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

ম্যালেরিয়ার রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর ২৫ এপ্রিল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালন করে থাকে। এবারের বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘চিরতরে ম্যালেরিয়া হোক অবসান।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আশাব্যঞ্জক। জনসচেতনতা এবং সরকারের সহযোগিতায় ব্র্যাকসহ অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত কর্মসূচি ও কার্যকর উদ্যোগের কারণেই এ সাফল্য এসেছে। তবে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে আসলেও এর ঝুঁকিও একেবারে কম নয়। ম্যালেরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৩টি জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। প্রতি বছর দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশই সংঘটিত হয়ে থাকে এই ১৩টি জেলায়। জেলাগুলো হচ্ছে- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং কুড়িগ্রাম।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে গত তিন বছরে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭,৪৮০ জন। ২০১৫ সালে তা কমে ৩৯,৭১৯ জনে এবং ২০১৬ সালে আরও কমে ২৭,৭৩৭ জনে দাঁড়ায়। তবে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর হার ৮ জন বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে এই রোগে মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের, সেখানে ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ জনে। তবে জনসেচতনতা, সরকারের কার্যকর উদ্যোগ এবং ব্র্যাকসহ অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলোর যৌথ প্রয়াসে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ২০১৪ সালে ৪৫ জন থেকে ব্যাপকভাবে কমে ৯ জনে নেমে এসেছিল।

মূল প্রবন্ধে গত ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সালের অর্থাৎ গত ছয় বছরের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ২০১০ সালে যেখানে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৫,৮৭৩ জন, সেখানে ২০১৬ সালে তা কমে ২৭,৭৩৭ জনে এসে দাঁড়ায়। শতকরা হিসেবে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ৫০ শতাংশ কমেছে। একই সঙ্গে ২০১০ সালে যেখানে ৩৭ জন রোগী মারা যায়, সেখানে ২০১৬ সালে এই রোগে ১৭ জন রোগী মারা যায়। শতকরা হিসেবে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত মৃত্যুর হার গত ছয় বছরে ৫৪ শতাংশ কমেছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলকরণ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করা এবং দেশের উন্নতি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখা।

মূল প্রবন্ধে ম্যালেরিয়া নির্মুলকরণে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে-দুর্গম এলাকায় দক্ষ চিকিৎসকের স্বল্পতা ও সহজে চিকিৎসা দিতে না পারা, নগরায়ন ও সময়ের পরিবর্তিত বাস্তবতায় মানুষের দ্রুত অবস্থানগত পরিবর্তন, সীমান্তর্তী এলাকাগুলোতে ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, জলবায়ুগত পরিবর্তন ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মুলে আমরা বদ্ধ পরিকর। গত ছয় বছরে মৃত্যুর হার উঠা-নামা করলেও আক্রান্তের হার প্রায় ৫৪ শতাংশ কমেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক।’

অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল এর লাইন ডিরেক্টর ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ, সাবেক কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল এর লাইন ডিরেক্টর ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ, বাংলাদেশের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (এনপিও) ডা. এ মান্নান বাঙ্গালী প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. সামসুন্নাহার।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান।

(দ্য রিপোর্ট/এস/জেডটি/এপ্রিল ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর