thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় পাহাড় ধস

২০১৭ জুন ১৯ ২০:৪১:৫৯
ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় পাহাড় ধস

বান্দরবান প্রতিনিধি : বান্দরবানে নির্বিচারে পাহাড়, গাছপালা কাটার কারণে পাহাড়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ফলে ঠেকানো যাচ্ছে না পাহাড়ধস। পরিবেশ বিপন্নের কারণে বান্দরবানে বাড়ছে পাহাড় ধসের ঘটনাও। অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন এবং অবকাঠামো নির্মাণের ফলে পাহাড় ধসে বাড়ছে প্রাণহানিও। বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, ঘনঘন ভূমিকম্প ও অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ে ধসের সৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড় ধস তাৎক্ষণিক ঘটনা মনে হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার একটি ফসল।

এদিকে রবিবারও (১৮ জুন) বান্দরবানে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির শঙ্কা কাটছে না স্থানীয়দের।

সরকারি সূত্রমতে, পাহাড় ধসে ২০০৬ সালে জেলা সদরে মারা গেছে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় মারা গেছে শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মারা গেছে ৫ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় মারাগেছে ২ জন, আর ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন মারা গেছে, ২০১৩ সালে সদরের কালাঘাটায় ২ জন, ২০১৪ সালে সদরে ৪ জন, ২০১৫ সালে জেলা সদরের বনরূপাড়ায় ৩ জন, লামা উপজেলার হাসপাতাল পাড়ায় ৬ জন মারা গেছে এবং ২০১৭ সালের জুন মাসে জেলা শহরে শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে বান্দরবানে। হতাহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পাহাড় কেটে আবাসস্থল তৈরির প্রক্রিয়া থেমে নেই জেলায়। শনিবারও (১৭ জুন) জেলা সদরের কালাঘাটায় পাহাড় কেটে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী লোকেদের স্থায়ী পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

এদিকে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন এবং পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত বসতি স্থাপনের কারণে পাহাড় ধসের ঘটনা বাড়ছে বলে মত বিশেজ্ঞদের।

বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুর ইসলাম বলেন, পাহাড় ধসের ঘটনাটি তাৎক্ষণিক মনে হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার ফসল। মূলত পাহাড় ধস শুরু হয় ভূমি ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে। প্রবল বর্ষণে নালা তৈরি হয়ে পরবর্তীতে ধসে পড়ে। পাহাড় ধসের অনেকগুলো কারণের মধ্যে প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন এবং অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা। পাহাড়ী অঞ্চলে ঘনঘন ভূমিকম্প এবং অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয়। বৃষ্টির সময় ফাটলে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে আস্তে আস্তে পাহাড়টি ধসে পড়ে। সম্প্রতি বান্দরবানে ২৪ ঘন্টায় ৩০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড বিগত বিশ বছরে।

এদিকে জেলা সদরের ইসলামপুর এবং লেমুঝিড়ি এলাকায় পাহাড়ের দুটি অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রবল বর্ষণের কারণে ফাটলটি ক্রমশ বাড়ছে। ফাটল দেখা দেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা পাইম্রাউ মারমা, মিথিলা মারমা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অবিরাম বর্ষণের সময় ধসে পড়া পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী একটি পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় ফাটলটি আরও বড় হচ্ছে। ফাটলের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কয়েকটি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে ইতোমধ্যে অন্যত্র চলে গেছে। যারা আছেন তারাও বৃষ্টি হলে রাতের বেলায় না ঘুমিয়ে জেগে থাকেন।

অপরদিকে ইসলামপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ মোল্লা, আবু সালেহ বলেন, দু’বছর আগে ভূমিকম্পের ফলে ইসলামপুর পাহাড়ের বিশাল একটি অংশে ফাটল দেখা দেয়। ফাটলের কারণে ইসলামপুর সড়কটিও কয়েক’ফুট নিচের দিকে ডেবে যায়। বৃষ্টি হলে এখানকার বাসিন্দারা আতঙ্কে ঘুমাতে পারেন না। যে কোনো সময় পাহাড় ধসে এখানে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলোর তালিকা তৈরিতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি ছাড়তে প্রাথমিকভাবে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন বাসিন্দাদের। নির্দেশ না মানলে আইন প্রয়োগ করে সরানো হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলীনূর খান।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ডি. এ. মো. মাকসুদ চৌধুরী বলেন, পরিবেশ বিপন্নের কারণেই মূলত ঘটছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। অতিঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো থেকে লোকজনদের ৮টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। তালিকা তৈরির পর নিশ্চিত করে বলা যাবে পাহাড় ধসের অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনের সংখ্যা।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এনআই/জুন ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর