thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

চাল রফতানির সিদ্ধান্ত ভুল : আমিনুল হক

২০১৭ মে ২১ ১৭:৫৮:৪৯
চাল রফতানির সিদ্ধান্ত ভুল : আমিনুল হক

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বেসরকারি সংগঠন ইক্যুইটিবিডি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আমিনুল হক বলেছেন, বাংলাদেশের চাল রফতানির সিদ্ধান্ত ভয়ঙ্কর ভুল। রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও আইএমএফ’র চাপে ভর্তুকি হ্রাস খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আত্মঘাতী’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। জাতীয়-বৈশিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৃষিতে মোট বাজেটের ২০ ভাগ বরাদ্দের দাবিতে কৃষক ও আদিবাসীদের ১৪টি সংগঠন যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।

সংগঠনগুলো হচ্ছে; উপকুলীয় কৃষক সংস্থা, বাংলাদেশ মৎস্য শ্রমিক জোট, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন(জাই), বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতি, বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় নারী কৃষক সংস্থা, বাংলাদেশ কিষাণী সভা, বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতি, লেবার রিসোর্স সেন্টার, নলছিড়া পানি উন্নয়ন সমিতি, দিঘন সিআইজি, কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রী ও কোস্ট ট্রাস্ট।

সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, উদ্বৃত্ত উৎপাদন না হলেও বাংলাদেশের চাল রফতানির সিদ্ধান্ত ভয়ঙ্কর ভুল। চালকে রফতানি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করলে সরকারকে ধান চাষের ক্ষেত্রে সব ভর্তুকি বা সহায়তা বন্ধ করে দিতে হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে কৃষি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের ভর্তুকি বন্ধ করতে হবে।

আয়োজক সংগঠনগুলোর পক্ষে লিখিত অবস্থানপত্র তুলে ধরে কোস্ট ট্রাস্ট (কোস্টাল এসোসিয়েশন ফর সোশাল ট্রান্সফরমেশন ট্রাস্ট) এর সহকারী পরিচালক মো. মজিবুল হক মনির বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে কৃষিতে ভর্তুকি কমানো হবে আত্মঘাতী।

ফাঁদ পাতছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা : তাদের পরামর্শে কৃষিতে ভর্তুকি কমানো হবে আত্মঘাতী এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নাইরোবি চুক্তি বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে ধনী দেশগুলোর চরম এক চালাকি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ধনী দেশগুলো ২০২৩ সালের মধ্যে কৃষি পণ্য রফতানি ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করবে। স্বল্পোন্নত দেশেগুলোর জন্য এই সময়সীমা ২০৩০ সাল। এই নিয়ম প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং দুগ্ধ শিল্পের জন্য প্রযোজ্য হবে না। তার মানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে এখনও অনেক পিছিয়ে। তাই বাংলাদেশ এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারবে না। অথচ কৃষি ক্ষেত্রে দরকারি ভর্তুকি কমিয়ে দিতে হচ্ছে। আগামী বাজেটে এই আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষির ভর্তুকি কমানোর মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

জিডিপিতে কৃষির অবদান ও শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ কমছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দেশের প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভর করে। মোট শ্রম শক্তির প্রায় ৪৫ ভাগ নিয়োজিত এই খাতে। কিন্তু কৃষির প্রবৃদ্ধির হার নিয়মিতভাবেই নিম্নমুখী। ২০১০ সালে কৃষির প্রবৃদ্ধির হার ছিল শতকরা ৬.৫ভাগ, ২০১৬ সালে এসে সেটা দাঁড়িয়েছে ২.৬ ভাগে।

মনির বলেন, নানা কারণে অকৃষি খাতে কৃষি জমির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বছর শতকরা ১ ভাগ হারে কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। দ্রুত নগরায়ন ইত্যাদি নানা কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ভীষণ হুমকির মুখে পড়বে। এই অবস্থা মোকাবেলায় কৃষির জন্য বরাদ্দ যেখানে বাড়ানোর দরকার, সেখানে প্রায় প্রতিবছর আনুপাতিক হারে কৃষির জন্য বরাদ্দ কমছে। বাজেটের আকার যে হারে বাড়ছে, সেই হারে বাড়ছে না কৃষির জন্য বরাদ্দ। ২০১৬-১৭ সালের বাজেটের আকার ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় বাড়ে প্রায় শতকরা ২৯ ভাগ। অথচ কৃষির জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয় মাত্র ১৮.৫৪ ভাগ। এর আগের অর্থবছরে কৃষিখাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৪.২১ভাগ, অথচ বর্তমান অর্থবছরের জন্য এখাতে বরাদ্দ মাত্র ৪.০১ভাগ। মোট বাজেটের আকার বাড়লেও কৃষির জন্য বরাদ্দ কমে গেছে ০.১৯ভাগ।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, আইএমএফ বা এ ধরনের গোষ্ঠীর চাপে কৃষি ভর্তুকি কমানো হলে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার স্বপ্ন হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আসন্ন বাজেটে বিবেচনার জন্য ৭টি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে মনির বলেন, বাজেটের আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কৃষির জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বাজেটে কৃষির জন্য ভর্তুকি বাড়াতে হবে ও ভর্তুকির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে মূল্য কমিশন গঠন করতে হবে। ক্ষতিকর বিদেশি বীজ আমদানি বন্ধ, বিটি বেগুন, গোল্ডেন রাইসসহ বিতর্কিত জিএমও কৃষি প্রবর্তন বন্ধ করতে হবে। বীজ সার্বভৌমত্ব অর্জনে বিএডিসিকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। পাটের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। কৃষি জমির অকৃষিখাতে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কৃষক বাঁচাতে নদী ভাঙন প্রতিরোধ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম, কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি সাজেদা বেগম এবং বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন (জাই) এর সভাপতি জায়েদ ইকবাল খান। সঞ্চালনা করেন কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ।

বদরুল আলম বলেন, গত বেশ কয়েক বছর ধরেই কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। প্রান্তিক কৃষকের কষ্টের সুফল ভোগ করছে কতিপয় মধ্যস্বত্বভোগী। কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আমরা আলাদা ন্যায্য মূল্য কমিশন চাই। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান চাল সংগ্রহের সময়ও পরিবর্তন করতে হবে।

জায়েদ ইকবাল খান বলেন, আমাদের কৃষিকে বাঁচাতে হলে কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ নদী ভাঙনের কারণে সর্বস্ব হারাচ্ছে। নদী ভাঙন প্রতিরোধে উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএম/এপি/এনআই/মে ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর