thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ 24, ৫ চৈত্র ১৪৩০,  ৯ রমজান 1445

বাজেট উচ্চভিলাষী, আশ্বাস সংক্ষিপ্ত : বিশ্ব ব্যাংক

২০১৭ জুন ২০ ১২:৪৩:৫৫ ২০১৭ জুন ২০ ১৫:০০:০০
বাজেট উচ্চভিলাষী, আশ্বাস সংক্ষিপ্ত : বিশ্ব ব্যাংক

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিশ্বব্যাংক বলেছে আগামী অর্থবছর বাজেট উচ্চভিলাষী। আশা দীর্ঘ, কিন্তু আশ্বাস সংক্ষিপ্ত। এর কারণ বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা যেগুলো ধরা হয়েছে সেগুলোর অর্জনের আশা করাই যায়। কিন্তু আশার পেছনে পদক্ষেপ ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের আশ্বাস কম। তা ছাড়া বাজেট বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা বলেছে সংস্থাটি। এগুলো হচ্ছে, ব্যাংকিং খাত ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, বিদুৎ ও জ্বালানি খাতে দাম বৃদ্ধির ভিত্তি পরিষ্কার করা হয়নি, সঞ্চয়পত্রে সুদের হারের ভিত্তি পরিষ্কার করা, এক্সচেঞ্জ রেটের ক্ষেত্রে নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া এবং চালের আমদানি শুল্ক না কমানো।

মঙ্গল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান। বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।

জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশেরর স্বাস্থ্যকর প্রবৃদ্ধি চলছে। তবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রতিকূল বাতাস বইছে এ অবস্থায় আগামী বাজেটে আশার ভিত্তিতে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। খরচের দিকে তেমন কোনো চমক নেই, এটি গতানুগতিক। সংস্কারের ক্ষেত্রে স্বীকৃতি আছে কিন্তু পদক্ষেপ নেই।

তিনি বলেন, আগামী বাজেটে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা। কিন্তু এটিও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। কারণ মূল আইনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের পাশাপাশি বিভিন্ন আমদানি পণ্যে শুল্ক অব্যাহতি প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বাজারভিত্তিক দেশীয় শিল্প সুরক্ষার জন্য এ ক্ষেত্রে রপ্তানিভিত্তিক শিল্প ক্ষতির সম্মুখীণ হচ্ছে। চালের বাজারে বর্তমান সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকারকে চালের মজুদ বাড়াতে হবে। শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার বিলম্বিত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করছে। আগামী বাজেটে ব্যাংকিং খাত সংস্কারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি খেলাপিঋণের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ অত্যন্ত বেশি। বিশ্বে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে বেশি খরচ পড়ছে। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ গোলমাল এবং দুর্নীতির কারণে এমনটি হয়ে থাকে বলে এর আগের এক গবেষণায় দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা শতভাগ চালু করা হলে দরপত্র নিয়ে দুর্নীতি কমে যাবে।

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য এবং রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য উচ্চাভিলাষী। এসব লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব নয়, তবে লক্ষ্য অর্জন যেসব উদ্যোগ দরকার সেগুলো বাজেটে নেই। খরচের লক্ষ্য যদি উচ্চাভিলাষী হয়, আবার ঘাটতি যদি স্থিতিশীল রাখতে চাওয়া হয় সে ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অটোমেটিক্যালি উচ্চভিলাষী হবে। তিনি বলেন, এডিপি বাস্তবায়নে গত তিন বছরে একই চিত্র বিরাজ করছে। প্রথম দিকে বাস্তবায়ন কম হলেও শেষের দিকে বাস্তবায়ন বাড়ে। এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা বাড়লেও প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার সংখ্যা খুব কম। এ ছাড়া এডিপির বাইরে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প এবং পিপিপি উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো উন্নতি নেই, ধীরগতি বিরাজ করছে। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার না করে শুধু কিছুটা পরিবর্তন আনলে সুফল মিলবে না।

ঘাটতি অর্থায়ন প্রসঙ্গে বলেন, সরকার ঘাটতি অর্থায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে। সঞ্চয় পত্রের মাধ্যমে এ ঋণ নেওয়া হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বলেন, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, কিন্তু মূল্যস্ফীতি স্থিতীশিল রয়েছে। এটা স্বাভাবিক নয়, কেননা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে চাহিদাকে বৃদ্ধি করার মাধ্যমে। তাই মূল্যস্ফীতি কম বেশি হওয়ার কথা।

প্রস্তাবিত বাজেটের মূল্যায়ন করতে গিয়ে চিমিয়াও ফান তিনটি দিকের কথা বলেন, তার মতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে টার্গেট ঠিক করা হয়েছে তা উচ্চভিলাষী। বাজেটের বিশাল উন্নয়ন ব্যয় বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ বাজেট বাস্তবায়নে যে পরিমান কাঠামোগত সংস্কার নেওয়া দরকার সেটি হয়নি। রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সেটি উচ্চভিলাষী এবং ভ্যাট নির্ভর। তবে প্রস্তাবিত বাজেটের বাস্তবায়ন যে একেবারে অসম্ভব, তাও মনে করেন না চিমিয়াও ফান। তিনি বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংস্কার, ভ্যাট আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন, এডিপি বাস্তবায়নে দক্ষতা বাড়ানো গেলে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প ব্যয় বেশি হওয়ার বিষয়টি একক কোন প্রকল্পের উপর নির্ভর কওে না। এটি সার্বিকভাবে গড়ে দেখতে হয়।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এম/জুন ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর