thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না : প্রধান বিচারপতি

২০১৭ মে ১০ ২১:০৫:২১
রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না : প্রধান বিচারপতি

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘আমরা ধর্মকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চাই। ধর্মের কোনো রাষ্ট্রীয় সীমানা থাকতে পারে না। ধর্ম সমগ্র মানবতার। তাই রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না।’

বুধবার (১০ মে) ‘বৌদ্ধ ধর্মের আলোকে বিশ্বশান্তি শীর্ষক’ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন। বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে সবুজবাগের বৌদ্ধ বিহারে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘উপস্থিত সকল মানুষের রক্তই লাল তাহলে কেন সংঘাত। আজকে কেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করি। প্রতিটি ধর্মই শান্তির কথা বলে। তবে আমাদের মধ্যে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মের অপব্যাখ্যা করছে। যার ফলে পৃথিবীতে এতো সংঘাত হানাহানির ঘটনা ঘটছে।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি সবাইকে আহবান জানাই আপনারা যার যার ধর্মের বাণী প্রচার করুন। যারা বিপথে গেছে তাদেরকে বুঝান।’

প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। আজকে বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে আমাদের দূর্গা পূজায়ও ছুটি ঘোষণা করা হয়। আমাদের অনুষ্ঠানে যেমন মুসলমানসহ সব ধর্মের মানুষেররা আসে, আমরাও তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাই।’

প্রধান বিচারপতি আরো বলেছেন, ‘ধর্মকে আমরা কোনো সীমার মধ্যে রাখতে চাই না। ধর্ম মানুষের জন্য। রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না।’

এর আগে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘বুদ্ধ দর্শনকে ব্যাখ্যা করলে যে তাত্ত্বিক দিক বা বৈশিষ্ট্য দেখা যায় সংক্ষেপে হলো প্রথমত, কর্মবাদ অর্থাৎ যেমন কর্ম তেমন ফল; যে যেমন কাজ করবে সে তেমন ফল পাবে। দ্বিতীয়ত, কার্যকারণবাদ অর্থাৎ কারণ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। তৃতীয়ত, অনিত্য বা পরিবর্তনবাদ। এর মূল বিষয় হলো স্থিতিশীল বলে জগতে বা এ পৃথিবীতে কোনো কিছু নেই।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘গভীরভাবে ধর্মগুলোকে নিয়ে চিন্তা করলে আমার মনে হয় এগুলোকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। এগুলো যথাযথ তথ্য নির্ভর নয়, বরং মতবাদ মূলক।’

প্রতিটি ধর্ম হিংসা-বিদ্বেষের বিপক্ষে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটি ধর্মের মূল ধর্ম গ্রন্থ সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই এতে মানুষের কল্যাণ, জীবনের সমস্যা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, হিংসা, বিদ্বেষ পরিহার করে চলার কথা বলা হয়েছে। আমরা যদি সারা পৃথিবীর বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার দিকে আলোকপাত করি তাহলে সব জায়গাতে যে দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ, বিগ্রহ এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে পাই তার প্রায় প্রতিটির পেছনেই রয়েছে ধর্মীয় কারণ। আর এ কারণেই আমার মনে হয় বিভিন্ন ধর্মীয় যে মতবাদগুলো সেগুলো বিজ্ঞানের পরিপন্থী।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘আবার দেখা যায় ধর্মের উপর ভিত্তি করেই পৃথিবীতে অনেক মহান ব্যক্তি মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেছেন। পক্ষান্তরে এর বিপরীতে অনেক ধর্মান্ধ অসম্পূর্ণ মনোভাবা ব্যক্তি এবং নিষ্ঠুর প্রকৃতির স্বেচ্ছাচারী শাসকের আবির্ভাবও মানব সমাজ প্রত্যক্ষ করেছে এবং এখনও আবির্ভূত হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত নূহে আলম লেনিন বলেছেন, ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। এটাই আমাদের রাখী বন্ধন। নাম ও আচারের ভিন্নতা থাকতে পারে। আমাদের রক্ত এক।’

নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা বলেছেন, ‘মানুষকে সঠিক কথা বলে ধরে রাখার ক্ষেত্রে ধর্ম এক বিরাট আধ্যাত্মিক শক্তি। আমরা ভিন্ন নামে ডাকলেও এক ও অভিন্ন স্রষ্টা। সমগ্র মানবজাতি একটি পরিবার। এটাকে ধর্ম সমূহ সমৃদ্ধ করেছে।’

বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি শুদ্ধানন্দ মহাথের এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রামকৃঞ্চ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দজী মহারাজসহ চীন, ভারত, শ্র্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের কূটনৈতিক কোরের বিভিন্ন কর্মকর্তারা।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/জেডটি/মে ১০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর