thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

‘আগে বাঁচি, পরে ঈদ’

২০১৭ জুন ২৪ ২০:৩৩:৩৩
‘আগে বাঁচি, পরে ঈদ’

সেলিম আহমেদ, হাকালুকি হাওর তীর থেকে ফিরে : ভাই, যে ভয়াবহ বিপদের মাঝে আছি চিন্তা কররাম কিলা খাইয়া বাঁচতাম। ঘরে ভাত নাই, থাকার জায়গা নাই, এক টাকা রুজি নাই। স্মরণকালের ভয়াবহ বিপদে পড়ে কিলা দিন যার আমরা বুঝরাম। আগে বাঁচি, বাঁচলে আগামী ঈদে কেনাকাটা করবো, ফূর্তি করবো, আনন্দ করবো। কথাগুলো বলছিলেন হাকালুকি হাওর পাড়ের ভুকশিমইল ইউনিয়নের গৃহবধূ নাজমা বেগম (২৭)।

এচিত্র শুধু ভুকশিমইল নয়, এ পুরো হাকালুকি হাওর তীরে চলছে ভয়াবহ বন্যা। এর আগে অকালবন্যায় শতভাগ বোরো ফসল হারিয়েছে মানুষ। দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। সেই সঙ্গে খরস্রোতা মনু নদীর ভাঙনের কবলে সর্বস্বহারা কুলাউড়ার মানুষ। সব মিলিয়ে হাওর পাড়ের মৌলভীবাজারের ৩ উপজেলার মানুষের মাঝে নেই ঈদে আনন্দ।
একদিকে পাহাড় আর অন্যদিকে এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা অপরূপ প্রকৃতির এই লীলাভূমিকে প্রকৃতি করেছে লন্ডভন্ড। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় অকালবন্যায় কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় উপজেলার ৮ হাজার ২৩০ হেক্টর বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ক্ষতের দাগ যখন দগদগে, তখনই হাওর তীরের মানুষ পড়েছে ভয়াবহ বন্যার কবলে। হাওর পাড়ে নেই ঈদের আনন্দ।

এদিকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সীমান্তের ওপাড় থেকে আসা কুলাউড়ার দুঃখখ্যাত মনু নদীর ভয়াল ছোবলে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে আরও ৬টি ইউনিয়ন। শুধু মনু নদী নয় পাহাড়ি ঢলে কুলাউড়া উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত গোগালী ও ফানাই নদীতেও ভাঙন সৃষ্টি হয়। ফলে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট আর আউশ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এ দু’টি বড় বিপর্যয়ের মাঝে ছিলো কালবৈশাখীর তান্ডব ও শিলাবৃষ্টির আঘাত। গোটা রমযান মাস জুড়ে কুলাউড়া উপজেলার মানুষ লড়াই করেছে নদী ভাঙন আর বন্যার সাথে। বিশেষ করে কৃষি নির্ভর নিম্নআয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। অকাল বন্যায় হাকালুকি হাওর তীরের ফসলহারা মানুষের জন্য ওএমএস ও চাল বিক্রি করা হলেও চাহিদার তুলনায় যা অপ্রতুল। সেই চালের জন্য অভাবি মানুষকে সেহরির পর থেকে ৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। তারপরও সবার ভাগ্যে জুটে না ৫ কেজি চাল। আর একবার পেলেও আবার পেতে অপেক্ষা করতে হয় ৬দিন।
স্মরণকালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পড়া কুলাউড়া মানুষের এই দুঃসময়ে সরকারি অপ্রতুল ত্রাণের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাড়িয়েছেন সাহায্যের হাত। তারপরও শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছায়নি শতভাগ সরকারি কিংবা বেসরকারি ত্রাণ।
কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান মনির জানান, অকালবন্যা বোরো ধান হারানোর পর এবার ভয়াবহ বন্যার কবলে ইউনিয়নের মানুষ। ইউনিয়নে মোট ৬ হাজারের বেশি পরিবার রয়েছে। বোরো ফসল হারা আর বন্যায় শতভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এখানে মানুষের মাঝে ঈদ নিয়ে কোন আগ্রহ বা আনন্দ নেই বললেই চলে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বি জানান, প্রকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে আসলে কুলাউড়ার মত অন্য উপজেলা এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ঈদ এলে গরীব অসহায় মানুষকে ভিজিএফ চাল দেওয়া হয়। কিন্তু এবার গরীব নয় যেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে এই চাল দেওয়া হচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, কুলাউড়ার মানুষ তাদের প্রবল মানসিক শক্তি দিয়ে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবে।
বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর জানান, অব্যাহত ভারিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাওরপারে দুই ইউনিয়নে চারটি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
(দ্য রিপোর্ট/এপি/জুন ২৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর