thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

‘আম্মা চাইতেন না আমি গান করি’

২০১৭ মে ১৪ ১৭:২৮:৩৪
‘আম্মা চাইতেন না আমি গান করি’

বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী দিলরুবা খানের মেয়ে শিমুল খান। সঙ্গীত পরিবারে জন্ম এবং বেড়ে উঠা। কিন্তু শিমুলকে নাকি গান করতে নিষেধ করতেন মা দিলরুবা খান! এমন নানা প্রসঙ্গ নিয়ে শিমুল কথা বলেছেন। বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে এ প্রজন্মের সঙ্গীতশিল্পী শিমুল খান বলেছেন তার সঙ্গীত জীবনে মায়ের প্রভাব ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে।

আপনার গানেরহাতেখড়ি কার কাছে?

শিমুল খান : ছোটবেলায় নানার কাছে গান শিখতাম। কিন্তু গানের প্রতি আমার অবহেলা দেখে আম্মা চাইতেন না আমি গান করি। তার একটাই কথা, যদি গান কর- তবে সিরিয়াসলি করতে হবে। শখের বসে আজ করলাম, কাল ভালো লাগলো না ছেড়ে দিলাম এটা তিনি মেনে নেবেন না। পরে আম্মার কাছেও গান শিখেছি। এখনো আম্মার কথাটি মনে রাখার চেষ্টা করি। গানকে অন্তরে ধারণ করেই গাইবার চেষ্টা করি।

লোক গানের প্রতি আপনার আগ্রহ কেন?

শিমুল খান : আমার আগ্রহ ছিলো আধুনিক গানে। আম্মাকে জন্মের পর থেকে লোক গান গাইতে দেখে এসেছি। তাই যখনই লোক গান করতাম তিনি ভুল ধরতেন। তখন মনে হতো লোক গান গাইবো না, আধুনিক গাইবো। আমার প্রিয় গান হলো- ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’। কেউ গান করতে বললে এটাই গাইতাম। তবে দিলরুবা খানের মেয়ে হিসেবে সবাই আমার কাছ থেকে সব সময় লোক গানই শুনতে চাইতো। আমি এই গানটা গাইতে গেলে তারা বলতো, ‘এটা কি তোমার জাতীয় সঙ্গীত নাকি’?

আপনার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের পর মায়ের প্রতিক্রিয়া কি ছিলো?

শিমুল খান : আমার প্রথম অ্যালবামের ব্যাপারে আম্মা জানতেন না। আমিও বলার সাহস পাচ্ছিলাম না। আম্মা মনে করতেন, অ্যালবাম করার জন্য আমাকে আরো অনেক শিখতে হবে। আমি তো বিষয়টি নিয়ে খুব ভয় পেয়েছিলাম। অন্য সব বিষয়ে কথা বলতে পারি। কিন্তু গানের ব্যাপারে কথা বলতে গেলে ভয় লাগে। গান নিয়ে কোন অবহেলা সহ্য করেন না। আম্মার সঙ্গে গাইতে গেলে, প্রচুর বকা খেতে হয়। পরে আমার প্রথম অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালক পঙ্কজ মামা একদিন আম্মাকে গিয়ে বললেন, ‘আপা আপনার একটা অ্যালবামে গাইতে হবে।’ তারপর প্রথম অ্যালবামেই আম্মা, আমার সঙ্গে গাইতে রাজী হয়েছিলো। আমার সর্বশেষ অ্যালবামের গান শুনে আম্মা বলেছেন, ‘একটু উন্নতি করেছো। তবে এখনো পুরোপুরি আশাবাদী না'।

দিলরুবা খানের মেয়ে নাকি সঙ্গীতশিল্পী শিমুল। কোন পরিচয়টা ভালো লাগে?

শিমুল খান : দিলরুবা খানের মেয়ে আমার জন্য গর্বের পরিচয়। তবে সঙ্গীতশিল্পী শিমুল খান হিসেবেই নিজস্ব ভুবন তৈরি করতে চাই। অনেকেই বলে তুমি তো এখন নিজ পরিচয়ে আলোকিত। তবে আমার ভালো লাগে কেউ যখন কেউ বলে দিলরুবা খানের মেয়ে। ছোটবেলায় বুঝতাম না। এখন বুঝি মানুষ আমার মাকে কতোটা ভালোবাসে! মায়ের কণ্ঠে গাওয়া ‘পাগল মন’, ‘দেখা আরিচার ঘাটে’ গানগুলো এখনো মানুষের মুখে মুখে। দিলরুবা খানের মেয়ে হিসেবে আমি গর্বিত।

এ সময়ের সঙ্গীতচর্চা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

শিমুল খান : সময়ের সাথে সঙ্গীতচর্চাও বদলে যাচ্ছে। এখন গান মানুষ শুধু শুনে না, দেখেও। এখন গানের সঙ্গে মিউজিক ভিডিও প্রকাশ যেন অপরিহার্য হয়ে গেছে। আমি আসলে এর পক্ষপাতী না। আমি বলি আগে শুনুন, শুনে ভালো লাগলে তবেই ভিডিও দেখুন। এখন গানের চর্চাও খুব বেশী হয় না। কয়েকটা গান শিখে স্টেজ মাত করতে পারলেই তাকে শিল্পী বলা হচ্ছে। সঙ্গীতশিল্পী হওয়াটা অনেক কঠিন। ইউটিউব এসে গানের জগৎটাকে আরো ডুবিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ গান না শিখেই দেখি ইউটিউবে গান প্রকাশ করছে। সঙ্গীত, চর্চার বিষয়, প্রতিদিন চর্চা করতে হয়। মাকে দেখেছি প্রার্থনার মতো করে সঙ্গীতচর্চা করেন। আমাদের প্রজন্মের শিল্পীরা সঙ্গীতচর্চায় সময় দেওয়ার চাইতে গান প্রকাশেই বেশী সময় দিচ্ছে।

এবারের মা দিবসে মাকে বিশেষভাবে কোন কথাটা বলতে চাইবেন?

শিমুল খান : (অতি বিনয়ের সাথে বললেন) সব বিষয়ে আম্মার সঙ্গে খোলাখোলি কথা বলতে পারলেও এই কথাটি তাকে কোনদিন সরাসরি বলা হয়নি। সবাই নিজেদের মাকে ভালোবাসে। আমিও আমার মাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। কিন্তু তাকে কখনো সরাসরি বলিনি। এবারের মা দিবসে বলতে চাই, ‘আম্মা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাস ‘। এবার মা দিবসে আম্মাকে সামনে গিয়ে এই কথাটা বলবো।

আপনাকে ধন্যবাদ।

শিমুল খান : আপনাকেও ধন্যবাদ। সবার কাছে অনুরোধ বাংলা গানের সঙ্গে থাকুন।

(দ্য রিপোর্ট/পিএস/মে ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর