thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

৪৬ বছরেও হয়নি একটি সেতু!

২০১৭ মে ১১ ১২:৩৮:০৪
৪৬ বছরেও হয়নি একটি সেতু!

নীলফামারী প্রতিনিধি : স্বাধীনতার প্রায় চার যুগ পার হলেও হয়নি একটি সেতু। নির্বাচনের আগে এলাকার মানুষকে সেতু নির্মাণে জনপ্রতিনিধিরা আশার ফুলঝুড়ি দিলেও ৪৬ বছরেও হয়নি একটি সেতু। আশার বাণী শুনতে শুনতে কেটে গেছে এতগুলো বছর। ফলে একটি সেতুর কারণে কষ্ট পতে হচ্ছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ১৫ হাজার মানুষকে।

গোলমুন্ডা ইউনিয়নে ধুম নদীর ওপর বাঁশের সাঁকোতে পার হতে হয় এলাকার মানুষকে। অথচ এই নদীর ওপর একটি সেতু হলেই এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হয়। বিভিন্ন কাজে এক গ্রামের মানুষকে অন্য গ্রাম তথা শহরে যেতে এই বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়-এই বাঁশের সাঁকো নির্মিত হয়েছে এলাকাবাসীর নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে। প্রতিবছর স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সবাই মিলে সাহায্য দিয়ে ওই বাঁশের সাঁকো সংস্কার করে। প্রতিদিন মেনাজবাজার, ধুমেরপাড়, মাছহাড়ী, জয়বাংলা, একতাবাজার, ভিতরকুটিসহ ১০ গ্রামের মানুষের হাটবাজারসহ জরুরি প্রয়োজনে বাঁশের সাঁকোটিই একমাত্র পথ। রিকশা-ভ্যান না চলায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সাঁকো পার হতে হয়।

গোলমুণ্ডা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের শ্যামপুর এলাকার আজিজুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘জীবনটায় শ্যাষ হয়া যায়ছে, পুল আর দেখির পানু না। ম্যালা মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি কয়া গ্যালো কামের কাম কিছুই হয়ছে না।’

আজিজুর রহমানের মতো কষ্ট আর আক্ষেপের শেষ নেই গোলমুন্ডা ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের। ‘ধুম’ নদীর ওপর সেতু না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে কোনো রকমে পার হওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ আর কষ্ট যেন বিষিয়ে তোলে এখানকার মানুষদের।

শ্যামপুর এলাকার মশিউর রহমান বলেন, নদীর ওপারে ধান, ভুট্টা, গম, আবাদ হলেও বর্ষাকালে আমরা এপারে নিতে পারি না। কারণ নদী ডিঙিয়ে আসা দুঃসহ ব্যাপার। প্রায় আট কিলোমিটার ঘুরে নদীর ওপারে যেতে হয়।

তিনি আরো জানিয়েছেন, শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে অতিকষ্টে যাতায়াত করা গেলেও প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। সাঁকোর ওপর থেকে পড়ে যায় মোটরসাইকেল আরোহী কিংবা সাইকেল চালক।

জিন্নাতুন নেছা নামে আরো একজন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দেখি আসুছু নদীটির ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকো। এলাও ওরকমই আছে। বিয়ে হয়ে শ্বশুড়বাড়ি গেনু। এ্যালাও ব্রিজ হইল না।’

তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুমে নদীর ওপারে ছাওয়াগুল্যা স্কুলত যাবার পায় না। বাড়িতে থাকে।’

দুর্ভোগ পোহানো শামসুল হক বলেন, ‘নদী পার হয়ে মূল সড়কের পাশে মসজিদ, কবরস্থান, মাদ্রাসা আছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য আছে অস্থায়ী ক্যাম্প কিন্তু বর্ষাকালে ভীষণ কষ্ট হয়া যায়।

রোগীকে কলার ভ্যালা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার করতে হয় নদীর ওপর দিয়্যা। এত কষ্ট নিয়া আর চলিবার মনায় না। অতিদ্রুত নদীর ওপর সেতু হওয়া দরকার।’

সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আরিফুজ্জামান আরিফ বলে, ‘পানির সময় বাঁশের সাঁকো দিয়ে বই ধরি পার হওয়া যায় না। নদীতে পানির স্রোতে বাঁশের সাঁকো ভাসি যায়।’

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসাইন জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, নদীর ওপর সেতু করার ক্ষমতা পরিষদের নেই। সেখানে প্রায় ৬০ ফিট সেতু দরকার। সেতুর জন্য বর্তমানসহ পূর্বের সংসদ সদস্যরাও অবগত ছিলেন কিন্তু এখনো কাজ হচ্ছে না। তবে দ্রুত সেখানে সেতু যাতে হয় সে জন্য তদবির চালানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতরে।

জলঢাকা উপজেলা প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ দ্য রিপোর্টকে জানিয়েছেন, ধুম নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এখনো প্রকল্প অনুমোদন হয়ে আসেনি।

তিনি আরো জানিয়েছেন, প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে আসলে দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। আর সিসি কিংবা পিসি ব্রিজ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/কেএনইউ/এম/মে ১১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর