thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

পালিত হচ্ছে খুলনা জেলার ১৩৫ বর্ষপূতির উৎসব

২০১৭ এপ্রিল ২৫ ১২:৫৬:৫০
পালিত হচ্ছে খুলনা জেলার ১৩৫ বর্ষপূতির উৎসব

খুলনা ব্যুরো : বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হচ্ছে খুলনা জেলার ১৩৫তম বর্ষপূতির উৎসব। ১৮৮২ সালের ২৫ এপ্রিল যশোর মহকুমা থেকে জন্ম হয় খুলনা জেলার। প্রতি বছরই এ দিনটিকে ‘খুলনা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে খুলনাবাসী। দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে খুলনা জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন ও বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নগরীর শিববাড়ী মোড় থেকে একটি বর্নাঢ্য র‍্যালি বের হয়। স্থানীয় (খুলনা-২) সংসদ সদস্য মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বেলুন উড়িয়ে এই র‍্যালির উদ্বোধন করেন। র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক মন্ত্রী তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি, বিএনপির মহানগর সভাপতি সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। র‍্যালিটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় শিববাড়ি চত্বরে এসে শেষ হয়।

খুলনা নিয়ে ইতিহাসে যা পাওয়া যায়

যশোর–খুলনার ইতিহাস বইয়ে সতিষ চন্দ্র মিত্র লিখেছেন, খুলনার ইতিবৃত্ত খুব প্রাচীন নয়। ইংরেজ প্রশাসনের প্রথম মহকুমা ও মহকুমা সদর শহরের ভিত্তি স্থাপিত হয় ভৈরব ও রূপসা খালের মিলিত স্থানের কোণে। ওই একই স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় কনিষ্ঠতম জেলা ও জেলা সদর শহরের। ১৯৮২ সালে পালিত হয় জেলার জন্মশত বার্ষিকী। সেদিনের প্রতিষ্ঠিত বাংলার প্রথম মহকুমা শহর আজকের বিভাগীয় সদর শিল্প ও বন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী। এছাড়া দেশের দ্বিতীয় বন্দর, শিল্প নগর ও পাট রফতানি কেন্দ্র হিসাবে বিশ্বে পরিচিত।

১৯৪৭ সালের ইংরেজ শাসনের শেষদিন পর্যন্ত খুলনা শহর ছিল প্রেসিডেন্সি বিভাগের অধীন ছোট জেলা শহর। খুলনা শহরের সাথে সড়ক ও রেল যোগাযোগ যুক্তবাংলার পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীবন্দর ও বৃহত্তর ব্যবসা কেন্দ্র কলিকাতার সাথে সম্পর্কিত পশ্চাৎভূমি হিসাবে কলিকাতা বন্দরের আমদানি রফতানিকৃত মালামাল রেলপথে এসে নদীপথে পূর্ববঙ্গের বরিশাল-ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় যাতায়াতেরও মাধ্যম ছিল এ শহর। ১৯৪৭ সালের পরে কলিকাতা বন্দরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিভািগউত্তর পূর্ববঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় নতুন বন্দরের। তৎকালীন সরকার পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে শহরের অদূরে চালনা বন্দর নির্মাণ করে এ ঘাটতি পূরণ করেন। নিকটবর্তী বন্দর সুবিধায় শহরের পার্শ্ববর্তী খালিশপুর গ্রামে ভৈরব তীর ধরে দ্রুত গড়ে উঠতে থাকে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা। বন্দর ও শিল্প কারখানা কেন্দ্র করে শহরে নতুনভাবে জনবসতির চাপ সৃষ্টি হতে থাকে এবং ষাটের দশকের গোড়ার দিকে (অক্টোবর ১৯৬১) জেলাকে বিভাগে উত্তীর্ণ করে পূর্বের পৌরসভা এলাকার সংলগ্ন বয়রায় দ্রুত নির্মিত হয় বিভাগীয় সদর দফতর। এ সবের প্রয়োজনে দেখা দেয় শহর পৌর এলাকার সম্প্রসারণ। পূর্বতন পৌরসভা এলাকা উত্তরে জোড়াগেট থেকে দৌলতপুর-খালিশপুর এলাকাভুক্ত করে রেলীগেট পর্যন্ত সম্প্রসারিত করে বর্ধিত পৌর এলাকা হয় ১৪.৩০ বর্গমাইল এবং খালিশপুর শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিপরীত দিকে যশোর (পুরাতন) রাস্তার উত্তর পাশে নির্মিত হয় নতুন উপশহর। এ লক্ষ্যে নতুনভাবে নির্মিত হয় আধুনিক আইল্যান্ড, ফুটপাথ আর নিয়ন বাতিতে সজ্জিত সড়ক-মহাসড়ক, রাজপথ ও জনপথ। এভাবে শুরু হয় বর্তমান খুলনা শহরের নববেশে নগরীর দিকে অগ্রযাত্রা। চল্লিশ বছরের মহকুমা সদর ও সত্তর বছর ধরে গড়ে ওঠা জেলা শহর। আজকে শহরের আঙ্গিকে হারিয়ে গেছে তার কত কথা, কত স্মৃতি। বিলুপ্ত হয়ে গেছে তারও আগের গড়ে ওঠা জনপদগুলোর রেখা। রয়ে গেছে মুখ পরম্পরায় দু’একটি নামের স্বাক্ষর, যা আজও বিব্রত করে ইতিহাসের স্মৃতি সূত্রে। শত বছর শেষের আগ্রহী ও অনুসন্ধিৎসু শহরবাসী তার অতীত সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জির কথা জানতে আগ্রহী, কিভাবে গ্রন্থিত হয়েছিল সামগ্রিক নাগরিক জীবন ব্যবস্থা।

জন্ম ইতহাস

বাংলাদেশের অন্য অংশের মত গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের অন্তর্গত ভৈরব নদ তীরের এ অংশ তত প্রাচীন নয়। গঙ্গা নদী পলি প্রবাহে সমুদ্রস্থিত দ্বীপমালা ক্রমে একত্রিত হয়ে কয়েকটি বড় দ্বীপ ও বহু নদীর সৃষ্টি হয়েছে। গঙ্গার শাখা হলদি নদীর মোহনায় সৃষ্ট বুড়ন দ্বীপ বর্তমান খুলনার অধিকাংশ নিয়ে গঠিত ছিল এবং এ অংশের প্রাচীন নাম বুড়ন দ্বীপ। মেঘাস্থিনিস বর্ণিত গঙ্গার মোহনায় গঙ্গারিডি নামে একটা শক্তিশালী বিস্তৃত রাজ্য ছিল। আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ কালে (৩২৭ খৃঃ পূঃ অঃ) এই রাজ্যের হস্তিসেনা শক্তির কথা শুনে অগ্রসর হতে সাহসী হননি। ঐতিহাসিকগণ বুড়নদ্বীপ এ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে মনে করেন। গুপ্তযুগে বুড়নদ্বীপ গুপ্তসাম্রাজ্য ভুক্ত হলে এর প্রশাসনিক নাম হয় খাড়িস্থান। বৌদ্ধ যুগে সমগ্র ব-দ্বীপের নাম হয় বকদী বা বাগদী। পাল ও সেন রাজগণের সময় বুড়নদ্বীপ তাদের রাজ্যভুক্ত ছিল। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী লক্ষণাবতি আক্রমণ করলে রাজা লক্ষণ সেন ভৈরব পথে বিক্রমপুর পালিয়ে যান এবং বুড়নদ্বীপে লক্ষণ সেনের উপশাসন কেন্দ্র (শঙ্খনূর বা শাঁখহাটী ) ছিল বলে জানা যায়। সেন রাজত্বকালে ভৈরবতীরে ব্রাহ্মণ ও কায়স্থগণ ভূমি প্রাপ্ত হয়ে বসতি স্থাপন করেন এবং এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ ব্রাহ্মণ ও কায়স্থপূর্ণ গ্রামগুলি তৎসময়ে গড়ে ওঠে।

বঙ্গে মুসলিম বিজয়ের পর শতাধিক বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে জানা যায় না। সম্ভবতঃ গৌড় সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ (১৩১০-১৩২৫ খ্রীঃ) প্রথম খুলনা দখল করেন এবং শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের সময়ে (১৩৪২-১৩৫৮ খ্রীঃ ) খুলনায় মুসলিম বসতি শুরু ও বিস্তার লাভ করে। অবশ্য বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় প্রাচীন বুড়নদ্বীপে আরও আগে মুসলিম আগমন ও বসতি হয়েছিল। সম্ভবতঃ ভৈরব তীরের এ অংশেও আলোচিত সময়ে মুসলিম বসতি গড়ে উঠেছিল। পাঠানযুগে এ অঞ্চল সরকার খলিফাতাবাদের অধীন ছিল এবং মোগল শাসন আমলে যশোরের ফৌজদার কর্তৃক শাসিত হতো। ১৭৮১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যশোরে মুড়লীতে একটা শাসন কেন্দ্র স্থাপন করে মিঃ টিলম্যান হেঙ্কেলকে ম্যাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত করেন এবং কোম্পানির লবণ ব্যবসায়ের সুন্দরবন অঞ্চলের প্রধান কেন্দ্র রায় মঙ্গল লবণ এজেন্সির সদর দফতর স্থানান্তর হয় খুলনায় (শহরের কয়লাঘাটায়)। খুলনা তখন রূপসা নদীর ( সরুখাল মাত্র ) অপর পারে নিকলাপুর গ্রামের উত্তর পূর্ব দিকে ভৈরব নদীর তীরে একটা ছোট গ্রাম। প্রাচীনকালে খুলনা বিস্তৃত গ্রাম ছিল। সুন্দরবনের কাঠ গোলপাতা মধু সংগ্রহকারী মাঝি ও ব্যবসা বাণিজ্যের বড় বড় নৌকা ও জাহাজ যাতয়াতের পথে ভৈরব নদীর আত্রাই থেকে রূপসা পর্যন্ত ভয়াবহতার জন্য এখানে অবস্থান করতো। ভৈরব রূপসার মিলিতস্থান থেকে উত্তর পশ্চিমে আত্রাই নদী যেখানে ভৈরবের সাথে মিলিত হয়েছে। পূর্বে আত্রাই আরও পশ্চিমে ভৈরবের সাথে মিলিত ছিল। এখান থেকে ভৈরব রূপসার মুখ পর্যন্ত সোজা একটা বাঁক ও রূপসার মুখ থেকে আলাইপুর পর্যন্ত অপর একটা সোজা বাঁক ছিল। ভৈরব ও আত্রাই নদীর প্রচণ্ড স্রোত মিলিত স্থানে প্রবল ঘূর্ণিস্রোতের সৃষ্টি করতো এবং এই ত্রিমোহনী থেকে রূপসা খালের মুখ পর্যন্ত কয়েকটা ঘূর্ণিস্রোত বছরের প্রায় সব সময় থাকতো। বিশেষ করে বর্ষাকালে এই বাঁকে নৌকা চলনা খুবই ভয়াবহ ছিল। মাঝিরা এই বাঁকে সতর্কতার সাথে যাতায়াত করতো এবং রাতে মাঝিরা দুই বাঁকের মিলিত স্থানের কিছু পূর্বে নৌকা ও জাহাজ বেঁধে অবস্থান করতো ও অবস্থা বুঝে নৌকা খুলতো। মাঝিদের এই অবস্থানের নদীর বিপরীত দিকে সেনের বাজার বেশ বড় মোকাম ছিল। অবস্থানরত মাঝিদের প্রয়োজনীয় হাট-বাজারের কাজ এখানে সেরে নিত। সেনের বাজার কালক্রমে খুব বড় ব্যবসা কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। উল্লেখ্য, বর্তমান সেনের বাজার যেখানে অবস্থিত সেখান থেকে প্রায় দেড় মাইল পূর্বে অবস্থিত ছিল। নদীর ভাঙ্গনে ক্রমাগত সরতে সরতে বর্তমান জায়গায় এসে পৌঁছেছে। সেনের বাজার বর্তমান খুলনার (শহর) ঠিক উত্তর পাশে অবস্থান নিয়ে তার প্রাচীন মিতালি অক্ষুণ্ণ রেখেছে।

নামের উৎপত্তি ও প্রবাদ

নদীর বাঁকে অবস্থানরত কোন অজ্ঞাত মাঝি জোয়ার ভাটার (মাঝিদের ভাষায় গোণ) কারণে সন্ধ্যা বা রাতে নৌকা খুলতে উদ্যত হলে, তখন নদীর ভয়াবহতা সম্পর্কে জ্ঞাত মাঝিরা গমনোদ্যত মাঝিদের খুলনা-খুলনা বলে নৌকা খুলতে নিষেধ করতো। অনেক সময় নদীতীরের অধিবসীরাও গমনোদ্যত মাঝিদের অনুরূপভাবে সতর্ক করে দিত। এই ভাবে আত্রাই থেকে আলাইপুর পর্যন্ত ভৈরব নদীর দুই বাঁকের মধ্যবর্তী রূপসা খালের পুবে নদীর দক্ষিণ তীরের এ জায়গা খুলনার বাঁক নামে পরিচিত হয়। মাঝিরা নদীপথের দূরত্ব সাধারণত বাঁক দিয়ে নির্ণয় ও বাঁকের পরিচয় দিয়েই বাঁকের নামকরণ করতো। এ পরিচয়ে নিকটবর্তী জায়গা ও বসতি পরিচিত হয়ে খুলনা নামে গ্রামের নাম হয়। এভাবে গ্রামের নামকরণ উপবঙ্গে যথেষ্ট উপমা পাওয়া যায়।

বঙ্গে মুসলিম বিজয়ের পরবর্তী কালে ভৈরবতীর দিয়ে ক্রমাগত মুসলিম বসতি বিস্তার লাভ করতে থাকে। তখন খুলনা নামের বিস্তৃত এলাকার এক এক অংশ বিভিন্ন সময়ে তালিমপুর (তালিবপুর), নিকলাপুর, ইলাইপুর (এলাহীপুর) ও নয়াবাদ প্রভৃতি গ্রাম গড়ে উঠলে খুলনা নামের বিস্তৃত অঞ্চল সংকুচিত হয়ে পড়ে। পরবর্তী কালে খুলনার সাথে কিছমত যুক্ত হয়ে ছোট গ্রাম প্রাচীন নামের ধারায় কিছমত খুলনা মৌজা গঠন করে খুলনা নামের ঐতিহ্য কোন রকমে রক্ষা পায়। উল্লেখ্য , সুলতানী আমলে রাজস্ব সংগ্রহের সুবিধার্থে পরগনা, মহল, কিসমতে বিভক্ত হয়। প্রত্যেক কিছমত এলাকার কেন্দ্র যেখানে অবস্থিত ছিল সে গ্রামের নামের সাথে কিসমত যুক্ত হয়ে কিসমত খুলনা, কিসমত ফুলতলা,কিসমত ডুমুরিয়া ইত্যাদি নামে পরিচিত হয়।

খুলনা নামের উৎপত্তি নিয়ে কয়েকটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। ‘‘পূর্বকালে সুন্দরবন নিকটবর্তী ছিল। লোকে সুন্দরবন থেকে কাঠ, গোলপাতা, মধু সংগ্রহে এ পথে সুন্দরবন যেত এবং বোঝাই নৌকা নদীর ভয়াবহতার জন্যে রাতে এখানে অবস্থান করতো। কোন অজানা মাঝি রাতে নৌকা খুলতে গেলে জঙ্গল মধ্য থেকে বন দেবতা খুলোনা খুলোনা বলে মাঝিদের নিষেধ করতো। এই খুলোনা থেকে খুলনা নামের উৎপত্তি হয়েছে।’’

অপর প্রবাদ ‘‘কবি কঙ্কন বিরোচিত চন্ডিকাব্যের ধনপতি উপাখ্যান বর্ণিত ধনপতি সওদাগরের লহনা-খুলনা নামে দুই স্ত্রী ছিল। কনিষ্ঠা আদরিণী খুলনার স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে একটা মন্দির নির্মাণ করে মন্দিরের নাম রাখেন খুল্লেনেশ্বরী মন্দির। এ মন্দির উলুবনের কালীবাড়ী নামে পরিচিত। খুল্লেনেশ্বরী মন্দির থেকে খুলনা নাম হয়েছে।

প্রথমোক্ত প্রবাদের অনুকরণে সৃষ্ট তৃতীয় প্রবাদ ‘‘সুন্দরবন থেকে কাঠ, গোলপাতা, মধু,বোঝাই নৌকাগুলি ময়ুর নদীতে অবস্থান করতো। রাতে চলাচলকারী মাঝিদের ঝড় বা কোনো বিপদাশঙ্কা থাকলে জলদেবতা খুলোনা খুলোনা বলে নিষেধ করতেন। এর থেকে খুলনা নামের সৃষ্টি হয়েছে।’’ উল্লেখ্য, ময়ুর নদী কোনদিন খুব দীর্ঘ ও প্রশস্ত ছিলনা এবং খুলনা নামে পরিচিত গ্রাম থেকে অনেক দূরে।

সাম্প্রতিক আরও একটি প্রচলিত প্রবাদ ‘‘ প্রাচীন কালে আরবীয় বণিকেরা বাণিজ্যার্থে এখানে এসে বলতো ‘আদ খালনা’। এই ‘আদ খালনা’ থেকে খুলনা হয়েছে।’’
সাম্প্রতিক প্রবাদ দুটি অনেক আগে থেকে প্রচলিত এবং অন্য প্রবাদগুলি বর্তমান কালের। ঐতিহাসিকরা প্রবাদগুলির যৌক্তিকতা স্বীকার করেন না।

সতের শতকের গোড়ার দিকে এ ধারা অব্যাহত ছিল। অর্থাৎ এ সময়েও নদীর এ পথে যাতায়াতকারী সব নৌকা ও জাহাজ এখানে অপেক্ষা করত। ইংরেজ আমলের প্রথম থেকে খুলনা ইংরেজদের ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি বা বন্দর ছিল। পূর্ববঙ্গ, আসাম, কলিকাতা ইংরেজ বাণিজ্য কেন্দ্রের পণ্য চলাচলের সহজ পথ ছিল খুলনা হয়ে। ফলে খুলনা আগে থেকেই ছোটখাটো একটি বন্দর ছিল। এ ছাড়া যশোরের দেওয়ানী লাভের সাথে সাথে তাদের লবণ বিভাগের সদর দফতর রায় মঙ্গল লবণ এজেন্সি স্থানান্তর হয় খুলনার কয়লাঘাটায়। ফলে ইংরেজদের নৌবাণিজ্যে এ জায়গার গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। ঐ বছর অর্থাৎ ১৭৮১ সালে বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ব্যয় বৃদ্ধি ও নানা কারণে মিঃ টিলম্যান হেঙ্কেল প্রতিষ্ঠিত থানা ১৮৮২ সালে সরকার বন্ধ করে দেন। এ সময়ে মির্জানগর-ভুষনা-ধর্মপুর ও নয়াবাদে চারটি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

(দ্য রিপোর্ট/এস/এনআই/এপ্রিল ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর