thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

দিনাজপুরে বয়লার বিস্ফোরণ

বাড়ছে মৃতের মিছিল, চলছে শোকের মাতম

২০১৭ এপ্রিল ২৪ ২৩:৪৫:২৫ ২০১৭ এপ্রিল ২৬ ২০:৩০:০০
বাড়ছে মৃতের মিছিল, চলছে শোকের মাতম

মো. আব্দুর রাজ্জাক, দিনাজপুর : কে জানে, এবার কার পালা? লাশের মিছিলে আর কত প্রাণ যোগ হবে শেষ পর্যন্ত? এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে যাওয়া আধপোড়া মানুষগুলোর স্বজনদের মাথায়। প্রতিমুহূর্তে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় সময় পার করছেন তারা, এই বুঝি খবর এলো প্রিয় মানুষটির মৃত্যুর। অন্যদিকে, নিহতদের পরিবারে চলছে অব্যহত শোকের মাতম। সঙ্গে রয়েছে পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মানুষটির অকাল বিদায়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তা। পাশাপাশি রয়েছে প্রতিবাদ আর দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও। বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনার পর এমনই দৃশ্য দিনাজপুর সদর উপজেলার হতাহতদের পরিবারগুলোতে।

সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ শেখহাটি এলাকায় গেল ১৯ এপ্রিল (বুধবার) যমুনা অটোরাইস মিলে ঘটে ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা। ওই ঘটনায় সোমবার(২৪ এপ্রিল) মারা গেছেন আরও একজন। সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনোরঞ্জন রায় (৩৬) নামের এক অগ্নিদগ্ধ। পরবর্তীতে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাতে মাজেদুর রহমান (৪৫) ও বুধবার দুপুরে মো. এনামুল হক (৪৫) নামের আরও দুজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে এই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫।

এর আগে, এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হন মোট ২৮জন। এদের মধ্যে দগ্ধ ২১জনকে উদ্ধার করে প্রথমে নেওয়া হয় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ। সেখান থেকে আশংকাজনক ১৯জনকে পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত রবিবার পর্যন্ত সেখানে(রংপুরে) মারা যায় ১২ জন। এরা হলেন, মকছেদ আলী, মো. আরিফ, অঞ্জলী বালা, রস্তম আলী, রনজিৎ বসাক, সফিকুল ইসলাম, উদয় চন্দ্র, দেলোয়ার হোসেন, দুলাল চন্দ্র, মুকুল মিয়া, মো. মুন্না ও মো. রিপন।

অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ৫ শ্রমিকের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে সেখানকার চিকিৎসকরা।

এদিকে, সোমবার সরেজমিনে সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর ভাবনীপুর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে দেখা গেছে, সেখানে নিহতদের পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারীতে এলাকার পরিবেশ হয়ে উঠেছে ভারি। প্রতিদিন কোন না কোন বাড়িতে চলছে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। পাশাপাশি চলছে নতুন করে মারা যাওয়াদের সৎকার কাজ।

এসব গ্রামে হতাহতের স্বজনদের অভিযোগ, যেই রাইস মিলে কাজ করতে গিয়ে তাদের এমন পরিণতির শিকার হতে হয়েছে, সেই মিল মালিক সুবল ঘোষ তাদের কোন খোঁজ-খবরই নেননি এ কয়দিনে।

নিহত মোকছেদ আলীর পুত্র মতিউর রহমান অভিযোগ করেছেন, ক্ষতিপূরণ বা সাহায্য দূরের কথা, ঘটনার পর তাদের শোকাহত পরিবারের একটি বারও খবর নেননি মিল মালিক। অথচ ত্রুটিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ মিলে কাজ করিয়ে তার বাবার প্রাণটি কেড়ে নিয়েছে মিল মালিক সুবল ঘোষ।

অন্যদিকে, পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম সদস্যদের মৃত্যুতে বেশ মুষড়ে পড়েছে তাদের পরিবারগুলো। সঙ্গে ভবিষ্যত নিয়েও উৎকন্ঠায় রয়েছে তাদের স্বজনরা।

এমনই এক নিহত ব্যক্তি রুস্তম আলী। তার পুত্র সেলিম হোসেন জানিয়েছেন, তাদের পরিবারটি তার বাবার আয়ের উপর নির্ভর করতো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন তারা।

একই অবস্থা মকছেদ আলীসহ অন্য নিহতদের পরিবারেও। একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যুতে পুলিয়াপাড়ার জহির উদ্দিনের বাড়িতে কান্না যেন থামছেই না। নিহত মোকছেদ আলীর পুত্র মতিউর রহমান ক্রটিপুর্ণ ও জরাজীর্ণ মিলে কাজ করিয়ে মিল মালিক তার বাবার প্রাণ কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

এদিকে, এ ঘটনায় অসাবধানতা ও অবহেলার অভিযোগ এনে সোমবার একটি মামলা দায়ের করেছেন ওই ঘটনায় নিহত মো. রিপনের স্ত্রী মোছা. মদিনা বেগম। সোমবার সকালে যমুনা অটো রাইস মিলের মালিক সুবল ঘোষসহ তিনজনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় এ মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন কমল ও একরামুল।

তবে, ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন মালিক সুবল ঘোষসহ দুই অভিযুক্ত। এমনটিই জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেদওয়ানুর রহিম। পলাতকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ওদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন এলাকাবাসী ও হতাহতের স্বজনরা। সোমবার মানববন্ধন করে মিল মালিক সুবল ঘোষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন তারা।

দিনাজপুর চাতাল ও চালকল শ্রমিক সহায়তা কমিটির (চাসক) আহ্বায়ক সাইফুর রাজ চৌধুরী ও সদস্য সচিব মজিবর রহমান জানিয়েছেন, ত্রুটিপূর্ণ বয়লারের বিষয়ে মিল মালিকদের বারবার অভিযোগ করা হলেও তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।

এসময় এ ঘটনা ছাড়াও গত ৫ বছরে দিনাজপুরে এ ধরণের মোট ৭টি বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন চাসক নেতৃবৃন্দ। যেখানে নিহত হয়েছেন ২১ জন। আর পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন মোট ২৩ জন।

(দ্য রিপোর্ট/এজে/এনআই/এপ্রিল ২৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর