thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

বরিশালে ইডকলের সোলার নিয়ে প্রশ্ন

২০১৭ জুন ০৩ ২১:২৯:৪৫
বরিশালে ইডকলের সোলার নিয়ে প্রশ্ন

বিধান সরকার, বরিশাল : কেবল দাম বেশি নয়, যন্ত্রাশেংর মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইডকলের (ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড) দেওয়া সোলার প্যানেল নিয়ে। বিনামূল্যে পাওয়া এই সৌর বিদ্যুৎ শুরু থেকেই বা ৬ মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে যাওয়াতে কোনো কোনো গ্রাহক তা ফেরত দিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ইডকলের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাদের প্যানেল বুয়েট পরীক্ষিত। অন্যদিকে, জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানিয়েছেন,৩ বছরের জন্য ১০ ভাগ অর্থ জামানত থাকায় অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যুতের বিকল্প সোলার হোম সিস্টেম কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দের অর্ধেক টাকার মাটির কাজ, বাকি টাকার সোলার প্যানেল কিনতে হবে বলে সরকার ঘোষণা করে। জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কর্মসূচি শুরুর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইডকলের আগে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা সোলার প্যানেল বসানোর কাজ তদারকিতে ছিলেন। এই অর্থবছরের শেষ দিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয পরিপত্র জারি করে, সেলার প্যানেল ইডকলের কাছ থেকে কিনতে হবে। ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ইডকল এর ৪৫টি সহযোগী বেসরকারি সংস্থা নিয়ে এই কার্যক্রমের শুরু করে। প্রথম দিকে চাল, গম বরাদ্দ হওয়াতে তা বিক্রি করে অর্ধেক টাকা দিয়ে সোলার প্যানেল কেনা হয়। এই হিসেবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জেলায় ১ হাজার ৩০৭টি সৌর বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছিল। এই অর্থবছর সোলার ও মাটির কাজ মিলে বরাদ্দ ছিল ৭৭ কোটি ৯২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। আর খাদ্য শস্য ছিল ৭ হাজার ৩০৪ দশমিক ৪৮৮ মেট্রিক টন। তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে কোনো খাদ্য শস্য নয়; শুধু টাকা বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়। এই হিসেবে হিজলা উপজেলায় কাবিটার মাধ্যমে ১৮৪টি এবং টেস্ট রিলিফের (টিআর) টাকায় ১৭৯টি সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। জেলার অন্য উপজেলাতে পর্যায়ক্রমে এই কাজ বাস্তবায়ন হবে ইডকলের নির্ধারিত সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষেদের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার জানিয়েছেন, প্রকল্পের সভাপতি হন তারা। তাদের মতামত না নিয়ে অর্ধেক টাকা কেটে রেখে ইডকলের মাধ্যমে সোলার প্যানেল বসানো হয়। তিনি বলেছেন, ‘চালের বাজার মূল্য টন প্রতি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলেও ইডকল সোলার প্যানেল দেয় অর্ধেক মূল্যের। এতে করে জনসাধারণ মনে করেন আমরা নিম্ন মানের সোলার কিনে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছি।’ আরেক ইউপি সদস্য মো. নূরুল ইসলাম পালোয়ান বলেছেন, ‘প্রকল্পের সভপতি হই আমরা, আর সোলার কেনার বেলায় ইডকল। এর চেয়ে বাজারে কম মূল্যে ভালো সোলার কিনতে পারি।’

সরেজমিন ইডকলের দেওয়া সোলার প্যানেলের কার্যক্রম দেখতে গিয়ে কথা হয় বাবুগঞ্জ উপজেলার হাদিবাসকাঠি গ্রামের সরদার বাড়ির পারুল বেগমের সাথে। তাদের এখানে ইডকলের সহযোগী সংস্থা উপকূলীয় বিদ্যুতায়ন ও মহিলা উন্নয়ন সমিতি সোলার প্যানেল স্থাপন করেছে। নয় মাস হলো পারুল বেগম সৌর বিদ্যুৎ পেয়েছেন। তবে ভাল্ব জ্বলে তেমন আলো হয় না। তিনি অভিযোগ করেছেন, কোম্পানির কাছে বিষয়টি জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।

এই গ্রামের রশিদ মল্লিক অবশ্য ৩ টি ভাল্ব জ্বালাতে পারছেন। একই উপজেলার সদর খানপুর গ্রামের আলেয়া বেগম ৫ মাস আগে বিনামূল্যের সৌর বিদ্যুৎ পেয়েছেন। স্থাপনের ২ মাস পর কখনো ভাল্ব জ্বলে আধা ঘন্টার জন্য মাত্র। তিনি অভিযোগ করে জানিয়েছেন, কোনো কাজ হয়নি বলে ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সোলার প্যানেল ফেরত দিয়েছেন। এমনি অবস্থা প্রতি উপজেলায় রয়েছে।

গ্রাহকদের এই অভিযোগের বিষয়ে উপকূলীয় বিদ্যুতায়ন ও মহিলা উন্নয়ন সমিতির সহকারী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মেহেবুব ইসলাম তরুণ বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান ২০০৪ সালে সোলার তৈরির পর থেকেই ইডকলের সাথে যুক্ত। আমাদের প্যানেল বুয়েট থেকে পরীক্ষিত এবং এতে ২০ বছরের ওয়ারেন্টি। এ ছাড়া ব্যাটারি ৫ বছরের, কন্ট্রোলার ও লাইটের ওয়ারেন্টি ৩ বছরের জন্য। প্রতিটি সোলার প্যানেলের সাথে তাদের মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। সমস্যা হলে গ্রাহকরা ফোন করলে আমাদের টেকনিশিয়ানরা দ্রুত গিয়ে তার সমাধান করেন। তবে গ্রাহকদের সমস্যা হলো তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ না করে উপজেলাতে গিয়ে ধর্না দেন বলে সমাধানে বিলম্ব হয়।’

এই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, গ্রাহকরা ব্যবহার বিধি সঠিক ভাবে না মানার কারণে সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস গ্রাহকদের সমস্যার বিষয়ে বলেছেন, ‘এ নিয়ে আমার কাছে এখন পর্যন্ত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’

ইডকল সোলার প্যানেলের দাম বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ বা এর বেশি নিচ্ছে, জনপ্রতিনিধিদের এই অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘এ কারণে আগৈলঝাড়া উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্য এই অনিয়মে হস্থক্ষেপ করলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮০ লাখ টাকা সরকারি তহবিলে ফেরত গেছে। তাই চালের সরকারি মূল্য নির্ধারণ ও বিক্রিতে বিস্তর ফারাক থাকায় শস্য নয়, এখন নগদ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে সোলার কেনায়। এজন্য সমস্যা অনেকটা কমে আসবে। তারপরও যন্ত্রাংশে সমস্যা হলে আমাদের কাছে জামানত রাখা আছে ৩ বছরের জন্য ১০ ভাগ অর্থ, তা থেকে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’

তিনি জানিয়েছেন, প্রথম বছর তারা ২০ ভাগ টাকা ৫ বছরের জন্য জামানত হিসেবে রাখলেও চলতি বছরে ইডকল সোলারের দাম কমানোয় জামানতের হারও কমানো হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/জুন ০৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর