thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

এক তৃতীয়াংশ মানুষই পায়নি সরকারি ত্রাণ

পচা ধান তুলছে হাওরপাড়ের মানুষ

২০১৭ এপ্রিল ৩০ ১৭:৪২:৩৫
পচা ধান তুলছে হাওরপাড়ের মানুষ

সেলিম আহমেদ, হাওর তীর থেকে ফিরে : ‘বাবা, একমাস আগে বরুয়া ধান পানিয়ে খাইয়া গেছে। কিন্তু এখনও সরকার তনে কোন সায্য পাইছি না। ঘর ভাত নাই। তাই বাধ্য হয়ে মানুষ দিয়ে পেড়া ধান দাওয়াইয়া আনছি। আশা করছিলাম কিছু ধান যদি পাই তাইলে ক’দিন খাইতাম পারমু। কিন্তু দেখ শতও দশটা ধানও নাই।’

রাস্তার উপর ধান পরিষ্কার করতে করতে, কি খাবেন সারা বছর- এই দুঃশ্চিন্তায় কেঁদে ফেলেন হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কুরবানপুর গ্রামের পঞ্চাষোর্ধ্ব রেনু বেগম। এ চিত্র পুরো হাওরাঞ্চল জুড়ে।

এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে অকালবন্যার এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতভাগ বোরো ধান। এই একমাসেও হাওরপাড়ের শতভাগ ফসলহারা এক তৃতীয়াংশ মানুষই পাননি সরকারি ত্রাণ। তাই বাধ্য হয়ে ত্রাণের আশা ছেড়ে দিয়ে পচা ধান তুলে কিছু ধান পাওয়ার আশায় সংগ্রাম চালাচ্ছেন হাওর তীরের কৃষকরা।

রবিবার ৩০ এপ্রিল হাকালুকি হাওর তীরের গ্রামগুলো ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। তবে পচা ধান প্রক্রিয়াজাত করে খেলে কোন সমস্যা হবে না বলে কৃষি বিভাগ নিশ্চিত করেছে। একই ইউনিয়নের কুরবানপুর গ্রামে কথা হয় কৃষক গ্রামের তুতা মিয়া (৬০) ও সুবেল আহমদ (৩৫) এর সাথে। তারা জানান, গত ২-৩দিন থেকে রোদ থাকায় নৌকা দিয়ে পানির নিচ থেকে ধান তুলে এনে প্রথমে রোদে শুকানো হয়। তারপর ঝেড়ে যদি কিছু ধান পাওয়া যায়, এই আশায় তারা পরিশ্রম করছেন।

ছকাপন গ্রামে গেলে দেখা যায়, হাওরে যাওয়ার সড়কে নারী-পুরুষ সবাই পচা ধান নাড়াচাড়ায় ব্যস্ত। পুলিন মালাকার (৩৮), প্রভাষ মালাকার (৫২), সুনীল মালাকার (৪৫) জানান, বোরো ক্ষেত থেকে সারা বছরের খাবারের ধান মজুত রেখে বাকিটা বিক্রি করেন। এই বোরো ক্ষেত দিয়ে পরিবারের আয় রোজগার। এবারতো খাবারই জুটবে না। ফলে পরিবার পরিজনের সারা বছরের অন্নের সংস্থান কীভাবে হবে তা নিয়ে পড়েছেন দুঃশ্চিন্তায়।

বড়দল গ্রামের পবিত্র দাস (৬৫) জানান, ভাতিজা শান্তকে নিয়ে হালের লাঙল নিজের কাঁধে টেনে বীজতলা প্রস্তুত করি। সেই কষ্টের ফসল পচে নষ্ট হয়ে গেছে। পচা ধান তুলে এনে পাকা রাস্তায় স্বামী স্ত্রী মিলে ধান বের করার চেষ্টা করছি।

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারি ত্রাণের কথা বলতেই তারা সবাই অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান মেম্বাররা আগে তাদের পছন্দের আর তাদের যারা ভোট দিয়েছে, সেই মানুষকে দেওয়া শেষ করলে যদি তাদের দয়া হয় তাহলে দিতে পারেন। অতিদরিদ্রদের তালিকায় থাকা লোকজনের কপাল খুলেছে। তারা টাকায় ভোট দেয়। সারাবছরে ভিজিএফ, ভিজিডি, বিভিন্ন ভাতা ভোগ করে। আবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণও তারা আগে পায়। এখনও সর্বস্বহারা প্রকৃত কৃষকের হাতে ত্রাণ পৌঁছায়নি।

ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির ও ইউপি সদস্য সাইরুল ইসলাম ও ফখরুল ইসলাম জানান, ত্রাণ দেওয়ার জন্য তিন ক্যাটাগরিতে তালিকা করা হয়েছে। অতিদরিদ্র, দরিদ্র ও বিত্তবান ক্ষতিগ্রস্ত। তারা সকল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

পচা ধান তুলে তা শুকিয়ে খাবার উপযোগী হবে কি-না?-এ প্রসঙ্গে কুলাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জগলুল হায়দার দ্য রিপোর্টকে জানান, আসলে শুকিয়ে খাবার উপযোগি করে খেলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেননা ধান পচেছে প্রাকৃতিক নিয়মে। মূলত ধান পচে গ্যাসের সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে ধান নিয়ে আশঙ্কার কোন কারণ নেই।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/এপ্রিল ৩০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর