thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

‘রমজানে পণ্যের দাম স্বাভাবিকে পুরস্কার’

২০১৭ এপ্রিল ৩০ ১৮:০১:১৩
‘রমজানে পণ্যের দাম স্বাভাবিকে পুরস্কার’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নিত্যপণ্যের যোগান দেওয়া বড় ব্যবসায়ীরা রমজানে দাম স্বাভাবিক রাখতে পারলে সরকার তাদের পুরস্কৃত করবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

রমজান উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।

তেল, চিনি, ছোলা, ডাল, লবণসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের বড় অংশের যোগান দেন দেশের কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। সভায় কয়েকজন ব্যবসায়ী ওইসব প্রতিষ্ঠানের অবদানের জন্য পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এবার রমজান মাস যদি ভালভাবে যায়, তারা যদি পণ্যের দাম সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রাখতে পারে তাহলে অন বিহাফ অব দ্য গভর্নমেন্ট (সরকারের পক্ষে) আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যবসায়ীদের আমরা এবার পুরস্কৃত করব।’

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে ২৭ বা ২৮ মে।

দেশে ভোজ্য তেল, চিনি, পেঁয়াজ, লবণ, ছোলা, রসুন, আদার পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এবার রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তোফায়েল আহমেদ।

ছোলাসহ কয়েকটি পণ্যের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে যাওয়ার পেছনে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ী করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডলারের দাম ৮২ টাকার নেমে এসেছে। ডলারের দাম আরও কমবে।’

সভায় মন্ত্রী চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ, ডাল, ছোলা, খেঁজুর, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ ও বিবিধ মসলার মজুদ, আমদানি পরিস্থিতি, চাহিদা, বাজার মূল্যের তথ্য তুলে ধরেন। মন্ত্রী জানান, দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া তথ্য অনুসারে মুদ্রাস্ফীতি সাধারণ ইনডেক্সে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

তিনি বলেন, ‘মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। এ সব কারণে দু’একটি পণ্যের সামান্য মূল্য বৃদ্ধি পেলেও এতে জনজীবনে খুব বেশি প্রভাব পড়ছে না। চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্যের মজুদ আছে। সুতরাং দ্রব্যমূল্য বাড়ার সম্ভাবনা নেই।’

সভায় বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, ‘সরবরাহ লাইন ঠিক থাকলে দাম বাড়ে না। আমাদের চাহিদা কত, কি পরিমাণ আছে-সেটা উৎপাদনকারীরা ভাল বলতে পারবেন। চাহিদা অনুসারে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলে সমস্যা হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুচরা ও পাইকারি বাজারের মধ্যে পার্থক্য যেন খুব বেশি না হয়। এ বিষয়ে নজরদারি করা। এখানে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে কাজে লাগানো যেতে পারে।’

ট্যারিফ কমিশনের সদস্য মো. আব্দুল কাইয়ূম বলেন, ‘ভোজ্য তেল ও চিনির সরবরাহ লাইন ঠিক আছে। আন্তর্জাতিক মূল্যে দাম বাড়ার কোন প্রবণতা নাই।’

ডলারের দাম বাড়ার কারণে চিনির দাম বেড়েছে জানিয়ে সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, ‘ডলারের দাম ৮০ টাকায় ফেরত এলে দ্রব্যমূল্যে কোন প্রভাব পড়বে না।’

বেশি দামে ছোলা বিক্রির বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের দাম নির্ধারণ করে দিতে চাই না। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সেটা সম্ভবও নয়। তবে আমার মনে হয়, বাজারে কেউ বেশি দামে ছোলা বিক্রি করতে পারবে না।’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্সে আইনশৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক ক্যাপ্টেন নুরুল হক বলেন, ‘রাস্তাঘাটে অনেক সময় চাঁদাবাজি হয়। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এতে বাড়াবাড়ি করেন। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট ভাল না। এগুলো ঠিক করতে হবে।’

জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই।’

পুলিশ সদর দফতরের প্রতিনিধি উপ-মহাপরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘রমজানে সাধারণ সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি ফোর্স মোতায়েন করা হয়। আমাদের রিজার্ভ ফোর্স কাজ করে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে গাড়ি সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া আটকানো হয় না। ছেড়ে দেওয়া হয়। আমাদের বাহিনীর কেউ যদি নিয়মবহির্ভূত কাজ করলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এরকম নির্দেশনা সদর দফতর থেকে দেওয়া আছে।’

কড়াকড়ি বাজার নিয়ন্ত্রণের ফল ভাল হয় না

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মাওলা বলেন, ‘খুচরা বাজারের মূল্য যেন পাইকারি বাজারের মূল্য বিবেচনায় যৌক্তিক থাকে। খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ালে সেটা চাপিয়ে দেয় পাইকারি ব্যবসায়ীদের উপর। বাজারে মনিটরিং দরকার। খুচরা ব্যবসায়ীরা যেন তাদের সাথে পাকা রশিদ রাখে। যাতে মনিটরিংয়ের সময় সেটা দেখানো হয়।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি কড়াকড়ি আরোপ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চাই তাতে ফল ভাল হয় না। ব্যবসায়ীদের বন্ধু হিসেবে নিতে হয়। ব্যবসায়ীদের আপন হিসেবে নিতে হয়। ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করতে হয়।’

‘ওই কথায় কথায় বলে না সিন্ডিকেট অমুক-তমুক, এগুলো আমি বিশ্বাস করি না। কারণ আমি বাণিজ্যমন্ত্রী আগেও ছিলাম, এখনও আছি। আমি দেখেছি ব্যবসায়ীরা আমাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে। তারা কারচুপি করলে পরিস্থিতি এইভাবে থাকত না’ বলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল।

‘বাংলাদেশ এখন ফরমালিনমুক্ত’

শাহ আলী সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আগে আমাদেরকে একটা ফরমালিন মেশিন দেওয়া হয়েছে। এটা এখন কোন কাজে আসে না। মন্ত্রীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ ফরমালিনমুক্ত মাছ-ফল-তরকারি যেন খাওয়াতে পারি। এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে বলবো।’

জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আপনি যেটা বললেন, এটা আমাদের জানা নাই। ফরমালিন এখন আর ব্যবহার হয় না।’

তিনি বলেন, ‘ভোক্তাদের স্বার্থের জন্য আমরা যথেষ্ট সচেতন। যে কথাটা বললেন, সেটা অনেক পুরনো কথা। ফল, শাক-সবজি, মাছ কোন জায়গায় ফরমালিনের নাম নাই। বাংলাদেশ এখন ফরমালিনমুক্ত। একথা আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি।’

সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শুভাশীষ বসু, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, টিকে গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার শফিউল আক্তার তাসলিম, এস আলম গ্রুপের সিনিয়র মহা-ব্যবস্থাপক কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এপি/এপ্রিল ৩০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর