thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

‘উৎসব আমেজে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে মে দিবসের চেতনা’

২০১৭ এপ্রিল ৩০ ২৩:২১:২০
‘উৎসব আমেজে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে মে দিবসের চেতনা’

উৎসব আমেজে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে মে (১ মে) দিবসের চেতনা, এমন দাবি বাম বলয়ভুক্ত ও অন্যান্য শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের। এবারের মে দিবস নিয়ে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এ দাবি করেছেন।

মে দিবসকে ঘিরে রবিবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘মে দিবসকে শ্রমিক সমাজের সংগ্রামের দিন হিসেবে চিহ্নিত না করে উৎসবের দিনে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। অথচ ২০১৬ সালেই বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের শিল্প সেক্টরে এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক অকালে জীবন দিয়েছে। এদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মানদণ্ড আজ্ও ঠিক হয়নি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘শ্রমিকরা কাজ করলে ন্যায্য বেতন বা মজুরি পায় না। যা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। আবার দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবার ক্ষতিপূরণ পায় না। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও এ দেশের ৯০ভাগ শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নেই। ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ। সমাজে এতো গণতন্ত্রের কথা শুনি, অথচ এ দেশে শ্রমিকের গণতান্ত্রিক শ্রম আইন নেই। দেশের আজ ২ কোটি ৭০ লক্ষ কৃষি শ্রমিকের সারা বছরের কাজের ব্যবস্থা নেই। তাদের শ্রমিক হিসেবে সম্পূর্ণ স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি।’

রাজেকুজ্জামান রতন আরও বলেছেন, ‘সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয়ের পর আইএলও আগের জায়গায় নেই। মালিক শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মধ্যেই তার কর্মতৎপরতা সীমাবদ্ধ রয়েছে। আইএলও কনভেনশন না মানলে সরকার ও মালিকদের কিছু করার ব্যাপারে তারা এখন আর আগ্রহী নয়।’

রাজেকুজ্জামান রতন বলেছেন, ‘৮ ঘন্টা কর্মঘন্টার দাবির আড়ালে শ্রমিক শ্রেণির শোষণ মুক্তির বিষয়টিই ছিল মে দিবসের মূল চেতনা। ১৮৮৬ সালে ফাঁসিতে মৃত্যুর আগমুহূর্তে আগস্ট স্পিজ সেই কথাই বলেছিলেন। তিনি (স্পিজ) বলেছিলেন, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে শোষণমুক্ত পরিবেশে বসবাস করতে পারে সে জন্যই আমি জীবন দিয়ে যাব।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘১৮৮৬ সাল থেকে শুরু করে আজ অবধি বাংলাদেশের সর্বত্র ৮ ঘন্টা কাজের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অনেক সেক্টরে ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা কাজ করতে হয়। যা আয় করে তা দিয়ে জীবন চলে না। ওভার টাইম খাটতে হয়। ১৬১ বছরেও এখানকার শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তা পায়নি। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নেই।’

তিনি দাবি করেছেন, ‘শ্রমিকের স্বার্থ নয়, সরকার চায় আইনের কঠোরতা আর মালিক চায় দালাল শ্রমিক নেতা বানাতে। গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, জাতীয় নিম্নতম মজুরি ও ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড নির্ণয়ই এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য।’

মে দিবস নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘শ্রমিকদের মূল চেতনা থেকে সরিয়ে নিতে মে দিবসের ওপর তিন দিক থেকে আক্রমণ চলছে। একদিকে বহুজাতিক কোম্পানি ও মালিক পক্ষ। তারা ব্যান্ড পার্টির কনসার্ট ইত্যাদির মাধ্যমে শ্রমিকদের শোষণ মুক্তির সংগাম থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চাইছে। একই সঙ্গে মে দিবসের ওপর চলছে ধর্মীয় আক্রমণ। সরকারের উদ্যোগও মূলত মালিকের পক্ষে যাচ্ছে। এই ত্রিমুখী আক্রমণ থেকে মুক্তির জন্য সব শ্রমিককে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘১৮৮৬ সালের চেতনা থেকে শ্রমিকরা দূরে সরে গেছে। তাদের যেভাবে গড়ে তোলা দরকার তা আমরা পারিনি। শ্রম দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে শ্রমিকের মুক্তি আসেনি। মানবতার দিক থেকে জীবন-জীবিকার পরিবর্তন হয়নি। বিভিন্ন ছলাকলায় শ্রমিকের মে দিবস সরকার আর মালিকেরা ছিনিয়ে নিয়েছে।’

বাংলাদেশ শ্রমিক আন্দোলনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেছেন, ‘মালিক ও সরকারের পোষ্য এবং বিদেশি সাহায্যপুষ্ট এনজিও-এর দালালরা শ্রমিক নেতা সেজে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। শ্রমিক সমাজের কোনো কল্যাণ হচ্ছে না। সরকার ও মালিকদের সমন্বয়ে মে দিবস পালিত হয়। এতে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ভোতা হচ্ছে। তাই আগের মতো হেনরির হাতুড়ির ঝংকার শোনা যায় না। শ্রমিকের কষ্টকর জীবনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। পরিবহন শ্রমিকের কোনো শ্রম ঘন্টা নেই। তাদের সপ্তাহে ১৬৮ ঘন্টার মধ্যে ১৫০ ঘন্টা কাজ করতে হয়। এখনও অহরহ শিশু শ্রমিকের দেখা মেলে বিভিন্ন কারখানায়। পরিবহন শ্রমিকের কোনো কল্যাণ না হলেও ঢাকা শহরের অনেক গাড়ির মালিক কথিত শ্রমিক নেতারা।’

গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের বহুজাতিক কোম্পানির সিএসআর নির্ভরতা শ্রমিক নেতারা প্রতিহত করতে না পারলে শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোর আন্দোলন সফল হবে না। এনজিও নির্ভরশীল রাজনৈতিক শ্রমিক সংগঠন সত্যিকারের শ্রমিক রাজনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। কিছু প্রশ্ন থাকলেও সাড়ম্বরে মে দিবস পালনে বেশ কিছু প্রাপ্তিও রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএম/জেডটি/এনআই/এপ্রিল ৩০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর