thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

দুই তরুণীকে মদপানে বাধ্য করেছিল অভিযুক্তরা

‘ধর্ষকদের একজন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে’

২০১৭ মে ০৭ ২২:৫২:৩০
‘ধর্ষকদের একজন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে’

মো. শামীম রিজভী, দ্য রিপোর্ট : রাজধানীর বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে ১১ ঘন্টা অস্ত্রের মুখে রেখে ও জোর করে মদপান করিয়ে দুই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় তিন তরুণসহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা (মামলা নম্বর-৮) করেছেন ওই দুই তরুণী।

মামলার ৫ আসামি হলো—সাফাত আহমেদ (২৬), নাঈম আশরাফ (৩০), সাদমান সাকিফ (২৪), গাড়ি চালক বিল্লাল (২৬) ও সাফাতের দেহরক্ষী (অজ্ঞাতনামা)।

মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী দুই তরুণীর একজন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, তিনি ও তার দুই বান্ধবী ও এক বন্ধুকে বনানীর কে-ব্লকের ২৭ নম্বর রোডের ৪৯ নম্বর দ্য রেইন ট্রি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে অভিযুক্তরা অস্ত্রের মুখে আটকে রেখে মারধর করে ও গালিগালাজ করে। আগে থেকেই ওই হোটেলে দুটি কক্ষ ভাড়া করে রেখেছিলেন অভিযুক্ত ধর্ষকরা। পরে বাদী ও তার অপর এক বান্ধবীকে দুটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে জোর করে মদপান করিয়ে ধর্ষণ করা হয়। রাত থেকে সকালের মধ্যে একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে সাফাত। বাদীর অপর বান্ধবীকেও রাত থেকে সকালের মধ্যে একাধিকবার ধর্ষণ করে নাঈম।

তিনি আরও জানিয়েছেন, সাদমানের সঙ্গে তার দুই বছর ধরে পরিচয়। আনুমানিক দুই সপ্তাহ আগে সাদমানের মাধ্যমেই সাফাতের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সাফাতের জন্মদিনের কথা বলে গত ২৮ মার্চ ভিকটিমদের দাওয়াত দিয়ে বাসা থেকে গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় সাফাতের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী। ঘটনার আগে ভিকটিমদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। তাদের ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন সাফাতের গাড়িচালক।

তিনি বলেছেন, ‘তারা সেখানে নিয়েই আমাদের ফাঁদে ফেলেছে। আমাদের এত বড় ক্ষতি করেছে, আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

বাদীর বান্ধবী অপর ধর্ষিতা তরুণী জানিয়েছেন, তারা বুঝতেই পারেননি সাদনান তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করবেন। কারণ সাদনান তাদের বন্ধু। ওই ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ধর্ষকরা ভিকটিমদের মেরে ফেলার এবং ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন। সাফাত তার দেহরক্ষীকে দিয়ে তাদের পিছুও নিয়েছে বেশ কয়েকদিন। মান-সম্মানের ভয়ে তারা প্রথমে মামলা করতে চাননি। কিন্তু অভিযুক্ত ধর্ষকদের লোকজন ভিকটিমদের বাসা পর্যন্ত উত্যক্ত করা শুরু করে। তারা সামাজিকভাবে হেয় করারও চেষ্টা করে। শেষে তারা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

এই দুই তরুণী জানিয়েছেন, অভিযুক্ত তিন তরুণের পরিবারই বিত্তশালী। আসামী সাফাতের বাবা দিলদার আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিক এবং আসামী সাদমান সাকিফ গুলশানের তেজগাঁও লিংক রোডে রহমান রেগুনাম সেন্টারে পিকাসো রেস্টুরেন্টের মালিকের ছেলে। অভিযুক্ত ধর্ষক সাফাত ও নাঈম ইয়াবা আসক্ত। তারা গুলশান, বনানী ও বারিধারায় বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে গিয়ে এমন কাজ আগেও করেছে। কিন্তু কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলে নি। তারা এর আগেও অনেক তরুণীর সর্বনাশ করে ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দিয়েছে।

জানা যায়, ধর্ষণের শিকার দুই তরুণী বনানী থানায় প্রথমে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে। অনেক অনুনয়-বিনয় করার পর অভিযোগ নিলেও পুলিশ মামলা নেয় নি। পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় অনেক চেষ্টা করার পর শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বনানী থানা মামলা নেয়। সারারাত তাদের থানায় রাখা হয় মেডিক্যাল চেকআপের নাম করে। পরে রবিবার দুপুরে দু’জন নারী পুলিশ সদস্যের প্রহরায় ভিকটিমদের মেডিক্যাল চেকআপের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

এদিকে, দ্য রেইন ট্রি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত আসামিরা হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়েছিল। তবে তাদের সঙ্গে কেউ থাকবে, এমন কিছু তারা হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানায় নি। সেখানে জোরপূর্বক কোনো কিছু ঘটেছে বলেও তাদের জানা নেই। সকালেও কেউ ধর্ষণের অভিযোগ করেন নি। সাধারণত হোটেল কর্তৃপক্ষ কক্ষ ভাড়া দেওয়ার সময় ভিজিটিং কার্ড ও মোবাইল নম্বর রাখে। এ জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষ জানতে পারে যে অভিযুক্ত ধর্ষক সাফাত আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে এবং মিরপুরের বাসিন্দা নাঈম ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার ছেলে।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী দ্য রিপোর্টকে জানিয়েছেন, আইনের চোখে সবাই সমান। দুই তরুণীর অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার দিন তারা সবাই ওই হোটেলে অবস্থান করেছিলেন এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে (ফরেনসিক টেস্ট)। রবিবার (মে ৭) দুপুরে তাদের শারীরিক পরীক্ষা জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়।

ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘দুই ভিকটিমকে আমরা পেয়েছি। ৫ সদস্যদের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তিনটি করে পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষাগুলো হলো- মাইক্রোবায়োলজি, রেডিওলজি ও ডিএনএ। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে পারবো।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জেডটি/মে ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর