জঙ্গি ও মাদক পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ : আইজিপি

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জঙ্গি ও মাদকে পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীর সাথে পুলিশের কোনো সদস্যের যোগাযোগ থাকতে পারবে না। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ রয়েছে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আইজিপি আরও বলেছেন, ‘জঙ্গি এবং মাদক আমাদের মূল সমস্যা। জঙ্গিবাদ দমন এবং মাদক নির্মূল বর্তমানে পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।’

আইজিপি জঙ্গিবাদ দমন এবং মাদক নির্মূলে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশও দেন।

রাজধানীর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে সোমবার (২৪ এপ্রিল) ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় (জানুয়ারি-মার্চ, ২০১৭) সভাপতির বক্তৃতায় এসব কথা বলেছেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ সভায় সকল পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, ঢাকা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আইজিপি আরও বলেছেন, ‘জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল। মাদক দ্রব্যের কুফল সম্পর্কে সর্বস্তরের জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা যে দলেরই সদস্য হোক না কেন, তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালিয়ে মাদকবিরোধী আন্দোলনকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের সমাজে মেয়েরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।’

আইজিপি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা নিবিড়ভাবে নিয়মিত মনিটর করার জন্য জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, প্রতিটি অপহরণের ঘটনার মামলা রেকর্ড এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। আইজিপি বলেছেন, ‘মিথ্যা মামলার হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’ থানায় আসা সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের পরামর্শ দেন তিনি।

সভায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) মো. হুমায়ুন কবির গত কোয়ার্টারের (জানুয়ারি-মার্চ/২০১৭) সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সভায় জঙ্গি হামলা, অপহরণ, খুন,ডাকাতি, ছিনতাই, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, নারী ও শিশু পাচার, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও বিষ্ফোরক উদ্ধার, সড়ক দুর্ঘটনা, গাড়ি চুরি, রাজনৈতিক সহিংসতা, অপমৃত্যু মামলাসহ দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে সারাদেশে রুজু মামলার সংখ্যা গত কোয়ার্টারের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। জানুয়ারি-মার্চ মাসে সারাদেশে ৪৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা রুজু হয়েছে যা গত কোয়ার্টারে ছিল ৪২ হাজার ২৬৯টি। আলোচ্য সময়ে সারাদেশে খুন, দাঙ্গা, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন (ধর্ষণ ও এসিড ব্যতীত), শিশু নির্যাতন, অপহরণ, সিঁধেল চুরি মামলা গত কোয়ার্টারের (অক্টোবর-ডিসেম্বর/২০১৬) তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে, একই সময়ে ডাকাতি, দস্যুতা, দ্রুত বিচার মামলা, চুরি, মাদ্রক দ্রব্য উদ্ধার, অগ্নি সংযোগ, সড়ক দুঘর্টনা, পুলিশ আক্রান্ত সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশ একই সময়ে বিপুলসংখ্যক মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং ধ্বংস করেছে।

অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ) মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, রেলওয়ে রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজিপি মো. আবুল কাশেম, ডিআইজি (অর্থ) এ কে এম শহিদুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি (সিটি) মো. আমিনুল ইসলাম, এআইজি (কনফিডেন্সিয়াল) মো. মনিরুজ্জামান, সিআইডির এসএস মোল্যা নজরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সভায় এসবির অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, রেক্টর (অতিরিক্ত আইজিপি) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশনস্) মো. মোখলেসুর রহমান, র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, পুলিশ টেলিকমের অতিরিক্ত আইজিপি বিনয় কৃষ্ণ বালা, এপিবিএন’র অতিরিক্ত আইজিপি সিদ্দিকুর রহমান, শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. নওশের আলী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জেডটি/এনআই/এপ্রিল ২৪, ২০১৭)