thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রয়োগ

আইন সংশোধন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন মত

২০১৭ এপ্রিল ২৬ ২৩:০১:৪১
আইন সংশোধন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন মত

‘যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড’ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে এমন পর্যবেক্ষণের পর দণ্ডবিধি সংশোধন করতে হবে কি-না, এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও ভিন্নমত তৈরি হয়েছে।

‘যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড’ আপিল বিভাগের এমন পর্যবেক্ষণের অর্থ হলো শুধু উচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হলেই তা হবে আমৃত্যু কারাদন্ড। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে সব ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ আমৃত্যু নয়। তা বর্তমানের বিধান অনুযায়ী ৩০ বছরও হতে পারে।

যে কোনো পর্যায়ে এই বিধান প্রয়োগ করতে হলে সেখানে সংশোধনীর বিষয়েও রায়ে ইঙ্গিত রয়েছে।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের এই রায়ের সঙ্গে বিদ্যমান আইনের কোনো সংঘর্ষ দেখছেন না। বরং উচ্চ আদালত শুধু আইনের ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োগের বিধানটা বলে দিয়েছেন বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে, আপিল বিভাগের এই রায়ের আলোকে বিদ্যমান আইনে সংশোধনী আনাটা আইনসভার উচিত হবে বলে মত দিয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। অন্যদিকে, এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে চাননি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বাংলাদেশে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৫৩ ধারায় যে পাঁচ প্রকার শাস্তি রয়েছে তার মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড একটি। এই ধারার প্রয়োগের বিধান রয়েছে বিধির ৫৭ ধারায়। যেখানে বলা হয়েছে ‘দণ্ডের মেয়াদসমূহের ভগ্নাংশসমূহ হিসাব করার ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাবাস ৩০ বছর মেয়াদী কারাবাসের সমতুল্য বলে গণ্য হবে।’

আপিল বিভাগ একটি খুনের মামলায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তিন আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে একটি রায় দিয়েছিলেন। সেই রায়ের ৯২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সোমবার (২৪ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

যেখানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড যে আমৃত্যু কারাবাসকেই বুঝায় তা বর্তমান দণ্ডবিধি থেকেই উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির ৫৩ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অর্থ ৪৫ ধারার সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে হবে। (৫৩ ধারায় শাস্তির ধরনের মধ্যে একটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড উল্লেখ করা হয়েছে। আর ৪৫ ধারায় ‘জীবন’ বলতে ‘মনুষ্য জীবন’কে বুঝানো হয়েছে।) সেক্ষেত্রে দেখা যায় যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড।

৫৭ ধারা প্রয়োগে একটা বিধান নতুনভাবে প্রণয়নের ইঙ্গিত মিলেছেও রায়ে। রায়ে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির ৫৭ ধারা সেখানেই প্রযোজ্য হবে, যেখানে সর্বোচ্চ দণ্ড হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের বিধান যদি করা না হয়, তখন সাজার ভগ্নাংশ গণনা করাটা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

রায়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে মঙ্গলবার সকালে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘ফুল রায়টা আমি দেখি নাই। ৫৩ ও ৪৫ যে দুটি ধারা আছে, সেখানে ৫৩-তে ইমপ্রিজনমেন্ট ফর লাইফ আছে। আর ৪৫ এ বলছে, একটা মানুষ যতদিন বাঁচবে সেটাকে লাইফ বুঝাচ্ছে। সেজন্য ইমপ্রিজনমেন্ট ফর লাইফ হলে আমৃত্যু হবে, এটাকে ৩০ বছর করার কোনো সুযোগ নাই।’

সেক্ষেত্রে রায় অনুযায়ী বিদ্যমান আইনে সংশোধনী আনা উচিত বলেও মনে করছেন জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী। তিনি বলেছেন, ‘দণ্ডবিধির ৫৭ ধারাটা সংশোধন করা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। সেক্ষেত্রে ইমপ্লাইডলি বলা যেতে পারে এটার কার্যকারিতা এখন আর নাই। আপিল বিভাগের যে রায় আসছে, ভবিষ্যতে লাইফ ইমপ্রিজনমেন্ট দিতে গেলে এটাই ফলো করতে হবে। পার্লামেন্টের দায়িত্ব হবে জাজমেন্ট অনুযায়ী সংশোধন করা।’

আপিল বিভাগ অবশ্য পর্যবেক্ষণে আমৃত্যু কারাবাসের প্রয়োগের একটা সীমা নির্ধারণ করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, যদি হাইকোর্ট বিভাগ বা এই আদালত (আপিল বিভাগ) মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন এবং নির্দেশ দেন যে, তার স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত এই কারাদণ্ড ভোগ করবে, তখন এ ধরনের মামলায় সাজা কমানোর আবেদন গ্রাহ্য হবে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও জানিয়েছেন প্রয়োগের এই বিষয়টির কথা। মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যার মৃত্যুদণ্ড আদেশ ছিল এটাকে কমিয়ে যদি যাবজ্জীবন দেওয়া হয়, এই যাবজ্জীবনের অর্থ হলো আমৃত্যু কারাদণ্ড। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে ক্ষমতা বা জেল কোডের ক্ষমতা এগুলো এপ্লিকেবল হবে না, কমানো যাবে না। শুধু রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা উনি প্রয়োগ করতে পারবেন; উনি কমাতেও পারবেন উনি মাফও করতে পারবেন।’

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের এই বিধান যে কোনো পর্যায়েই প্রয়োগের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক হবে কিনা বা এটা সংশোধন করতে হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘পেনাল কোড সংশোধনের বিষয় পার্লামেন্ট সবসময় পারে। সেটা ভিন্ন কথা। আইনে যেটা যেভাবে যা আছে সেটাকেই আপিল বিভাগ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। এক্ষেত্রে আইনের সংশোধন দরকার হবে না। এ ছাড়া এটা দণ্ডবিধির ৫৭ ধারার সঙ্গে এটা সাংঘর্ষিক হবে না। এগুলো আপিল বিভাগ ৫৭ ও অন্যান্য ধারা ব্যাখ্যা করেই এটা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।’

এই মামলায় আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এই রায় প্রকাশের সময় দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মৌখিকভাবে রায় প্রদানের পর তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেছিলেন, ‘যাবজ্জীবনকে আমৃত্যু ঘোষণা করে দেওয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা রিভিউ করব।’

তবে এই রায়ের বিষয়বস্তু বা আইনের সংশোধন পুরো বিষয়টিকে এড়িয়ে গেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকরা যাবজ্জীবনের মেয়াদ ও বর্তমান আইনের বিধান সম্পর্কে তার কাছে জানতে চান।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে খবরের কাগজে দেখলাম যেটা পূর্ণাঙ্গ রায় বেরিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় যেটা বেরিয়েছে সেটা যদি আমি না পড়ে একটা কথা বলি সেটা অন্যরকম হয়ে যায়। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আমি আজকেই জোগার করব এবং পরে কয়েকদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে কথা বলব।’

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এপি/জেডটি/এনআই/এপ্রিল ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর