thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

ডিসেম্বরের মধ্যেই নিজস্ব ভবনে না গেলে বন্ধের হুমকি

সৌদিতে চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশি স্কুল নির্মাণ প্রকল্প

২০১৭ মে ২১ ২২:৩২:৩৯
সৌদিতে চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশি স্কুল নির্মাণ প্রকল্প

সৌদি আরবে বাংলাদেশি নয়টি স্কুল নির্মাণ প্রকল্প চার ধরনের চ্যালেঞ্জে মুখে পড়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে-সৌদি আরবে জমি ক্রয়ে আইনগত জটিলতা, জমির উচ্চ মূল্য, শহরের কেন্দ্র স্থলে জমির দুষ্প্রাপ্য এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের ধরন।

এ ছাড়াও সৌদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বর্তমানে ভাড়া করা বাড়িতে পরিচালিত স্কুলগুলো নিজস্ব ভবনে স্থানান্তররের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নিজস্ব ভবনে না নেওয়া হলে এসব স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নিজস্ব ভবন তৈরির উদ্যোগ নিলেও নিজস্ব অর্থায়নে নাকি ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থে তা বাস্তবায়ন করা হবে সেই বিষয়েও রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতা। সস্প্রতি প্রকাশিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার কার্যবিববরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে, বিদ্যমান স্কুলগুলোর অবস্থা পরিদর্শনের জন্য তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব সফর করেছে। প্রতিনিধি দল সফর শেষে তাদের তৈরি করা প্রতিবেদনে চারটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেছে।

নয়টি স্কুলের মধ্যে সাতটি কমিউিনিটি স্কুল পরিচালিত হচ্ছে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দুতাবাসের তত্ত্বাবধানে আর দুটি রয়েছে প্রাইভেট স্কুল। সেক্ষেত্রে প্রাইভেট স্কুলের জমি ও অবকাঠামোর বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য মো. নজরুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘এই প্রকল্পের এখনও অনেক কাজ বাকি। তাই নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে। নতুন করে প্রস্তাব আসলে আবারও প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করা হবে। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৌদি আরবে প্রায় ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন বাংলাদেশি বসবাস করে। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ প্রবাসী বসবাস করেন পরিবারসহ। যাদের সন্তানের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এদের পড়াশুনার জন্য সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে ৯টি স্কুল রয়েছে। এগুলো রিয়াদ, জেদ্দা, দাম্মাম, মক্কা, মদিনা, আবুক ও বুরাইদাতে অবস্থিত। সৌদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব স্কুলকে ভাড়া বাসা থেকে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর করা না হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে। বাচ্চাদের পড়া লেখার সুযোগ না থাকলে পেশাদার ও দক্ষ শ্রমজীবীরা সৌদি আরবে যেতে আগ্রহী হবেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে ৯টি স্কুল ও কলেজ ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এর মোট ব্যয় ধরা হয় ৬৩৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগে অনুষ্ঠিত সভায় জানানো হয়, প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি তহবিলের অর্থে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের পাঠানো এক চিঠিতে প্রকল্পের অর্থায়নে আইডিবির সহায়তা পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে আইডিবির সঙ্গে যোগাযোগর সুপারিশ করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সভায় জানান, ইআরডির মাধ্যমে যোগাযোগ করা না হলেও সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে আইডিবির সঙ্গে মৌখিক যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।

কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানানো হয়, আইডিবির অর্থ সহায়তা পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহজতর হবে। আইডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করে আইডিবি অর্থায়নের সম্মতি না দিলে সরকারি অর্থে দীর্ঘমেযাদী ঋণের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পের অর্থায়ন ও টিউশন ফি বাবদ প্রাপ্ত অর্থে ঋণের অংশ পরিশোধ করা হবে বলে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের প্রশ্ন

প্রকল্পে প্রস্তাবিত বিভিন্ন পিইসি নিয়ে সভায় প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পা কমিশন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-জমি ক্রয় বাবদ ১২০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং পূর্ত নির্মাণ বাবদ ৪৫০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে, যার যথাযথভিত্তি নেই বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।

এ ছাড়া প্রকল্পের ভৌত কাজ ও কনসালটেন্সি সেবা সংগ্রহের প্রক্রিয়া কি হবে তা স্পষ্ট নয়। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় ৩১টি মোটরযান ক্রয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ স্কুলগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলমান রয়েছে এবং বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীরা যাতায়াত করছে। এমতাবস্তায় নতুন করে ৩১টি মোটরযান ক্রয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সৌদি আরবে বিদ্যমান নয়টি স্কুলের জন্য জমি ক্রয় ও ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ২টি বেসরকারি স্কুলকে কিভাবে সরকারি ভবনের স্থানান্তর করা হবে তা স্পষ্ট নয়। বিষয়টি স্পষ্ট করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এস/জেডটি/এনআই/মে ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর