thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

নাটোরে একটি পরিবারকে একঘরে করার অভিযোগ

২০১৭ মে ২৪ ২৩:১২:৪৭
নাটোরে একটি পরিবারকে একঘরে করার অভিযোগ

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের সিংড়ায় গ্রাম প্রধানদের অমানবিকতার শিকার হয়েছে একটি পরিবার। গত ১৭ মে থেকে উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের তেলীগ্রামে রমজান আলী (৭০) পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়। শালিশে উপস্থিত না হওয়া ও গ্রাম প্রধানদের নিয়ে কটুক্তি করায় রমজান আলীর পরিবারকে এই শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি তার দিনমজুর ছেলেকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

মাতব্বরদেও নির্দেশ মোতাবেক ওই পরিবারের সাথে কথাবার্তা বলা, চলাফেরাসহ সকল প্রকার লেনদেন থেকে বিরত রয়েছে গ্রামের মানুষরা। এছাড়াও যারা ওই পরিবারের সাথে লেনদেন বা সম্পর্ক রাখবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে লোক মারফত বাড়ি বাড়ি ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে এখনো উপজেলা প্রশাসন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অবগত নয়। ভুক্তভোগী পরিবার এ বিষয়ে মোকাম নাটোরের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আঃ সাত্তার, রফিকুল মোল্লা, খলিল মোল্লা, মজিবর রহমান, ফরহাদ আলী, কেতাব আলী, শফির উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে।

সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে ভুক্তভোগী রমজান আলীর সাথে দেখা করলে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘সম্প্রতি আব্দুস সাত্তার নামে এক গ্রাম্য প্রধানের সাথে ছোট্ট বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তারপর তা নিয়ে তিনি নাকে একটি শালিশী বৈঠক ডাকেন, যা আমি জানতাম না। পরবর্তীতে শালিশী বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ার অজুহাতে আমার পরিবারকে একঘরে করা হয়। তাদের চাপে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেকেও ধানের গোডাউনের কাজ থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয় গোডাউনের মালিক।’

রমজান আলীর ছেলে জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ ভ্যান চালক। ভ্যান চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় একটি ধানের গোডাউনে কাজ করতাম। কয়েকটি সমিতি থেকে ঋণ নেওয়া আছে। কাজ করেই ঋণ পরিশোধ করতে হয়। বর্তমানে কাজ না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।’

ধান ব্যবসায়ী স্থানীয় হুমায়ন কবির বলেন, সামাজিকভাবে চাপের কারণে তাবোদ দিতে হয়েছে। মাতব্বররা তাদের বাদ দিতে চাপ সৃষ্টি করেছেন।

তেলীগ্রাম, বামনহাট ও বক্তারপুর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি ওই পরিবারের সাথে কোন প্রকার লেনদেন বা সম্পর্ক রাখলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে লোক দিয়ে বাড়ি বাড়ি বলানোর বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন।

গ্রাম প্রধান আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা তাকে একঘরে করিনি। তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়েছে। গ্রামে প্রায় ৩০০টি পরিবার রয়েছে। তারা সমাজ মানে না। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে সবাই একজোট।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি এক মহিলার সাথে দুর্ব্যবহার করায় রমজানের ছেলে জহুরুলের বিরুদ্ধে ঐ মহিলা অভিযোগ দেয়। কিন্তু এ বিষয়ে জহুরুলকে বারবার ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হলে সে নতি স্বীকার করেনি। বরং তারা গ্রাম প্রধান সম্পর্কে কটুক্তি করেছে। যার কারণে সামাজিকভাবে তাদের সাথে সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে অভিযোগকারী মহিলার নাম জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।

সিংড়া উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, কাউকে সামাজিকভাবে বয়কট করার অধিকার গ্রাম প্রধানদের নেই। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবিব রুবেল জানান, বেশ কিছুদিন এলাকায় না থাকার কারণে বিষয়টি আমার জানা নাই। ঘটনাটি যদি ঘটেও থাকে তবে তা অমানবিক হয়েছে।

সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। তবে এ ঘটনা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার বিপরীত এবং আইনসম্মত নয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুশফিকুর রহমান জানান, বিষয়টি জানা ছিল না। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি দ্রুত নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/মে ২৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর