thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

সিগারেট টানতে নিষেধ করায় রাবি শিক্ষার্থীকে পুলিশের মারধর

২০১৭ মে ২৫ ১৯:২৭:২৬
সিগারেট টানতে নিষেধ করায় রাবি শিক্ষার্থীকে পুলিশের মারধর

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একটি আবাসিক হলের গেটে বসে সিগারেট টানতে নিষেধ করায় এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে হল গেটে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের ফটকে এ ঘটনা ঘটেছে।

মারধরের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম অভি। সে ওই হলের ৪১৮ নম্বর রুমে থাকে।

জানা যায়, অভির মা বগুড়া থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সকালে। নিজের বড় বোনকে নিয়ে মায়ের অপেক্ষায় হল গেটে বসেছিলো অভি। তার বড় বোন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী। সেখানে ডিউটিতে ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম। হঠাৎ সিগারেট ধরিয়ে টানতে শুরু করেন ওই কনস্টেবল। সিগারেটের ধোঁয়ায় সমস্যা হওয়ায় অন্য পাশে গিয়ে তা শেষ করে আসার অনুরোধ করেন অভি। এই অনুরোধ করায় উল্টো অভির উপর ক্ষেপে যান কনস্টেবল শফিকুল। এ সময় হাতে থাকা রাইফেলের বাট দিয়ে অভিকে আঘাত করতে থাকেন তিনি। উচ্চস্বরে বলতে থাকেন- ‘কে রে তুই? আমাকে চিনিস! কোন সাহসে দূরে গিয়ে সিগারেট খেতে বলিস!’ ধাক্কাতে ধাক্কাতে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অভিকে গেটের বাইরে বের করে দেন তিনি। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কনস্টেবল বলেন, ‘দেখি, তোর কোন বাপ তোকে হলে ঢুকতে দেয়?’ প্রত্যক্ষদর্শী হল কর্মচারী, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার বড় বোন এভাবে ঘটনার বর্ণনা দেন। এমনকি খোদ ওই কনস্টেবল নিজেও পুরো ঘটনাটি স্বীকার করেছেন।

এ ঘটনার পর সকাল ১০টার দিকে প্রক্টর দফতরে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য বৈঠক বসে। এ সময় রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলামসহ পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

ভেতরে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী ও পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বৈঠকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কনস্টেবলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মজিবুল হক আজাদ খান শুধুমাত্র ‘সরি’ বলিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে ওই কনস্টেবলকে হল গেটে আবারও ডিউটিতে পাঠাতে চেয়েছিলেন! তবে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তারা ‘তাকে প্রত্যাহার করে নিলে ভাল হবে’-পরামর্শ দিয়ে কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম অভি জানান, বিষয়টি আমার রুমমেট বড় ভাইদেরসহ অন্য শিক্ষার্থীদের জানায়। তখন বড় ভাই এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে কনস্টেবলকে হল থেকে বাইরে বের করে দেন। পরে প্রক্টর দফতরে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলামসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসে মীমাংসা করে দেয়। ওই পুলিশ কনস্টেবলকে হল থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে রাবি প্রক্টর অধ্যাপক মজিবুল হক আজাদ খান বলেন, ‘বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তকে নিয়ে বসে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। আর কোনো সমস্যা নেই।’

নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবীর বলেন, ‘মতিহার হলের ডিউটি থেকে কনস্টেবল শফিকুলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। দুই পক্ষের কথাও শুনেছি আমরা। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে রাবি শাখা শিবিরের সেক্রেটারি শরিফুজ্জামান নোমানী নিহত হয়। ওই ঘটনার পর থেকে আবাসিক হলের ফটকে অস্থায়ীভাবে পুলিশ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। যা পরবর্তীতে আর সরানো হয়নি। বর্তমানে ১১টি ছাত্র হলে ৬ জন করে ৬৬ জন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক ডিউটিতে থাকেন। তবে যেকোনো ধরনের ঘটনায় নিরাপত্তা দিতে বরাবরই ব্যর্থ ডিউটি পুলিশ। অথচ ব্যর্থ পুলিশের পিছনে অর্থ ব্যয় করে রাবি কর্তৃপক্ষ। এতে বরাবরই ক্ষোভ জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এনআই/মে ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর