thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

আইলার ৮ বছরেও পুনর্বাসিত হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার

২০১৭ মে ২৫ ২০:১১:২০
আইলার ৮ বছরেও পুনর্বাসিত হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : দক্ষিণ উপকূলে ভয়ংকর আইলার আঘাতের আট বছর পূর্ণ হয়েছে বৃহস্পতিবার (২৫ মে)। দিনটিকে ঘিরে স্বজনহারাদের স্মরণসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি মনে করতেই এখনও আৎকে ওঠেন সাতক্ষীরার মানুষ।

২০০৯ সালের ২৫ মে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট সর্বনাশা ‘আইলা’ আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদে। মুহূর্তের মধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি উপজেলার উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪-১৫ ফুট উচ্চতায় সমুদ্রের পানি এসে নিমিষেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় নারী ও শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ, হাজার হাজার গবাদী পশু আর ঘরবাড়ি। ক্ষণিকের মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়ে লাখো পরিবার। লাখ লাখ হেক্টর চিংড়ি আর ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় উপকূল রক্ষা বাঁধ আর অসংখ্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সর্বনাশা আইলার আঘাতে শুধু সাতক্ষীরায় নিহত হয় ৭৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু আর আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। প্রলংয়করী আইলা আঘাত হানার আট বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশাশুনির প্রতাপনগর এলাকায় মানুষের হাহাকার এতটুকু থামেনি। দু’মুঠো ভাতের জন্য জীবনের সাথে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে তাদের। আইলার পর থেকে এসব এলাকায় সুপেয় পানি সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। খাবার পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল পথ। আইলাকবলিত এ অঞ্চলের রাস্তাঘাটও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। ফলে উচ্চ বিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত সবাই চালাচ্ছে বেঁচে থাকার সংগ্রাম।

ক্ষতিগ্রস্ত আইলাকবলিত এ বিশাল জনপদে যে কয়টি সাইক্লোন শল্টার রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আইলার ভয়াবহতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে বসবাসরত মানুষের চোখেমুখে এখনও ভয়ংকর সেই স্মৃতি। আইলার আঘাতের পর থেকে গোটা এলাকা উদ্ভীদশূন্য হয়ে পড়ে। কৃষি ফসল ও চিংড়ি উৎপাদন বন্ধ থাকায় গোটা এলাকাজুড়ে তীব্র কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দিয়েছে। কর্মহীন মানুষ অনেকেই এলাকা ছেড়ে কাজের সন্ধানে বাইরে চলে গেছে।

অপরদিকে, বনদস্যুদের অত্যাচারে সুন্দরবন, কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর ওপর নির্ভরশীল এ এলাকার মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ফলে বিকল্প কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারছেন না উপকূলীয় এ জনপদের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। আইলার পরপরই কিছু সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কাজের বিনিময়ে খাদ্যসহ বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিলেও এখন আর তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না।

এদিকে, আইলার ৮ বছর অতিবাহিত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধগুলোর ভয়াবহ ফাটল দেখা দেওয়ায় এবং সংস্কার না করায় সামান্য ঝড় কিম্বা বৃষ্টিতে ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে এ জনপদের কয়েক লাখ মানুষের। তাই উপকূলীয় এ জনপদের মানুষের সরকারের কাছে দাবি টেকসই উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মস্থানের ব্যবস্থা করা।

আইলা বিধ্বস্ত শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আজম টিটো জানান, দুর্গত এলাকা এখনও নানা সমস্যায় জর্জরিত। খাবার পানির তীব্র সংকট। আইলায় মিষ্টি পানির আধারগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। আজও পুকুর বা জলাশয় খনন করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এলাকায় কাজ নেই। বেড়িবাঁধ দিয়ে নদীর নোনা পানি চিংড়ি ঘেরে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না বিধায় চিংড়ি হচ্ছে না।

শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, ২০০৯ সালে আইলার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। পরদিন বাড়ি ফিরে দেখতে পান তার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। নিজেই চিনতে পারছিলেন না তার বাড়ি। কোনো রকম বেড়িবাঁধর ওপরে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নেন। পরবর্তী সরকার ও বেসরকারি সহযোগিতায় কোনো রকম ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার এলাকায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জুড়ে তিনি নিজ উদ্যোগে সামাজিক বনায়ন করেছেন যাতে দুর্যোগে অন্তত তার এলাকা রক্ষা পায়।

আইলার পর থেকে ওই এলাকায় মানুষের উন্নয়নে কাজ করছেন বেসরকারি সংগঠন ‘বারসিক’।

সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক শাহীন ইসলাম জানান, আইলার পর থেকে তার সংগঠন মূলত ওই এলাকার কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লবণ সহিষ্ণু ধানের জাত এনে উপকূলীয় এলাকায় চাষ করার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রজাতির ধান চাষে সেখানে সফল হয়েছেন বলে জানান তিনি।

বর্তমানে ওইসব এলাকায় পাটনাই, তালমুগুর, চিনিকানাই, তারাশাইল জাতের ধান ওই এলাকার কৃষকরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বীজ তৈরি করে ভাল ফল পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার ভৌমিক জানান, আইলার পর থেকে বিভিন্ন স্থানের বাঁধ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আাওতায় ১১টি পোল্ডারে ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৫০টি পয়েন্টে ১০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এ বছরও ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। যা দিয়ে এ বিশাল বাঁধ সংস্কার করা সম্ভব হবে না। এখানে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, বেড়িবাঁধ, সুপেয় পানিসহ যে সব সমস্যা রয়েছে তা সমাধানের জন্য সরকার ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙন বা বেড়িবাঁধগুলি সংস্কার করার জন্য ঊর্ধ্বতন করতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এনআই/মে ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর