thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

সরকারকে আপিল বিভাগ

সুপ্রিম কোর্টকেও কব্জায় নিতে চাচ্ছেন?

২০১৭ মে ২৩ ২৩:৩৮:২৭
সুপ্রিম কোর্টকেও কব্জায় নিতে চাচ্ছেন?

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, অধস্তন বিচার বিভাগ কবজা করে নিয়ে নিচ্ছেন। এখন চাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ে নিতে? মঙ্গলবার (২৩ মে) ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানিকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পঞ্চম দিনের মতো আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। সকাল ৯টায় শুনানি শুরু হয়ে বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত পূর্ণ কার্যদিবস এই মামলারই শুনানি হয়। পরে আদালত দিনের শুনানি মূলতবি করেন।

শুনানিতে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চান, ১১৬-এর বিষয়ে আমাদের অভিমত কি ছিল? আপনি তো স্বাধীন বিচার বিভাগ চান।

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অবশ্যই চাই। প্রধান বিচারপতি বলেন, তাহলে অধস্তন বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের হাতে থাকলে কি করে হবে? ৮০ ভাগ বিচারক অধস্তন আদালতে। ওখানে কার্যত সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বললে একথাও উঠবে। অধস্তন আদালত পঙ্গু হয়ে গেছে। একারণে বলতে বাধ্য হচ্ছি।

সংসদের কাছে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের বিষয়টি সংসদে নিয়ে গেলেন। তাহলে আর কি থাকলো?

এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি প্রধান বিচারপতি হিসেবে যা বলি তা বিচার বিভাগের জন্যই বলি। আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচারকদের বেতন বেড়েছে। বেতন বাড়লেই কী বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়ে যায়? আপনাদেরও (মন্ত্রীদের) তো বেতন বেড়েছে। আপনাদেরটা বেড়েছে একবছর আগে। আমাদের একবছর পর।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই বিধানটা (সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল) তো সামরিক শাসনামলে আনা হয়েছে।

জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা সামরিক আইনের কথা বলছেন। এখনও ১৯৮২ সালের আইন রয়ে গেছে। আমরা বিচারকরা চিন্তাভাবনা করি, রাষ্ট্রের কাজের ব্যাঘাত না ঘটে। বিচার বিভাগ সব সময় অন্যায় আইনগুলোকে সহ্য করে যাচ্ছি।

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান ছিল।

জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, এখন ওই সময় থেকে আর্থ-সামাজিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৭২ এর চিন্তা-চেতনা থেকে ২০১৭ সালের চিন্তা চেতনা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পেছনে ফেরা নয়, সামনের দিকে তাকাতে হবে। সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানও পরিবর্তন হবে।

শুনানির শেষ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হাইকোর্টের রায়ে একজন বিচারপতি সংসদ সদস্যদের ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড থাকার কথা বলেছেন। এই বক্তব্য সত্য না হলে তাকে অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো উচিত।

এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন না থাকলেও রাষ্ট্রপতি কি একজন বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারেন?

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা নেই। আইনও নেই। আইন না থাকলেও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজন বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারেন।

অ্যাটর্নি জেনারেলের এ বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা কি বললেন? আইন না থাকলেও রাষ্ট্রপতি একজন বিচারপতিকে সরিয়ে দেবেন? কত হাজার বছর পিছনে নিয়ে যাচ্ছেন? বিচার বিভাগকে কি মনে করছেন?

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা আমার অভিমত। আপনারা এ বিষয়ে রায়ে বলে দিতে পারেন।

এরপর বেলা সোয়া একটার দিকে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে অপরাপর বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এপি/মে ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর