thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

শরীয়তপুরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভোগান্তিতে মানুষ

২০১৭ মে ২৩ ১৪:৩৭:১৭
শরীয়তপুরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভোগান্তিতে মানুষ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের ছয়টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ ও ওজোপাডিকো বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

ছয়টি উপজেলার সর্বত্রই দিন দিন পল্লী বিদ্যুৎসেবার মান নিম্ন থেকে নিম্নতর হয়ে উঠেছে। সারা দিনই প্রায় বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গ্রাহকদের পোহাতে হয় সীমাহীন ভোগান্তি। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পর বিদ্যুৎ যায় আর আসে, এমনিভাবে চলে সারা দিন-রাত। দিনে গড়ে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। ফলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন গ্রাহকরা। এ ছাড়া আকাশে মেঘ দেখলেই অথবা সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিটার না দেখে বিল করারও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বারবার ফোন করেও তাদের সঙ্গে কথা বলা যায় না। কখনো ভুল করে কোনো গ্রাহকের ফোন রিসিভি করলেও তাদের দুর্ব্যবহারে নাজেহাল হতে হচ্ছে গ্রাহকদের। ফলে জেলার ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা গুলোর উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি। এতে করে গ্রাহকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

শরীয়তপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলার ছয়টি উপজেলায় এক লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৮ জন মিটার গ্রাহকের মাধ্যমে প্রায় আট লক্ষাধিক লোক পল্লীবিদ্যুতের আওতাধীন রয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক এক লাখ ৪০ হাজার, ৯৩৪টি, বাণিজ্যিক ১৩ হাজার ৬১৫টি, সেচ সুবিধার জন্য ৯০৫টি, শিল্পকারখানার জন্য ৬৫১টি ও অন্যান্য দুই হাজার ৩৭৩টি মিটার সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিদিন এ জেলায় গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানো হলেও বাড়েনি সেবার মান। বরং বেড়েছে গ্রাহকদের ভোগান্তি। গ্রাহকরা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের এ বেহাল অবস্থার কারণে বিভিন্ন পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। একই অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে বর্তমান অনার্স ও মাস্টারস পরীক্ষার্থীরাও। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ না থাকার কারণে পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আলোর অভাবে পড়ার টেবিলে বসতে পারছে না। সেই সঙ্গে গ্রীষ্মের সীমাহীন গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে ছোট ছোট শিশু বৃদ্ধ ও স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রছাত্রীরা।

দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমতো পাঠ গ্রহণ করতে পারছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় দৈনন্দিন কাজকর্মের অফিস আদালতে সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকদের ও কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুৎসেবার এমন অসহনীয় অবস্থার মধ্যেও গ্রাহকদের মাত্রারিক্ত টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে ভৌতিক বিলের ঝামেলা তো আছেই।

বিদ্যুতের এ বেহাল অবস্থার জন্য জেলার ক্ষুদ্র শিল্পকারখানাগুলোর উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়াসহ স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও শিশুদের অসহনীয় যন্ত্রণাভোগ করতে হচ্ছে। বিনষ্ট হচ্ছে গ্রাম অঞ্চলের অনেক পরিবারের ফ্রিজে থাকা মাছ-মাংসসহ হরেক রকমের তরিতরকারি ও খাদ্যসামগ্রী। বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফ্রিজ, টিভিসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিকস যন্ত্রপাতি। বিদ্যুতের এ বিভ্রাট দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জেনে ও না জানার ভান করছেন।

এ ছাড়া প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখে বিল করার নিয়ম থাকলেও তা না করে অফিসে অথবা বাসায় বসেই বিল করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছে অনেক গ্রাহক। গ্রাহকরা বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে অভিযোগ কেন্দ্রে জানানোর জন্য বারবার ফোন করেও তাদেরকে পায় না।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরের একাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলেন, প্রতিদিন সকালে, দুপুরে, বিকেলে, সন্ধ্যা এবং রাতের শেষ ভাগে ৩-৪ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকায় ফ্রিজসহ বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় ট্রান্সফরমার চুরি এবং চোর-ডাকাতের আতঙ্কে থাকতে হয়। দিনের বেলায় বিভিন্ন সময় বিদ্যুতের বিভিন্ন ত্রুটির অজুহাতে ৫-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। সামান্য সময় বিদ্যুৎ থাকলেও ভোল্টেজের পরিমাণ খুবই কম থাকে। দিনের বেলায় একাধিক বার লোডশেডিং থাকায় এ এলাকার বিভিন্ন অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারসহ মূল্যবান ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছে তারা।

সখিপুরে থানার কনফেকশনারী ব্যবসায়ী ইয়াজালাল সরদার বলেন, ‘বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় আইসক্রিম গলে যায়। দই, কোমল পানীয় নষ্ট হয়ে আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

সখিপুর বাজারের ফার্মেসি দোকানদার আলী হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় গরমের কারণে রোগীদের ভালোমতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। শ্বাসকষ্টের রোগীদের গ্যাস দিতে পারি না বেশি গরমে ওষুধের ক্ষতি হচ্ছে।’

নড়িয়া উপজেলার পাচক এলাকার মিরাজ খান বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুতের মিটার রিডাররা বাড়িতে না গিয়ে এবং মিটার না দেখেই তাদের বাসায় বা অফিসে বসে মনগড়া বিল করে দেয়। এতে আমরা গ্রাহকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

বিঝারী গ্রামের নাছির আহম্মেদ আলী বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেশির ভাগ সময় থাকে না। ঝড় হওয়ার দরকার নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জানানোর জন্য ফোন করে অস্থির হয়ে গেলেও তারা ফোন ধরে না। একটু বেশি গরম পড়লে শুরু হয় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘মাদারীপুর থেকে ৩৩ কেভি একটি মাত্র লাইন হওয়ায় পিক আওয়ারে ২৪ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। মাদারীপুর থেকে আর একটি লাইন করা হচ্ছে, আগামী রমজানের আগে সেটির কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কিছুটা কমে আসবে। গ্রিড নির্মাণকাজ চলছে। গ্রিড নির্মাণ শেষ হলে শরীয়তপুরে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা থাকবে না। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রাহকদের সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করলে উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে।’

শরীয়তপুর ওজোপাডিকো নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ মিত্র বলেন, ‘আশুগঞ্জ টাওয়ার ভেঙে পড়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। ইতোমধ্যে ভোলায় আংশিক কাজ চালু হয়েছে। রমজানের আগেই ভেড়ামারা ও ফরিদপুর চালু হলে এ সমস্যা সমাধান হবে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।’

(দ্য রিপোর্ট/একেএ/এম/মে ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর