thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

হাকালুকি পাড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

২০১৭ জুন ২০ ২১:১৭:৪৩
হাকালুকি পাড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

সেলিম আহমেদ, হাকালুকি হাওর থেকে ফিরে : এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাকালুকি হাওর এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে কুলাউড়ায় ৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫৯টি পরিবার, বড়লেখার ৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩০টি পারিবার ও জুড়ী উপজেলায় ১টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৮-৯টি পরিবার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রিত মানুষ পাচ্ছে না কোন ত্রাণ সহায়তা। আশ্রয় কেন্দ্রকে নিরাপদ না মনে করে আরও কয়েক শতাধিক বন্যাকবলিত মানুষ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে নিরপাদে আশ্রয় নিচ্ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে হাওর পাড়ের আরও হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া উপজেলা ভুকশিমইল ইউনিয়ন, জয়চন্ডী, কাদিপুর, কুলাউড়া সদর, ব্রাহ্মণবাজার, ভাটেরা ও বরমচাল ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি পড়েছেন। এ ৭ ইউনিয়নের প্রায় ২৫-৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রায় সকল রাস্তা-ঘাট পানিবন্দি হয়েছে। জুড়ী উপজেলার ৪ ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলার ১৪-১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়েছে। এ উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের বেলাগাঁও, সোনাপুর, শাহাপুর, রাজাপুর, নিশ্চিন্তপুর, গোবিন্দপুর, জাঙ্গিরাই, নয়াগ্রাম, শিমূলতলা, ইউসুফনগর, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বাছিরপুর, খাগটেকা, তালতলা, কালনিগড়, হরিরামপুর, কৃষ্ণনগর, ভবানীপুরসহ ৩০টি গ্রামের বিভিন্ন রাস্তা ও বাড়িঘর, ফসলি জমি ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের ভোলারকান্দি, রাঙ্গিনগর, দশঘরি, বাড্ডা, ব্রাহ্মণের চক গ্রামের অধিকাংশ এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে।

পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বর্নি, সুজানগর, দক্ষিণভাগ, দাসেরবাজার ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। হাওরপারের দুর্গত মানুষের বসবাসের জন্য উপজেলা প্রশাসন তালিমপুর ইউনিয়নে হাকালুকি হাইস্কুল ও হাকালুকি প্রাইমারি স্কুলে এবং সুজানগর ইউনিয়নের ছিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও আজিমগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দিয়েছে।

সরেজমিনে কুলাউড়ায়র কাদিপুর ইউনিয়নের উচাইল হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে কথা হয় আশ্রিত ১৫টি পরিবারের সাথে। আশ্রিত সবাই ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা।

আশ্রিত রতীন্দ্র বিশ্বাস, নান্টু বিশ্বাস, প্রবেশ বিশ্বাস, সুবেন্দ্র বিশ্বাস, মঠিন বিশ্বাস, রাখেন বিশ্বাস, শান্ত বিশ্বাস, দিগেন্দ্র বিশ্বাস জানান, বাড়ি ঘরে থাকার শেষ ভরসাটুকু হারিয়ে এখানে এসেছি। দু’দিন হয়ে গেলেও কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। অকাল বন্যায় বোরো ধান তলিয়েছে। এখন বাড়িঘর ছাড়া করেছে সেই বন্যার ভয়াবহ রূপ। এখন আমরা সর্বস্বহারা। ঘরে ধান নেই। বন্যায় বাড়িঘর ছাড়া। ফলে আমাদের কেউ খোঁজও নিচ্ছে না।

ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে আশ্রিত মোক্তাদির, কুদ্দুছ মিয়া, সমরজিত, পারভেজ, আনোয়ারা বেগম, মিনতী রানী জানান, সোমবার সকাল থেকে বন্যার পানিতে বাড়িতে অবস্থান করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। ফলে বাধ্য হয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নিয়েছি।

কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান সালাম জানান, বন্যায় কাদিপুর ইউনিয়নে উচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫টি ও ছকাপন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রিতদের মধ্যে কোন ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি।

ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমদুদ হোসেন জানান, বন্যায় ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছে ২০টি পরিবার এবং শ্রীপুর মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছে ২০টি পরিবার। আশ্রিতদের প্রাথমিকভাবে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। বন্যাকবলিত আরও কমপক্ষে ৫শ’ পরিবার রয়েছে। যাদের ঘরবাড়িতে পানি। কিন্তু ঘরবাড়ির মায়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে আসছে না। তবে কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নে কোন মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে না গেলেও শতাধিক পরিবার বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বি জানান, আশ্রিত মানুষের জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কিছু নগদ টাকা আপাতত দেওয়া হচ্ছে। তারপরও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যদি বরাদ্দ আসে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তা মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিন্টু চৌধুরী জানান, হাওর পাড়ের জায়ফরনগর ইউনিয়নের শাহপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ৮-৯ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আরও কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানি বাড়লে মানুষজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে।

বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর জানান, অব্যহত ভারিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাওরপারে দুই ইউনিয়নে চারটি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। আশ্রিতদের শুকনো খাবার ও স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এনআই/জুন ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর