thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

বিএনপির ভিশন-২০৩০ : গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোই সিরাজুল আলম খানের!

২০১৭ মে ১৭ ২২:২০:২৩
বিএনপির ভিশন-২০৩০ : গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোই সিরাজুল আলম খানের!

রাজনীতির ‘রহস্যপুরুষ’ খ্যাত সিরাজুল আলম খান দীর্ঘদিন রাজনীতির দৃশ্যপটে অনুপস্থিত। তবে বিএনপির ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনীতি মঞ্চে ফের উচ্চারিত হচ্ছে তার নাম। গত ১০ মে এই ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বলা হচ্ছে, বিএনপির এই ‘ভিশন-২০৩০’র গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো সিরাজুল আলম খানের ১৪ দফা থেকে নেওয়া।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) নেতারা মনে করছেন, বিএনপি যে ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা করেছে এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারা রাজনীতির তাত্ত্বিক পুরুষ সিরাজুল আলম খানের ১৪ দফা থেকে নেওয়া। যা এ দেশের রাজনীতির জন্য শুধু ইতিবাচকই নয়, বরং একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সুবাতাসের সম্ভাবনাকেই মৃদু দোলা দিয়েছে।

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরাজুল আলম খান তার ‘দ্বিতীয় ধারার রাজনীতি’ শীর্ষক বইয়ের মাধ্যমে ১৪টি দফা জাতির সামনে তুলে ধরেন। এই দফাগুলোর ২ নম্বর ধারাতেই ছিল ‘নিম্নকক্ষ’ ও ‘উচ্চকক্ষ’ সমন্বয়ে দেশের জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। অন্যদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও দেশের শাসনতান্ত্রিক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার ‘ভিশন-২০৩০’ এ বলেছেন, ‘সংবিধানের এক-কেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।’

সিরাজুল আলম খানেরও দাবি ছিল এক-কেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন।

সিরাজুল আলম খান তার বইয়ে লিখেছেন, ‘সংসদের নিম্নকক্ষ হবে ৩০০ সদস্য বিশিষ্ট। যা এক-কেন্দ্রিক সংসদের চরিত্রকেই অক্ষুণ্ন রাখে।’ নিম্নকক্ষে রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত এলাকা ভিত্তিক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের থাকার কথাও বলেছেন তিনি। উচ্চ কক্ষ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠনের কথা বলেছেন তিনি।

সিরাজুল আলম খান তার বইয়ের ১২ দফায় বলেছেন, ‘বিচার বিভাগকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে। বিচার বিভাগ পৃথক ও স্বাধীন হবে।’

খালেদা জিয়াও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বলেছেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা হবে।’ এ ছাড়া বর্তমান বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের কথাও বলেছেন খালেদা জিয়া।

সিরাজুল আলম খান তার বইয়ে ১৪ দফায় ‘উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট’র অবকাঠামো তৈরির প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে ‘মেগা সি পোর্ট তৈরি’র কথা বলেছেন। সুপরিকল্পিতভাবে দেশের অভ্যন্তরে ‘সুপার হাইওয়ে’ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কথাও বলেছেন তিনি। জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে মেট্রোরেল ও মনোরেল স্থাপনের কথাও বলেছেন সিরাজুল আলম খান।

খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ এর ২১৯ ধারায় বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকায় বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করে একে একটি রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তোলা হবে। গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করে রাজধানী ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে সুপার হাইওয়ে দ্বারা সংযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’

সিরাজুল আলম খান তার ১৩ দফায় বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, ভারত (বিহার, উড়িষ্যা, পশ্চিম বাংলা, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মনিপুর, অরুণাচল, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড), মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চল ও চীনের কুনমিং প্রদেশ নিয়ে উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠনের কথা বলেছেন।

খালেদা জিয়াও তার ‘ভিশন-২০৩০’ এর ২২৮ ধারায় এশিয়ান হাইওয়ে ও ঢাকা-কুনমিং রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন।

দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের দাবির শুরুর প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. ফজলুল হালিম চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, ঢাবির শিক্ষক ড. ওয়াজেদের উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে যুব পরিষদের আলোচনা সভায় আমিই প্রথম দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা উত্থাপন করি। আমি যুব পরিষদের তখন মহাসচিব ছিলাম। সিরাজুল আলম খান সে সময় আমেরিকা ছিলেন। তিনি সেখান থেকে আমার এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। ১৯৯৪ সালে জাসদ প্রথমবারের মতো আমাদের দাবি মেনে নিয়ে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের দাবি উত্থাপন করে । জাসদের দাবি ছিল, ৫০০ আসনের সংসদের ৩০০ আসন হবে নিম্নকক্ষ। ২০০ আসন থাকবে পেশাজীবীদের। ১৯৯৬ সালে বিভক্ত জাসদের আ স ম আব্দুর রব ৫০০ আসনের পার্লামেন্ট অথবা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের দাবি জানান। ১৯৯৭ সালে ঐক্যবদ্ধ জাসদ আবারও ৫০০ আসনের সংসদ অন্যথায় দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের দাবি জানায়। ২০০২ সালে হাসানুল হক ইনুরা জাসদ থেকে বেরিয়ে গেলে তারা আর এই দাবি কখনো উত্থাপন করেনি। আমরা এই দাবিতে এখনও অটল রয়েছি।’

সিরাজুল আলম খানের প্রস্তাবনার সাথে বিএনপির ‘ভিশন-২০৩০’ মিলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ‘ভিশন-২০৩০’ প্রণয়নের অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘কারও প্রস্তাবনার সাথে মিলে যাওয়া তো অন্যায় কিছু না। দ্বিধাবিভক্ত জাতি কখনো উন্নতি লাভ করতে পারে না। জাতি দ্বিধাবিভক্ত থাকলে সেই জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত আসে। বিএনপি তো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। বিএনপি পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চায়। তাই দেশের জন্য ভালো কিছু অনেকের সাথে মিলে যাবে সেটাই তো হওয়া উচিত।’

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেছেন, ‘আমরা ২৫৬টি প্রস্তাবনা দিয়েছি । এগুলোর সবকিছুই যে জনগণ ও দেশের রাজনীতিবিদদের মনপুত হবে তা নয়। কোনো একটি বিষয়ে কারও সংশোধন করার দাবি থাকলে তারা চিঠি বা পত্রিকার মাধ্যমেও আমাদের জানাতে পারে। আমরাও আলোচনা করব। আমরা কি করতে চাই, দেশবাসীকে আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে কেমন বাংলাদেশ উপহার দিতে চাই, এরই একটি রূপকল্প ঘোষণা করেছি। এখানে আমরা জাতীয় ঐক্যের সূচনা করতে চাই।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনকারী একটি দলের শীর্ষনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘বিএনপি একটি বৃহত্তর ঐক্য করতে চায়। আসলে সেটা হতে হতে হয়তো আগামী বছর লেগে যেতে পারে। কেননা, বেশি আগে নির্বাচন বা আন্দোলন কেন্দ্রিক জোট হলে সরকার নানান ধরনের ষড়যন্ত্র করে। জোটে ভাঙন ধরানোর চেষ্টাও থাকে। এ ছাড়া বিএনপির বর্তমান জোটের কিছু কিছু শরিকের আপত্তি থাকে। তাই সময় হলেই বিএনপির বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে প্রচেষ্টা হয়তো দৃশ্যপটে আসবে।’

(দ্য রিপোর্ট/সাআ/জেডটি/এনআই/মে ১৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর