thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

ভারতে জয়জয়কার তেলুগু ছবি ‘বাহুবলী টু’

২০১৭ এপ্রিল ৩০ ২৩:৩২:২৪
ভারতে জয়জয়কার তেলুগু ছবি ‘বাহুবলী টু’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভারতে তেলুগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তৈরি একটি ছবি, ‘বাহুবলী টু : দ্য কনক্লুশন’ মুক্তির তিন দিনের মধ্যে দেশে বক্স অফিসের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এবং বিশ্লেষকরা বলছেন প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই এই ছবি হাজার কোটি রুপিরও বেশি বাণিজ্য করবে।

অনলাইন বা সিনেমা-হলে আগাম টিকিট বিক্রি, সবচেয়ে বেশি স্ক্রিনে মুক্তি - সব দিক থেকেই ভারতে আগেকার সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বাহুবলী-টু।

মুক্তির পর শুধু প্রথম দিনেই ছবিটি সারা বিশ্বে ২১৩ কোটি রুপির ব্যবসা করেছে - যা বলিউডেও অভাবনীয়।

বেশ কয়েকশো বছর আগের এক কাল্পনিক সাম্রাজ্যের গল্প নিয়ে তৈরি এই আঞ্চলিক ছবিটি কীভাবে সারা ভারতে এই অভূতপূর্ব ব্যবসা করছে?

গত বেশ কয়েকদিন ধরে গোটা ভারতে বোধহয় সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত জিনিস ছিল মুক্তির প্রথম উইকএন্ডে বাহুবলী টু-র একটা টিকিট আর সবচেয়ে বেশি কৌতূহল ছিল যে প্রশ্নটাকে ঘিরে, তা হল কাটাপ্পা কেন বাহুবলীকে মারল?

বাহুবলীর প্রথম পর্বের শেষ দৃশ্যে দেখানো হয়েছিল গল্পের একটি চরিত্র কাটাপ্পা নায়ক বাহুবলীকে হত্যা করছে - কিন্তু কেন, তার উত্তর মেলেনি। দুবছর বাদে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই গোটা ভারত এখন ভিড় করেছে বাহুবলী-টু দেখতে।

দর্শকরাও সেই ছবি দেখে মুগ্ধ, হলিউড ধাঁচের বা তার চেয়েও ভাল স্পেশাল এফেক্টসে তাদেরও চোখ ধাঁধিয়েছে।সব চেয়ে বড় কথা, গল্পের মোচড় তাদেরকেও মুগ্ধ করেছে এবং সিনেমা দেখার পর কেউ এটা ফাঁস করতে রাজিও হচ্ছেন না কেন কাটাপ্পা বাহুবলীকে মেরেছিল। কারণ তাতে তো সিনেমার রোমাঞ্চটাই মাটি।

এই যে বাহুবলী-টুকে ঘিরে তিল তিল করে আগ্রহটা দুবছর ধরে তৈরি করা হয়েছে, এটাই ছবিটার সাফল্যের মূল রহস্য বলে মনে করেন অভিনেত্রী ও এমপি রূপা গাঙ্গুলি, যিনি ভারতের নানা প্রান্তের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন।

রূপা গাঙ্গুলি বিবিসিকে বলছিলেন, "সিনেমা শিল্পের এমন একটা ধরন - যাতে বিনোদন থাকে, কখনও নৈতিকতার শিক্ষা থাকে - সঙ্গে একটা স্টোরিলাইন, কখনও নেগেটিভ বা কখনও পজিটিভ। কিন্তু কোনও না কোনওভাবে সফল সিনেমার একটা বিজনেস প্রোপোজিশন থাকতেই হবে, অর্থাৎ কি না যেভাবেই হোক দর্শককে হলে টেনে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।"

"আর সিনেমাও তো নানা ধরনের দর্শকের জন্য তৈরি হয় - কোনওটা মহিলাদের কথা মাথায় রেখে, কোনওটা বাচ্চাদের জন্য। আমার মতে বাহুবলী একটা দারুণ পাবলিসিটি বা প্রচার করতে পেরেছে, যেটা আজকের যুগে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই পাবলিসিটি ভীষণ, ভীষণ ম্যাটার করে", বলছেন তিনি।

কিন্তু এই ব্যাখ্যার সঙ্গে পুরোটা একমত নন বাহুবলী-টুর পরিচালক এস রাজামৌলি। তার ব্যাখ্যা, মানুষ আসলে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে গল্প শুনতে - আর সেটা যখন মহাকাব্যিক পটভূমিতে হয়, তখন তো কথাই নেই।

রাজামৌলি বলছেন, "পুরাণ-ইতিহাস-মহাকাব্যের দেশ ভারতের ডিএনএ-তেই আসলে গল্প বলার একটা সমৃদ্ধ পরম্পরা আছে। ফিল্মনির্মাতা হিসেবে যদি সেই গল্প বলার শৈলীটাকে আমরা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারি, তাহলে সাফল্য না-আসার কোনও কারণ নেই। আমার তো ধারণা, বাহুবলীর পর এরকম পুরাণ-ইতিহাস-লোকগাথা নিয়ে ছবি বানানোর ধূম পড়ে যাবে।"

বাহুবলী-টু আসলে তেলুগু ছবি হলেও হিন্দি, তামিল ও মালয়লামে ডাব করে সারা দেশে মুক্তি পেয়েছে।

কিন্তু আদতে দক্ষিণ ভারতীয় একটা ছবি সারা ভারতে কীভাবে সমাদৃত হচ্ছে? দিল্লি বা মুম্বইতেও কেন বাহুবলী-টুর টিকিটের জন্য হাহাকার পড়ে গেছে?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় তার ব্যাখ্যায় বলছেন, "বলিউড ছবি আসলে একটা কানাগলিতে গিয়ে ঠেকেছিল, ছবির একটা ফর্ম্যাটিং হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাহুবলী ছবিতে 'স্পেক্টাকল'কে একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছে। সিনেমা যে 'স্পেক্টাকুলার' বা দারুণ দর্শনীয় হয়ে উঠেছে, সেটা এখন দর্শকের ভালও লাগছে।"

"দক্ষিণ ভারতে এই স্পেক্টাকল ব্যাপারটা অনেকদিন ধরেই জনপ্রিয়, কিন্তু উত্তর বা পূর্ব ভারতে তা এতদিন অপরিচিত ছিল। সিনেমার যে ন্যারেটিভ বা আর্টিস্টিক ন্যুয়ান্সেসগুলো অনেকদিন ধরে চলছে সেগুলোর ব্যবহার কিন্তু অনেকটা ক্লিশে বা একঘেয়ে হয়ে গেছে - সেই জায়গায় এই নতুন ও বিশাল ভিস্যুয়াল ফ্রেমটা মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।"

"সেই সঙ্গে বাহুবলীর নির্মাতারা খুব সুকৌশলে জুড়ে দিয়েছেন বলদর্পী একটা ভারতের চিত্রকল্প। ভারত এখন আর সাধারণ কোনও দেশ নয়, একটা মেজর পাওয়ার - সেই মনস্তাত্ত্বিক চেতনাটা সূক্ষভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বাহুবলীর গল্পে", বলছিলেন অধ্যাপক মুখোপাধ্যায়।

ফলে বাহুবলী-টু যে ভারতীয় ফিল্মের বক্স অফিসে সব রেকর্ড ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে, তার পেছনে আসলে রয়েছে অনেকগুলো ফ্যাক্টর।

একটি আঞ্চলিক ছবির এই দাপটে বলিউডও এতটাই হতচকিত যে গত শুক্রবার, বাহুবলীর মুক্তির দিনে নজিরবিহীনভাবে মুম্বইয়ের কোনও হিন্দি ছবি পর্যন্ত ভারতে মুক্তি পায়নি!

(দ্য রিপোর্ট/এফএস/এপ্রিল ৩০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর