thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

বরিশালে টিসিবির পণ্য সেবায় অনিয়ম

২০১৭ জুন ০৯ ২১:৪৬:২৬
বরিশালে টিসিবির পণ্য সেবায় অনিয়ম

বিধান সরকার, বরিশাল : একে তো মসুর ডালের মূল্য রাখা হচ্ছে বাজারের চেয়ে বেশি। তারওপর পণ্য নিতে এসে শ্রমিকদের বকশিস বাবদ দু’শ’ ও অফিস খরচের নাম দিয়ে রাখা হচ্ছে চার শ’ টাকা করে। প্রতিবাদ করলেই তালিকায় থাকলেও বাদ দিয়ে পছন্দের ডিলারদের পণ্য দেওয়া হচ্ছে। এমন চিত্র চলমান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে।

অফিসের হিসেবের খাতা অনিয়মের বিষয় স্পষ্ট থাকলেও জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান টিসিবি আঞ্চলিক অফিস প্রধান হাওলাদার মো. মাসুম। বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক টিসিবি বরিশাল অফিস প্রধানকে ডিলারদের হয়রানী বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ১৫ মে থেকে বরিশালে রোজায় প্রয়োজনীয় চারটি পণ্য খোলা বাজারে বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে। সকাল ১০টা থেকে শুরু করে পণ্য থাকলে সন্ধ্যা ৬টা অবধি বিক্রি করার নির্দেশ রয়েছে। এবারে ট্রাকযোগে বিক্রির জন্য প্রতি ডিলারদের শুরুতে ৪শ’ কেজি ছোলাবুট, চিনি ৬শ’ কেজি, অস্ট্রেলিয়ার মসুর ডাল আড়াই শ’ কেজি এবং পুষ্টি ব্রান্ডের সয়াবিন তেল দেয়া হয়েছিল ৪শ’ লিটার করে।

তবে বাজারে তেলের চাহিদা থাকলেও শুরুর সপ্তাহ যেতেই সয়াবিন তেল অর্ধেকটা কমিয়ে ২শ’ লিটার করে দেওয়া হচ্ছে প্রতি ডিলারকে। ট্রাকে করে বিক্রি করা ডিলারগণ পণ্য বিক্রি করে গড়ে কেজি প্রতি সাড়ে ৪ টাকা কমিশন পান। দোকানে বিক্রি করা ডিলারদের বেলায় এই কমিশন সাড়ে ৩ টাকা।

এই দফতরের অফিস সহকারী মো. শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আঞ্চলিক অফিস থেকে বরিশাল, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠী মিলিয়ে ১২২ জন ডিলার রয়েছেন। এর মধ্যে ৪১ জন ডিলার আছেন যারা নিয়মিত পণ্য নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রোটেশন অনুযায়ী বরিশাল নগরীতে ৫জন, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠীতে ২জন করে ডিলার ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন।

নিয়ম হলো, যেসব ডিলার নিয়মিত তাদের পণ্য বিক্রি করেন তাদেরকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার। এই নিয়ম উপেক্ষা করা হচ্ছে পণ্য দেবার বেলায়, এমনটাই জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল নগরী ও অন্য জেলা থেকে আসা ডিলাররা। যেসব ডিলার ৪ বছর ধরে পণ্য নেয়নি এবারে টিসিবি অফিস প্রধান আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের তালিকাভুক্ত করে পণ্য বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছেন।

রোটেশন অনুযায়ী পণ্য পাবার নিয়ম থাকলেও পছন্দের ডিলারকে নিয়ম উপেক্ষা করে ট্রাক সেলের পণ্য দিয়ে থাকেন। এই হিসেবে অফিসের রেজিস্টারে ২১ মে ২০ হাজার ৭৯৬ নম্বরে, ২৩ মে ২০ হাজার ৮২৩ নম্বর, ২৪ মে ২০ হাজার ৮৩৩ নম্বর ও ২৫ মে ২০ হাজার ৮৪৭ নম্বরে একই ডিলারকে পণ্য বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছেন। যেখানে বরিশাল নগরীতে ২০ জন ডিলার রোটেশন অনুযায়ী ৪ দিনের মাথায় গিয়ে ফের পণ্য বিক্রির সুযোগ পাওয়ায় কথা।

এছাড়াও মসুর ডাল বাজারে কম মূল্যে বিক্রি হওয়ায় টিসিবি ডাল ডিলাররা বিক্রি করতে পারছেন না। অফিস থেকে মসুর ডাল ব্যতীত অন্য পণ্য তোলা যাবে না, আবার বিক্রির জন্য মসুর ডাল অবধারিত রাখলে ডিলারদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেন আঞ্চলিক অফিস প্রধান।

তিনি বরিশালের ছেলে, আর সংবাদকর্মীদের এসব তথ্য দিলে সন্দেহ হওয়া ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় কথাও আগাম জানিয়ে দিয়েছেন। ডিলাররা বলেন, কমিশন যা পান কখনো হিসাব নিকাশ শেষে কোন কোন দিন লোকসান গুনতে হয়। এরমধ্যে আবার অফিসে ৪শ’ আর শ্রমিকদের ২শ’ টাকা করে দিতে হয় খরচ হিসেবে। দিতে অনীহা প্রকাশ করলে শ্রমিকদের দ্বারা এবং অফিসেও হয়রানী হতে হয়।

ডিলাররা আরো বলেন, টিসিবির চিনি, ছোলাবুট ও তেলের মূল্য বাজারের চেয়ে কম ৫ লিটারের পুষ্টি তেলে ১শ’ টাকার ন্যায় লাভ থাকে। চিনি ও ছোলা বুটেও কেজি প্রতি ১০ টাকা পাওয়া যায়। তাই পণ্য ছাড়িয়ে বাইরে বিক্রি করতে পারলে বাড়তি লাভের আশায় থাকেন সুযোগ সন্ধানী ডিলাররা। এতে করে নিয়মিত পণ্য বিক্রি করা ডিলারদের সমস্যায় পড়তে হয়।

নিয়ম অনুযায়ী গুদাম থেকে পণ্য ট্রাকে তুলে দেয়ার জন্য ঠিকাদারের নিয়োগকৃত শ্রমিক রয়েছে। তাদের টন প্রতি ৬৫ টাকা করে দর ধরা আছে। তবে শ্রমিক সর্দার মো. মজিবর বলেন, তারা পান ৫০ টাকা করে প্রতি টনে। ১৫ টাকা নিচ্ছেন ঠিকাদার। ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন, প্রতিদিন যে পয়সা পান তাতে সংসার চলে না। এজন্য ডিলারদের কাছ থেকে ২’শ টাকা করে বকশিস নেয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেন তিনি। এ সময় এক ডিলারকে তথ্য দেওয়ার অভিযোগ এনে শাসিয়ে দেন, এরপর মাল পেতে কতটা বেগ পেতে হবে দেখতে পাবেন এই বলে।

নিয়ম উপেক্ষা করে এ বছর নতুন করে ৭ জন ডিলারকে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। আবার পুরনো লাইসেন্সধারী ডিলার রয়েছেন যারা চার বছর ধরে কোন পণ্য নেননি। রেজিস্ট্রারে উল্লেখিত একজন ডিলারকে কিভাবে টানা চার দিন ট্রাকসেল দেওয়া হলো আর অফিস এবং গুদামের শ্রমিকরা কেন বাড়তি টাকা নিচ্ছেন? এ বিষয়ে টিসিবি অফিস প্রধান হাওলাদার মো. মাসুম বলেন, ইতিমধ্যেই তিনি টাকা নিতে বারণ করেছেন। টাকা নেওয়া হলে এখান থেকে বদলি বা আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। ডিলারদের তিনি হুমকি দেননি বলে জানান।

এ নিয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, রমজানের আগেই খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির কারণে এবারে বাজার দর বৃদ্ধিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। সরকারে জনবান্ধব এই কার্যক্রমে যাতে কোন অসুবিধার তৈরি না হয় এবিষয়ে তিনি যথার্থ ব্যবস্থা নিবেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এনআই/জুন ০৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর