thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

জয়পুরহাটে ধানের রোগ নিয়ে বিপাকে কৃষক

২০১৭ মে ১৪ ২২:৪০:১৯
জয়পুরহাটে ধানের রোগ নিয়ে বিপাকে কৃষক

জয়পুহাট প্রতিনিধি : সদর উপজেলার আমদই গ্রামের মোমিন আহম্মেদ বোরো চাষ করেছেন ২০ বিঘা। তার ১০ বিঘা জমিতেই বিএলবি এবং ব্লাস্ট রোগে আক্রমণ করেছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শমত সিনজেনটা কোম্পানির ওষুধ দিয়েছেন কিন্তু কোন কাজ হয়নি। বিঘা প্রতি দুই হাজার টাকার ওষুধ দিয়েও রোগ সারেনি।

যে জমিতে ২০ থেকে ২৫ মণ ধান পাওয়ার কথা সে জমিতে ধান পাচ্ছেন মাত্র ১২ থেকে ১৫ মণ। একদিকে ফলন কম আর খরচ বেশি। সেই সঙ্গে ধানের দাম কমে যাওয়ায় এখন তার মাঝে শুধুই হতাশা। মোমিনের মত জেলার বেশিরভাগ কৃষকের অবস্থা একই।

সদর উপজেলার হিচমি গ্রামের রবিউল ইসলাম, পুরানাপুল তাজপুর গ্রামের আ. বারিক, সেকেন্দার আলী, পাঁচবিবি উপজেলার উঁচাই গ্রামের নুরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, ক্ষেতলাল উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের বাবুল মিয়া, ওসমান আলী, আক্কেলপুর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের আ. হাকিম, সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের আ. মজিদ, হোসেন আলীসহ অনেকেকেই জানিয়েছেন, এ বছর বোরো ধানের খরচ বিগত বছরের তুলনায় বেশি ছিলো। আশা ছিলো খরচ বেশি হলেও ফলন ও দামটা ভালো পাবে কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি হওয়ায় কৃষকরা এখন দিশেহারা।

মৌসুমের শুরুতেই ধানের দাম ৮৫০ টাকা থাকলেও এখন নেমে এসেছে ৭৫০ থেকে ৭২০ টাকা। প্রতিবিঘা জমিতে বোরোর উৎপাদন খরচ প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। আর ধান পাচ্ছেন মাত্র ১৫ থেকে ১৮ মণ যার বিক্রয় মুল্য ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। তার উপর যে জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয়েছে সেখানে ধান আসছে ৫ থেকে ৭ মণ যা খরচের তুলনায় অতিনগন্য।

জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে বিএলবি এবং ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে কৃষকের অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, ‘রোগবালা দমনে কৃষি বিভাগের পরামর্শ মত ওষুধ দিয়েছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। একের পর এক কোম্পানী পরিবর্তন করেও কোন ফল পাইনি। একদিকে কোম্পানীর ওষুধে কাজ হয়নি অন্যদিকে কৃষি কর্মকর্তারাও গরিমসি করেছেন। ধানের রোগ নিয়ে তেমন কোন উদ্যোগই দেখা যায়নি তাদের মধ্যে।’

জয়পুরহাট সদর উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরেজমিনে হিচমি মাঠে জমিতে গিয়ে ধানের রোগ দেখে বলেন, ‘এ বছর শুরু থেকেই বোরো ধানে বিএলবি এবং ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ ছিলো। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী তারা ওষুধ দিয়েছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আর সে কারণে ফলন কিছুটা কম পাচ্ছে কৃষকরা।’

জেলার কয়েকটি পাইকারি ধানের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা আর মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায়।

পুরানাপুল পাইকারী ধান বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, হিচমি বাজারের রায়হান হোসেন, জামালপুর চারমাথার ধান ব্যবসায়ী মশিউর রহমান জানিয়েছেন, তারা ধান কিনতে ভয় পাচ্ছেন কারণ দ্রুত বাজার কমে যাচ্ছে। মোকামে ধান দিয়ে সঠিক দাম পাচ্ছেননা তারা।

এদিকে ধানের দাম কম থাকলেও বাজারে চালের দাম কমেনি। জয়পুরহাটের মাছুয়া বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, বাজারে পর্যাপ্ত ধানের সরবরাহ না থাকায় চালের দাম তেমন কমেনি। বর্তমানে চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি সামছুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, লোকবল সঙ্কটে কৃষক এখনো পুরোপুরি ধান ঘরে তুলতে পারেনি। তাই বাজারে ধানের সরবরাহ কম। আর এ কারণে মোকামে ধানের বাজার ঠিক নাই।

তিনি অভিযোগ করে আরো জানিয়েছেন, মোকামের ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে ধানের বাজার কম দিচ্ছে। বর্তমানে হাসকিং মিল মালিকরা এখনো ধান কিনতে শুরু করেনি। এখন কেবল অটো রাইসমিলগুলো ধান কিনছে। বাজারে পর্যাপ্ত ধানের সরবরাহ আসলে পাইকারি ব্যবসায়ী এবং মিল মালিকরা ধান কিনবে সেক্ষেত্রে ধানের বাজার কিছুটা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কৃষকের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সুধেন্দ্রনাথ রায় দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন কিন্তু কৃষকরা সময়মত সঠিক ডোজ সম্পূর্ণ করেনি। যদি ৮ থেকে ১০ হেক্টর জমিতে রোগ আক্রমণ করে তবে এটা তেমন কোন ফলন বিপর্যয় হবে না। এ বছর জেলায় ৭২ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে যা থেকে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হবে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএনইউ/এপি/মে ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর