thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বান্দরবানে পর্যটনশিল্পে ধস

২০১৭ জুন ২৪ ২০:২৩:১২
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বান্দরবানে পর্যটনশিল্পে ধস

আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, বান্দরবান : প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাহাড়ধস-বন্যার ঘটনায় বান্দরবানে ধস নেমেছে পর্যটনশিল্পে। পবিত্র ঈদকে সামনে রেখেও বান্দরবানের আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্ট হাউজগুলোতে আশানুরূপ বুকিং হয়নি এবার। অথচ অন্যান্য বছরগুলোতে ঈদের পনের থেকে বিশদিন আগেই সবগুলো হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্টহাউজ এবং গেস্টহাউজগুলো বুকিং হয়ে যায়, কিন্তু এবার তেমনটি ঘটেনি। ঈদের বাকি আর মাত্র দু’একদিন। এদিকে আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউজ, রেস্টুরেন্ট এবং ট্যুরিস্ট পরিবহনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে চকচকে বসে আছে প্রতিবছরের মতো। কিন্তু পর্যটকদের আশানুরুপ সাড়া না মেলায় হতাশা দেখা দিয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কারণ বিগত পাঁচ-দশ বছরে পাহাড়ের অন্যতম অর্থনৈতিক আয়ের খাতে পরিণত হয়েছে পর্যটনশিল্প। পর্যটকের সঙ্গে আবাসিক হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, হস্তশিল্প, তাঁতশিল্প ছাড়াও এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরাও জড়িয়ে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায়। রুম বুকিং না হওয়ায় আশানুরুপ পর্যটক নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর আরেকবার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত আমরা। কিন্তু পর্যটকের আশানুরূপ সাড়া মিলছে না এবার। এখনো কোনো আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্টহাউজে আশানুরূপ বুকিং হয়নি। ঈদের বাকি আর মাত্র দু’একদিন, কিন্তু সবগুলো হোটেলেই রুম ফাঁকা। অথচ বিগত বছরগুলোতে ঈদের পনের থেকে বিশদিন আগেই সবগুলো রুম বুকিং হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, চলতি বছর এপ্রিল, মে, জুন তিনমাস অনেকটা পর্যটকশূন্য থাকায় এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। ঈদে পর্যটন ব্যবসা জমে উঠবে এমন আশায় বুক বেঁধেছিল তারা। কিন্তু তেমনটা ঘটছে না এবার। তারপরও আমরা আশাবাদী রুম বুকিং না হলেও ঈদের ছুটিতে পর্যটকে আবারও মুখরিত হয়ে উঠবে বান্দরবান।

এদিকে ঈদকে সামনে রেখে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। পর্যটক হয়রানি বন্ধে পরিবহন, আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং দর্শনীয় স্থানগুলোর মালিক শ্রমিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক।

পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় বান্দরবানে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে ছুটে আসে পর্যটকেরা। পাহাড় থেকে ঝড়ে পড়া ঝর্ণা, প্রাকৃতিক লেক, ঝুলন্ত সেতু, বাদুরগুহা, দেবতা পাহাড়, আলীর সুরঙ্গপথ ও সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ-সহ অসংখ্য পাহাড়। কি নেই এখানে। পর্যটকের মন ভোলানোর সমস্ত আয়োজন রয়েছে রুপের রানী খ্যাত বান্দরবানে। জেলা সদরের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে লেকের উপর নির্মিত দুটি ঝুলন্ত সেতু, মিনি সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানা ঘুরে বেড়ান পর্যটকরা। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের টাওয়ারে উঠে পাহাড়ের সমুদ্র দেখার মজাই আলাদা। পাহাড়ের সাথে আকাশ মিতালি গড়েছে নীলাচলে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও এখানে বেড়াতে এসে হারিয়ে যায় স্বপ্নের দেশে। বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড় এবং সেনা নিয়ন্ত্রিত স্বপ্নীল নীলগিরি পর্যটনস্পটের সৌন্দর্য রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। অসংখ্য পাহাড়ের মাঝখানে নির্মিত নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্র যেন মেঘে ভাসছে। মুহূর্তে মেঘ এসে এখানে ছুঁয়ে যায় কটেজগুলো। জেলা শহর থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নীলগিরি। আর বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড়ের সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ। এখানেও মুহূর্তে মেঘ এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাবে আপনাকে। শহরের অদূরে অবস্থিত শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানিতে গা ভাসাতে পারেন আপনিও। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি বয়ে চলেছে অবিরাম ধারায়। পাশে বসেই পাহাড়ি রমণীরা তাঁতে তৈরি কাপড় বিক্রি করছে। জেলা সদরের বালাঘাটায় নির্মিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নামে পরিচিত বৌদ্ধ ধাতু স্বর্ণজাদি পর্যটনের ক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এছাড়াও রুমা উপজেলায় অবস্থিত রিজুক ঝর্ণা, রহস্যময় কিংবদন্তি বগালেক, সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং ও তাজিংডং বিজয় এবং থানচি উপজেলার দর্শনীয় স্থান নাফাকুম ঝর্ণা, রাজাপাথর, অমিয়কুম, রেমাক্রী খাল, জীবননগর ট্যুরিস্ট স্পট-সহ দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠার অপেক্ষায়। এছাড়াও পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা সাঙ্গু নদী পথে নৌকা ভ্রমণ দারুণ রোমাঞ্চকর। আর বান্দরবানের পাহাড়ে বসবাসরত মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, খেয়াং, পাঙ্খো, চাকমা, চাক এবং লুসাইসহ ১৩টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাসের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র পর্যটকদের কাছে বাড়তি পাওয়া।

হলিডে ইন রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনায় আশানুরূপ পর্যটক পাচ্ছি না। অন্যান্য বছরগুলোতে আমাদের টানা সাত-আটদিন রুম বুকিং হয়ে যায়। কিন্তু এবার শুধুমাত্র ২৮-২৯ তারিখ দুদিন রুম বুকিং হয়েছে। অন্য দিনগুলো এখনো ফাঁকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর অর্থনৈতিক ভাবে আরেকটা বিপর্যয়ে পড়বে এখানকার পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

পালকি গেস্ট হাউজের ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহীন বলেন, রমজান মাসে কোনো গেস্ট ছিল না। এপ্রিল-মে মাসেও গেস্টহাউজে পর্যটক ছিল কম। তিন মাস ধরেই লসে আছি। ঈদের ছুটিতেও কোনো রুম বুকিং হয়নি। সবগুলো রুম এখনো ফাঁকা। দু’মাস ধরে বেতন পাই না, ঈদের মালিক পকেট থেকে এক মাসের বেতন-বোনাস দিছে।

ট্যুরিস্ট পরিবহন শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল বলেন, প্রায় দু’মাস ধরে বান্দরবানে পর্যটক নেই। ট্যুরিস্ট গাড়িগুলো মালিক-শ্রমিকরা কষ্টে আছি। প্রতি বছর ঈদের পরের দুদিনের জন্য আগেই অধিকাংশ গাড়ি বুকিং হয়ে যেত, কিন্তু এবার তেমনটি ঘটেনি। আশানুরূপ পর্যটক না আসলে শ্রমিকরা না খেয়ে মরবে। তবে আশা করছি প্রতিবারের মত পর্যটকের আগমন ঘটবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, উৎসব মানেই বান্দরবানে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। আশা করছি এবারও ব্যতিক্রম হবে না। তবে শুনলাম আবাসিক হোটেল গুলোতে আশানুরূপ বুকিং হয়নি। তারপরও পর্যটকদের বরণে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে পরিবহন, আবাসিক হোটেল এবং রেস্টুরেন্টগুলোর শ্রমিক-মালিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/জুন ২৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর