thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

‘কারাগার সম্প্রসারণ নয়, প্রয়োজন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি’

২০১৭ এপ্রিল ২৬ ১৮:২৩:৪৭
‘কারাগার সম্প্রসারণ নয়, প্রয়োজন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ‘অনেকে কয়েদির সংখ্যা বিবেচনায় কারাগারের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বলেন। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বন্দিদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যকই রায়ের মাধ্যমে দোষী হয়ে কারাগারে রয়েছে। তাই কারাগারের ধারণক্ষমতা না বাড়িয়ে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা উচিত।’

সুপ্রিম কোর্টের সভা কক্ষে বুধবার (২৬ এপ্রিল) জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৭ উপলক্ষে 'সুপ্রিম কোর্টে আইনত সহায়তা কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ভূমিকা' শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেছেন। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি এই সভার আয়োজন করে।

কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ‘এমনও দেখা গেছে ডাকাতির মামলায় ২৫ বছর জেল খেটেছেন। এই মামলায় দোষী হলেও সর্বোচ্চ তার ১৪ বছরের সাজা হতো। কিন্তু বিচার ছাড়াই তার চেয়ে বেশি সাজা খাটতে হয়েছে। জীবন থেকে এই যে সময়টা চলে গেল এটা কে দেবে! তাই আমি মনে করি, যারা বন্দি থাকে তারা কারাগারে যে কাজ করে মুক্তির সময় তাদের সেই শ্রমের টাকা পরিশোধ করে দেওয়া উচিত। যাতে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তারা সেটা দিয়ে কিছু করতে পারেন।’

আইনগত সহায়তা পাওয়াকে অধিকার অভিহিত করে তিনি বলেছেন, 'লিগ্যাল এইড মানে শুধু আইনি সহায়তা পাওয়াটা কারো জন্য বদান্যতা নয়। বরং এটা একটা মানুষের অধিকার। রাষ্ট্র সেই অধিকার প্রদানে দায়বদ্ধ।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও জাতীয় আইনগত সহায়তা বিষয়ে আইন হলো ২০০০ সালে। এরপরও সেটা ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের সঙ্গে কাজ করার সময় অনেক জায়গায় গিয়েছি। বিলম্বে হলেও এখন আইনি সহায়তার বিষয়টি অনেক স্পষ্ট হয়েছে।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে দায়িত্ব পালনের স্বার্থে বিভিন্ন কারাগার পরিদর্শনের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেছেন কাজী রিয়াজুল হক। তিনি বলেছেন, ‘একটি কারাগারে গিয়ে দেখলাম প্রায় এক হাজার ৮০০ কারাবন্দি রয়েছে। অথচ সেই কারাগারের ধারণক্ষমতা ৫০০-এর কিছু উপরে। খোঁজ নিয়ে দেখলাম এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাত্র সাড়ে ৩০০ এর মতো। যদি দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হতো তাহলে এত লোককে কারাবন্দি থাকতে হতো না। তাই কারাগারের ধারণক্ষমতা না বাড়িয়ে আমাদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কথা ভাবতে হবে।’

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেছেন, “মাত্র দুটি কিশোর ও একটি কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে। এখান থেকে কমবয়সী আসামিদের বিচারের জন্য জেলায় পাঠানোটা বাস্তবিকভাবেই কঠিন। এ কারণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের বিচার করার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে।কমবয়সী আসামিদের স্কাইপিতে ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবা-মার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। একবার দেখলাম ঠাকুরগাঁও এর এক কিশোর বলল, ‘আমাকে ওই জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন।’ কারাগারে বেশি কষ্ট হলেও সেখানে যেতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সে উত্তর দিল, ‘ওখানে থাকলে বাবা-মা দেখতে আসতে পারবে। গরীব বলে বাবা-মা গাজীপুরে আসতে পারেন না।’

আইনি সেবাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আগামী বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখার আহ্বানও জানান কাজী রিয়াজুল হক।

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের চেয়ারম্যান ও মতবিনিময় সভার সভাপতি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড একটি আইন দ্বারা গঠিত। আইনের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবু আইনি সহায়তা প্রদানের স্বার্থে সরকারি তহবিলের পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির সহযোগিতায় আমরা নিজেরা আরেকটি তহবিল গঠনে কাজ করছি।’

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম।

এতে অংশ নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেছেন, যদি সরকার ও এনজিও একসঙ্গে মানুষকে আইনগত সহায়তা প্রদানে কাজ করে, তবে মানুষ আরও সুফল পাবে। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এনজিওগুলোর সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ও জাতীয় আইনগত সহায়তা কেন্দ্রের সঙ্গে আমরা কাজ করতে চাই। এজন্য সরকারকে আইনি সেবা বঞ্চিতদের সহায়তা প্রদান ও দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাবন্দিদের পুনর্বাসনের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।

মতবিনিময় সভায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আলম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নূরন নাহার ওসমানী, রুল অব ল’র হেড অফ প্রোগ্রাম প্রমিতা সেনগুপ্ত, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক আইনজীবী সালমা আলী, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী, নারী পক্ষের সদস্য রওশন আরা প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/জেডটি/এপ্রিল ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর