thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

হওরে বন্যা

পাল্টাপাল্টি দোষারোপ নয়, দরকার জাতীয় ঐক্য : ড. কামাল

২০১৭ এপ্রিল ২৯ ১৫:৪৪:০৯
পাল্টাপাল্টি দোষারোপ নয়, দরকার জাতীয় ঐক্য : ড. কামাল

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : হাওরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ না করে সংকট মোকাবিলার জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার (২৯ এপ্রিল) ‘দুর্যোগপূর্ণ হাওরবাসীর পাশে দাঁড়ান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে গত ২৯ মার্চ সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটের হাওর অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়। সরকারি হিসাবে বন্যায় প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার ৭৬ টন মাছ মারা গেছে, হাঁস মারা গেছে তিন হাজার ৮৪৪টি।

হাওরের পানিতে ইউরেনিয়ামের কারণে মাছ মারা গেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করে দিয়ে বলা হয়েছে, হাওরের পানিতে ইউরেনিয়ামের অপপ্রচার চালিয়ে বিএনপি মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, ‘হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে বিএনপি নেতারা রাজনীতি করছে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর এ ধরনের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, ‘এটা একটা জাতীয় সংকট, জাতীয় সংকট মোকাবিলার জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য। সকলে এটাকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার না করে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ না করে সমস্যা চিহ্নিত করা দরকার। সব তথ্য একত্র করা দরকার। সব ধরনের গঠনমূলক প্রস্তাব সামনে আনা দরকার।’

‘এই মানসিকতা নিয়ে বলা দরকার, চলেন আমরা কোনো দলীয় পাল্টাপাল্টি দোষারোপ না করে আসুন সবাই মিলে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে বাঁচানো যায়।’

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য হয়ে থাকে জানিয়ে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘জাতীয় সংকট মোকাবিলায় তো পাল্টাপাল্টি হওয়ার কথা নয়। ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠনমূলক প্রস্তাবগুলো এনে কীভাবে সমন্বয় করে কাজ করা যায় অবশ্যই সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’

নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগকে ভালো চোখে দেখছে না বলে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মন্তব্য করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে বক্তব্য আসছে।

এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগের সমন্বয়ে কাজ হয়। সংবিধান অনুযায়ী সবারই নির্দিষ্ট কাজ আছে। লক্ষ্য অর্জনে সে ব্যাপারে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে। এ নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। মাঝেমধ্যে কোন দ্বন্দ্ব এখানে সৃষ্টি হয় তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা অবশ্যই হওয়া উচিত। আমি মনে করি এটাকে নিয়ে কোনো ধরনের সংকট করা উচিত নয় বা সংকট সৃষ্টি হবেও বা কেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ‘অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, দুর্নীতি সমাজকে অনেক ক্ষতি করছে। দুর্নীতির কারণে যে কাজটা পাওয়া উচিত সেই কাজটা আমরা পাচ্ছি না। দুর্নীতির কারণে কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়। আমাদের শাসনব্যবস্থার মধ্যে জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে, রাজনীতির মধ্যেও।’

গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য তবারক হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল সরেজমিন বন্যাদুর্গত হাওরাঞ্চল পরিদর্শন করে সার্বিক অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।

ড. কামাল হোসেন জানান, বন্যায় আট লাখ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ২৪ লক্ষাধিক কৃষক পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

সরকারি হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চার হাজার ৬২৪ কোটি টাকা হলেও বাস্তবে এ পরিমাণ আরও অনেক বেশি দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মহল মাছের ব্যাপক মড়কের বিষয়ে বিভিন্ন কারণের কথা উল্লেখ করেছে। সরকার এর প্রকৃত কারণ জানায়নি।’

ত্রাণ দিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করায় অনিয়ম হচ্ছে দাবি করে কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রাধান্য না দিয়ে উপজেলাওয়ারি জনসংখ্যার ভিত্তিতে তালিকা করে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর খবনে হতাশ ফসলহারা কৃষক।’

‘হাওরবেষ্টিত জেলাগুলোকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হোক। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে’ বলেন ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান ড. কামাল।

হাওরে বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাওরের জলমহালের ইজারা বাতিল করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সেখানে অবাধে মাছ ধরার সুযোগ দিতে হবে। গবাদিপশুর খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।’

এ সময়গণফোরামের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এম/এপ্রিল ২৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর