thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

২০ বছরেও মিলেনি মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণ

২০১৭ জুন ১৪ ২০:০৬:১১
২০ বছরেও মিলেনি মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণ

সেলিম আহমেদ, মৌলভীবাজার : কালের পরিক্রমায় আবার ঘুরে এসেছে ১৪ জুন। আর সেই সাথে যোগ হয়েছে মাগুরছড়া বিপর্যয়ের আরো এক বছর। মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের ২০ বছর অতিক্রান্ত হলেও চুক্তি মোতাবেক মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়নি। অক্সিডেন্টালের উত্তরসূরী সেভরনও এখন দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষতিপূরণ আদায়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

১৯৯৭ সালের এইদিন মধ্যরাতে মৌলভীবাজারের মাগুরছড়া গ্যাস কূপে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের মুহূর্তে আগুনের লেলিহান শিখা চারিদিকে ছড়িয়ে নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রায় ২৫ হাজার গাছ জীবজন্তুসহ আশপাশের প্রায় ৮৭.৫০ একর এলাকা। চা বাগান, বনাঞ্চল, বিদ্যুৎলাইন, রেলপথ, সড়কপথ, গ্যাসকূপ, পরিবেশ, প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুড়ে যায় মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির (আদিবাসী গ্রাম) বাড়িঘর ও পানগাছ।

মাগুরছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) জিডিশন প্রধান সুচিয়াঙ বলেন, ‘সেই দিনের কথা মনে হলে এখনও আমরা আঁতকে উঠি। সারা জীবনই হয়তো সেই দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে।’ তিনি আরো জানান তারা ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু টাকা পেয়েছিলেন। ফুলবাড়ি চা বাগানের শ্রমিক অনিক ভূঁইয়া বলেন, তখন আমি আরো ছোট ছিলাম কিন্তু তখন আমরা এই এলাকায় নানা জাতের পশুপাখির দেখা পেতাম। কিন্তু আগুন লাগার পর এখন অনেক প্রাণির দেখাই পাওয়া যায় না।’

মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের অদক্ষতার কারণে লাগা আগুন গ্যাসকূপের ৮৫০ ফুট গভীরতায় পৌছালে বিস্ফোরণে পুড়ে যায় ভূগর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাস। যার তৎকালীন মূল্য প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। গ্যাস ছাড়া পরিবেশ ও অন্যান্য ক্ষতির পরিমাণ সেই সময় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। অক্সিডেন্টাল যৎসামান্য ক্ষতিপুরণ দিয়ে ইউনিকল নামে আরো একটি কোম্পানির কাছে ফিল্ড বিক্রি করে বাংলাদেশ থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে ইউনিকল উত্তরসূরি মার্কিন কোম্পানি সেভরনের কাছে গ্যাসকূপ বিক্রি করে এদেশ ত্যাগ করে। এখন সেভরন ও তাদের সম্পদ বিক্রি করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ আদায়ে কোন উদ্যোগ নেই সরকারের।

তবে পরিবেবাদী ও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে আজও আন্দোলন করছেন। লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক জলি পাল বলেন, সেই বিস্ফোরণে লাউয়াছড়ার প্রায় ২৫ হাজার গাছ পুড়েছিল। আর জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কোন সঠিক হিসেব কেউ করেনি। সেই ধ্বংসযজ্ঞের ছাপ এখনো লাউয়াছড়া বয়ে বেড়াচ্ছে। সেভরন এই দেশ থেকে সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে যাবার আগেই যা করার করতে হবে নয়তো কোন দিন আমরা এই ক্ষতি আদায় করতে পারবো না।’

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) মিহির কুমার দে বলেন, ‘তৎকালীন সময়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রায় ৭শ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল গাছপালা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে একটি কমিটির মাধ্যমে ক্ষয়-ক্ষতিক্ষতি নিরূপণ করে পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন ক্ষতিপূরণ বন বিভাগ পায়নি।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/জুন ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর