thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

অত্যাধুনিক আইইডি তৈরিতে পারদর্শী জেএমবির সদস্যরা

দূর থেকে সরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা

২০১৭ এপ্রিল ২৬ ২২:৪৯:২০
দূর থেকে সরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা

মো. শামীম রিজভী, দ্য রিপোর্ট : একে একে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের (নব্য জেএমবি) শীর্ষ নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নিহত ও গ্রেফতার হওয়ার পরও এই গ্রুপটির অন্য নেতাকর্মীদের তৎপরতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তাদের এখন পরবর্তী পরিকল্পনা কোন সরকারি স্থাপনায় হামলা করা।

চলতি বছরের ২০ মার্চ সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ৫ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এই পরিকল্পনার তথ্য জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত এই গ্রুপটির ১৬ জন সদস্যকে অস্ত্র-বোমসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এদের সবারই ঢাকার কোন সরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। তারা যে ইমপ্রোভাইসড অ্যাক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বানিয়েছিল তাতে করে ১০০ মিটার দূরত্ব থেকে দূরনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব ছিল।

গত ২০ মার্চ রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অলিউজ্জামান ওরফে অলি (২৮) ও আনোয়ারুল আলম (২৯) নামে দুজনকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে একই রাতে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সালেহ আহাম্মেদ শীষ (২২), আবুল কাশেম (২৭) ও মো. মোহন ওরফে মহসিনকে (২০) বিস্ফোরক, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, জঙ্গিবাদী বই, ডামি পিস্তল ও বন্দুক, নগদ ৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে অলি বহুজাতিক কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বুয়েট থেকে ২০১২ সালে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। বুয়েটে অধ্যয়নকালীন তার ধর্মীয় বিষয়ের উপর আগ্রহের সৃষ্টি হয়। সে বিভিন্ন ধর্মীয় বই-পুস্তক, লিফলেট ও অনলাইনে বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদী বিষয়ে আকৃষ্ট হয়। ২০১৫ সালের শেষের দিকে সে জেএমবি’র “সারোয়ার-তামিম” গ্রুপে অন্তর্ভূক্ত হয়। তাকে কাফরুল এলাকার একটি জঙ্গি সেল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অলিরই সহপাঠী আনোয়ারুল। তিনিও একই সময়ে বুয়েট থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। তিনি অলির মাধ্যমে “সারোয়ার-তামিম” গ্রুপে অন্তর্ভূক্ত হন। সে বোমা তৈরির উপর পারদর্শী।

গ্রেফতার ওই ৫জনের জবানবন্দির কথা উল্লেখ করে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি-অপারেশন্স) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান জানান, গ্রেফতাররা সরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। প্রায় সোয়া এক বছর ধরে তারা একত্রিত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছে। তাদের সদস্য সংখ্যা ১০-১২ জন। এদের অধিকাংশই মিরপুর ও কাফরুল এলাকার বাসিন্দা।

র‌্যাব জানায়, এ ঘটনায় র‌্যাব-১০ ২১ মার্চ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাড্ডা থানায় মামলা (মামলা নম্বর-২৪) দায়ের করে। মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকার যে কোন সরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনার জন্য সংগৃহিত ও মজুদ গান পাউডার ও তাদের নিজেদের তৈরি দেশীয় অস্ত্রসহ এ পর্যন্ত ১৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা আদালতে জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে তারা ইমপ্রোভাইসড অ্যাক্সপ্লোসিভ ডিভাইসে (আইইডি) গান পাউডার ব্যবহার করে সরকারি বা বেসরকারি বড় স্থাপনায় হামলাসহ নাশকতার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে।

তাদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, তাদের আইটি বিশেষজ্ঞ মো. মুশফিকুর রহমান ওরফে মুশফিক মার্টিন জেনি ঢাকায় নব্য জেএমবি’র সদস্যদের আইইডি সরবরাহসহ বড় ধরনের নাশকতা সংগঠনের জন্য জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ করে আসছে। জেনি জঙ্গি সংগঠনের তার অপরাপর সহযোগী সদস্যদের মাঝে বিভিন্ন আইইডি বিষয়ে শিক্ষাদান করে এবং বিভিন্ন প্রকার ডিভাইস অন্য সদস্যদের কাছে সরবরাহ করে। জেনি সম্পর্কে ব্যাপক অনুসন্ধান শেষে তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রত্যক্ষ অভিযোগ পাওয়ায় তাকে গ্রেফতারের জন্য র‌্যাব-১০ একটি সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। পরে বুধবার সকালে জেনিকে উত্তরায় তার নিজ বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ রিমোট কন্ট্রোল আইইডি এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার করা হয়।

মুশফিক মার্টিন জেনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০০৫ ব্যাচের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা ও অনিয়মিত পড়াশুনার কারণে সে বুয়েট থেকে এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করতে পারেনি। তারা দু’ভাই ও এক বোন। ২০ মার্চ বাড্ডা থেকে নাশকতার চেষ্টা মামলায় গ্রেফতার নব্য জেএমবি সদস্য ওয়ালী জামান ও আনোয়ার বুয়েটের ছাত্র এবং জেনির সহপাঠী ও সহযোগী। পড়াশোনা শেষ না করেও নিয়মিত ফি প্রদান করে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখেন এই যুবক।

র‌্যাব-১০ অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, জেনি যে ধরনের আইইডি তৈরি করতেন তাতে প্রায় ১০০ মিটার দূরত্ব থেকে দূরনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব ছিল। তিনি বড় ডিভাইস ও সার্কিট তৈরি করতে পারতেন। ঢাকা সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী একটি সরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জেএমবির এই দলটির। এর আগে গ্রেফতার হওয়া জেএমবির সদস্যদের স্বীকারোক্তিতে তার নাম পাওয়া যায়। বুয়েটে ২০১৫ সালে গবেষণাপত্রে (থিসিস) বিদ্যুতের ‘স্মার্ট মিটার প্রজেক্ট’ নিয়ে কাজ শুরু করেন জেনি। বর্ধিত ফি জমা দিয়ে তিনি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষে ছাত্রত্ব ধরে রেখেছিলেন। তার সহপাঠীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এখন বুয়েটের শিক্ষক হয়ে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, মুশফিক জেনি নব্য জেএমবির তামিম-সারোয়ার গ্রুপের ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিশেষজ্ঞ। তার বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম একজন স্বনামধন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। জেনির জঙ্গিবাদে জড়ানো সম্পর্কে তার মা অবগত ছিলেন। কেন তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাননি এমন প্রশ্নের জবাবে তার মা বলেন, ছেলেকে ধরে ফেলার ভয়ে আমি জানাইনি। তবে, আমি জানতাম একদিন আপনারা তাকে ধরে ফেলবেন। জেনি নিজের বাড়ির ফ্যান, লিফট, এসি, পানির মোটর রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতো। তার আইইডি ডিভাইস ঢাকার বাইরে কোন এক জায়গায় সফলভাবে পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায় বলেও জানা গেছে। ব্যাটারির পানি ও এসিটনের সংমিশ্রণে বিস্ফোরক তৈরি করতেন তিনি এবং তা বৈদ্যুতিক বাল্বের আলোর সাহায্যে উত্তপ্ত করে বিস্ফোরণ ঘটাতো।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/এপি/এপ্রিল ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর