thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

এবারও অনিশ্চয়তায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৬ ০৭:০৫:১২
এবারও অনিশ্চয়তায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প

এবারও অনিশ্চয়তায় পড়েছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প। চুক্তির পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি চুক্তিবদ্ধ ইতালীয় প্রতিষ্ঠান ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফাইন্যান্স। চুক্তির ১৮ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনে যাওয়ার কথা।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের আওতায় ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফাইন্যান্স ঢাকার বর্জ্য ফেলার দুটি স্পট আমিনবাজার ও মাতুয়াইলে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে।

জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে এখনও ঋণই নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য তারা বারবার সময় বাড়াচ্ছে। তিন দফা সময় দেওয়ার পর আর সময় দিতে চাইছে না সরকার। প্রথমবারের মতো বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটি অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় বারবারই মুখথুবড়ে পড়েছে এ প্রকল্প।

গত বছরের ১৮ এপ্রিল রাজধানীতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইতালির প্রতিষ্ঠান ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফাইন্যান্স এসআরএলের সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কেএম মোজাম্মেল হক ও ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্টের কো-চেয়ারম্যান বেলিজারিও কসিমো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করে কাজ শুরুর কথা থাকলেও ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফাইন্যান্স ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেয়। এ সময়েও কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। ঋণ জটিলতায় কাজ শুরু হচ্ছে না জানিয়ে আবারও ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেয় ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট। একটি সূত্র জানিয়েছে, এ সময়েও কাজ শুরু করতে পারবে না তারা। সময় আগামী জুন পর্যন্ত বাড়িয়ে নেওয়ার আবেদন করবে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কেএম মোজাম্মেল হক দ্য রিপোর্টকে বলেন, এ প্রকল্পে সরকারের কোনো অর্থায়ন নেই। চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। তারাও অন্য স্থান থেকে ঋণ নেবে। ঋণ না পাওয়ার কথা বলে তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শুরু করতে পারছে না। বারবার সময় বাড়িয়ে নিচ্ছে। সর্বশেষ আগামী জুন পর্যন্ত সময় চাইলেও মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা তো তাদের অপেক্ষায় এভাবে বসে থাকতে পারি না। তারা এবার ব্যর্থ হলে অন্য চিন্তা করতে হবে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, শেষবার আর সময় বাড়াতে চাইছিল না মন্ত্রণালয়। সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদবির করে সময় বাড়িয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। নতুন করে তারা আবার সময় চাইলে চুক্তি বাতিল করবে সরকার। সেক্ষেত্রে আবার নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু হবে।

ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফাইন্যান্সের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সভরেন গ্যারান্টির (সার্বভৌম নিশ্চয়তা- সরকারের কাছ থেকে এ গ্যারান্টি নিয়ে বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ) কারণে ঋণ নিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রথম দেড় বছরে দুটি প্ল্যান্টে ১০ মেগাওয়াট, দুই বছরে ৩০ মেগাওয়াট ও তিন বছরে ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল। বর্জ্যের সরবরাহ সাপেক্ষে দুটি প্ল্যান্টে উৎপাদন ১০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে সরকার ৮ টাকা ৭৫ পয়সা দরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে।

বিদ্যুতের সঙ্গে সঙ্গে দুটি প্ল্যান্ট থেকে উপজাত পণ্য হিসেবে বছরে ৯ লাখ টন জৈব সার পাওয়া যাবে বলেও তখন জানানো হয়।

এ দুটি প্রকল্পের জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৩ দশমিক ৪ একর জমি প্রতিবছর ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় কোম্পানিকে ইজারা দেবে। প্রতি পাঁচ বছর পর পর ২০ শতাংশ হারে এই ইজারার টাকা বাড়বে।

সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ৩০ কোটি (৩০০ মিলিয়ন) ডলার ব্যয়ে এ প্রকল্পে সরকারের কোনো বিনিয়োগ থাকবে না। উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ‘নির্মাণ মালিকানা পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওওটি)’ পদ্ধতিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। ইতালীয় প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিনিয়োগ তুলে নিতে ২০ বছর বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি পরিচালনা করবে।

দুটি কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) কিনবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তাবটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর সম্মতি দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এইচএসএম/এনআই/এসবি/এজেড/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর