thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ 24, ৫ চৈত্র ১৪৩০,  ৯ রমজান 1445

ঢাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর মামলায় পরিচালক-চিকিৎসকসহ আসামী ৯

ঘটনার পরদিন তদন্ত কমিটি করবে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

২০১৭ মে ১৮ ২৩:০১:৫৫
ঘটনার পরদিন তদন্ত কমিটি করবে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

মো. শামীম রিজভী, দ্য রিপোর্ট : রাজধানীর ধানমণ্ডির গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফিয়া আক্তার চৈতীর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঢাবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. আমজাদ আলী বাদী হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালকসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বাদী হয়ে এক পরিচালক ও আট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেছেন।

এদিকে ভুল চিকিৎসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এজন্য শুক্রবার ঘোষণা করা হবে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

চৈতী ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ঢাবি শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় এবং অভিযুক্ত চিকিৎসককে ধানমণ্ডি থানায় নিয়ে যায়।

চৈতীর চাচাতো ভাই মো. আসাদুজ্জামান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বুধবার জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আফিয়া। কিন্তু তাকে ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে বলে চিকিৎসা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মধ্যরাতে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তাকে কেমোথেরাপি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যে কারণে বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বিকেলে তার মৃত্যু হয়েছে। পরে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় যে, তার ডেঙ্গু হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বুধবার আফিয়ার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে রক্তে ডেঙ্গুর উপস্থিতি ছিল না। ওই দিনই অন্য এক রিপোর্টে ‘অ্যাকিউট মায়োব্লাস্টিক লিউকোমিয়া’ বা ব্লাড ক্যান্সারের কথা উল্লেখ ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরেই চৈতী মারা গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিকেলে জানায়। মৃত্যুর সংবাদ জানাজানি হলে তার সহপাঠীরা হাসপাতালে এসে অভিযুক্ত চিকিৎসককে থানায় নিয়ে যায়। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে।

চৈতীর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাকে দাফন করা হবে বলেও জানান আসাদুজ্জামান।

আফিয়া আজিমপুর কবরস্থান সংলগ্ন সরকারী আবাসিক এলাকায় মেস বাসায় থাকতেন। আফিয়া সুফিয়া কামাল হলে সিট পেয়েছেন। গতকাল তার হলের ফি সংক্রান্ত টাকা জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই তার সব আশা শেষ হয়ে গেল। তার রুমমেটরা জানান, কয়েকদিন ধরে আফিয়া জ্বরে ভুগছিল। বুধবার রাতে জ্বর বাড়লে তাকে গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা প্রথমে ক্যানসার হয়েছে এবং ক্যানসারের শেষ অবস্থায় রয়েছে বলে তাদের জানায়। সেই হিসেবে তাকে ক্যানসারের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু সকালে অবস্থা আরও বেগতিক হলে তাকে কেবিন থেকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। তখন চিকিৎসকরা জানায় যে- তার ক্যানসার হয়নি, ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। এ সময় রক্ত লাগবে বলে সহপাঠীদের জানানো হয়। পরে আফিয়ার কয়েকজন সহপাঠী রক্ত দেওয়ার জন্য হাসপাতালে আসেন। কিন্তু তাদের মধ্যে দুয়েকজনের কাছ থেকে রক্ত নেওয়া হলেও বাকীদের রক্ত পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেও তা আর নেওয়া হয়নি।

চিকিৎসকরা প্রথমে ক্যানসার ও পরে ডেঙ্গু জ্বরের ওষুধ প্রয়োগ করে আফিয়াকে হত্যা করেছে বলে সহপাঠী ও স্বজনরা অভিযোগ করেন এবং তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের শাস্তির দাবি করেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার (এসি, ধানমণ্ডি জোন) আব্দুল্লাহেল কাফী জানান, ওই ছাত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালে ছুটে আসে। পরে ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ভাংচুর চালাতে গেলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে এক পরিচালক ও এক চিকিৎসককে গ্রেফতার করেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এম আমজাদ আলী বাদী হয়ে এক পরিচালক ও আট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা করছেন।

ভুল চিকিৎসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করেছেন সেন্ট্রাল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট অধ্যাপক শেখ এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, রোগী ভর্তির সময় তার রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট ছিল মাত্র ১৬ হাজার। এ অবস্থায় কোনও রোগীকে ওয়ার্ডে রাখাটাই ছিল গাফিলতি।

হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জন মতিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনা তদন্তে শুক্রবার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ দ্য রিপোর্টকে জানান, এ ঘটনায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। সেটি মামলায় রূপান্তর হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।

এ বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর আমজাদ আলী জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। অবহেলার দায়ে এক পরিচালক ও বিভিন্ন সময়ে ওই ছাত্রীকে চিকিৎসা দেওয়া আট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে একটি গাড়িতে করে ওই ছাত্রীর লাশ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। অন্য একটি গাড়িতে তার সহপাঠীরাও যাবেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/কেআই/এনআই/মে ১৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর