thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

ইলিশের মৌসুমে উপদ্রব ডাকাত ও ভারতীয় ট্রলার

২০১৭ জুলাই ১৬ ১১:৫৪:৪৩
ইলিশের মৌসুমে উপদ্রব ডাকাত ও ভারতীয় ট্রলার

বিধান সরকার, বরিশাল : এখনো ইলিশ পেতে পুবের বাতাসের অপেক্ষায় স্থানীয় নদীর জেলেরা। তবে প্রতিক্ষা শেষে আষাঢ় মাসের ২০ তারিখ থেকে থেকে সাগরে দেখা মিলছে ইলিশের। সাগরে ইলিশ পড়ায় ডাকাত আর ভারতীয় মাছধরা ট্রলারের উপদ্রব বাড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন জেলেরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মাছ পড়ায় এখন আবার ডাকাতদের মুক্তিপণ দিতে হচ্ছে বলে, ইলিশের চলমান মৌসুম নিয়ে শঙ্কায় ট্রলার মালিকরা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ বললেন, ডাকাত আর ভারতীয় মাছধরা ট্রলার বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ প্রতিকারে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।

আবহাওয়ার পরিবর্তনে ইলিশের মৌসুম পিছিয়ে যাওয়াতে এবারও দেরিতে ইলিশের দেখা মিলেছে। ইলিশের সুবাদে সাগরে বেড়েছে ডাকাতের উপদ্রব। ভোলা জেলার নূরবাদ এলাকার জেলে আ. বারেক বলেন, সুন্দরবনের নারিকেলবাড়ি এলাকায় ডাকাত কমলেও গঙ্গাপুর ভোলার পশ্চিমে ভেলুমিয়ার লাইনে ডাকাতের উপস্থিতি বেশ। অপরদিকে সাগরে মাছ ধরতে গেলে এখন বয়ারচর, দক্ষিণ হাতিয়া, কুতুবদিয়া, মহেষখালি এসব এললাকার ডাকাতরা হানা দিয়ে মাছ ও জাল লুট করে নিয়ে যায়। বাধা দিলে জেলেদের কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে আহত করে। মাস খানেক আগে তাদের এলাকার জসিম বোটের দুই মাঝিকে ধরে নিয়ে যায় ডাকাতরা। অবশেষে দুজনের জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছেন ট্রলার মালিক। মহিপুরের আনোয়ার গ্রুপের বোটের সেরাজ মাঝিকে ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে। ইলিশের মৌসুমে ট্রলারের মাঝির গুরুত্ব বোঝাতে চরফ্যাশন উপজেলার আহম্মদপুরের জেলে মো. সবুজ বলেন, মাছ বিক্রির টাকা ১০ ভাগ মালিক আর ৬ ভাগ মাঝি-মল্লাদের। এর মধ্যে জেলের পান ১ ভাগ আর মাঝি পান ২ ভাগ, মিস্ত্রী ও শলামাঝি পান দেড় ভাগ করে। একজন দক্ষ মাঝি বুঝতে পারেন ট্রলার কোথায় চালাতে হবে আর সাগরের কোন স্থানে মাছের দেখা মিলবে।

মনির মাঝি জানান, নূরবাদ থেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সোজা দক্ষিণে বোট চালায়ে তবেই জাল ফেলেন। তার বর্ণনামতে, ৪০ থেকে ৫০ বাম (এক বামে সাড়ে ৩ হাত) গভীর জলে তারা জাল ফেলেন। সন্ধ্যায় ফেলা জাল তুলতে কখনো বা ভোর হয়ে আসে। এখন মাছ পড়তে শুরু করায় ভারতীয় মাছধরা ট্রলার পশ্চিম চালনার বয়া ধরে পূব-উত্তরে চালিয়ে বঙ্গোপসাগরের সোনারচর এলাকার ১০ থেকে ১৫ বাম পানিতে এসে জাল ফেলে। আমাদের বোটে কেবল ইলিশ ধরার লাল সুতোর জাল। ভারতীয় বোটে থাকে লম্বা বা সানি জালের পাশাপাশি ট্রলিং জাল। এতে করে তারা আমাদের সীমানা থেকে ইলিশের পাশাপাশি গুঁড়া মাছ পর্যন্ত ধরে নিয়ে যায়। বাংলাদেশের কম বোটই আছে ২৮২ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন। বেশির ভাগই হচ্ছে ৭৬ হর্স পাওয়ারের। আর ভারতীয় বোটের ইঞ্জিনের হর্স পাওয়ার হলো ২৮৮ পর্যন্ত। ভারতীয় ১০ থেকে ১৫টি বোট সংঘবদ্ধ হয়ে মাছ ধরে। ওদের বোটে ওয়্যারলেস আর অস্ত্রও আছে। আমাদের জলসীমায় জাল ফেলতে মানা করলে পাথর ছুড়ে মারে। কখনো বা মেশিন দিয়ে গরম পানি ছোড়ে। জালও কেটে দেয়। এদের কারণে তারা ঠিকমতো মাছ ধরতে পারেন না। এই মাঝি আরো বলেন, এবার ১১ দিন পর এসেছেন ৬০ মণ ইলিশ নিয়ে বরিশালের পাইকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। ঠিকমতো মাছ পড়লে দেড় থেকে দুই শ মণ মাছ আনা কোনো বিষয় নয়।

এফবি তমা ফিশিং বোটের স্বত্ত্বাধিকারী বাপ্পি দাস জানান, জাল, ট্রলার মেরামত করে মাঝি-মল্লাদের বাজার, বরফ, জ্বালানি তেল সব মিলিয়ে তিন লাখ টাকার ওপরে খরচ হয়। মাছ না পেলেও মাঝি-মল্লাদের চালিয়ে রাখতে হয়। কখনো বা যে পরিমাণ মাছ পড়ে তা বিক্রি করে বাজারের টাকা ওঠে না। এখন মাছ পড়ায় তারা যখন লোকসান পুষিয়ে ওঠার জন্য নড়েচড়ে বসেছেন ঠিক সেই সময় ডাকাতের উপদ্রব এবং ভারতীয় জেলেরা অবৈধভাবে প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ডাকাতরা ট্রলারের মাঝিদের ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে। অপরদিকে ভারতীয় জেলেদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে কোন এলাকায় মাছ রয়েছে তা নির্ণয় করতে পারায় এখন বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানায় প্রবেশ করে মাছ নিয়ে যাচ্ছে। এর থেকে রক্ষায় নৌবাহিনীর টহল বোট নামানোর দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।

বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি অজিত কুমার দাস বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ভরা মৌসুম হলেও সে তুলনায় মাছের দেখা মেলেনি। অপরদিকে পুবের বাতাস নেই বলে ভেতর গাঙে পানি বাড়েনি; তাই স্থানীয নদীতে ইলিশের দেখা এখন পর্যন্ত মেলেনি। কেবল সাগরে মাছ পড়া শুরু করায় বাজার দর সহনীয় পর্যায়ে কিছুটা। বর্তমানে সাগরের ইলিশ রপ্তানিযোগ্য সাইজ (৫০০-৭০০ গ্রাম) ৮০০ টাকা কেজি, ৫০০ গ্রাম ভরের মাছ ৭০০ টাকা কেজি, ৪টায় কেজি ভরের মাছের দর ৪০০ টাকা, এক কেজি ভরের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে সাড়ে ১২০০ টাকায় এবং দেড় কেজি ভরের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে দেড় হাজার টাকা দরে। তিনি মনে করেন, সামনে আরো ইলিশের দেখা মিলবে এবার। এক্ষেত্রে অন্তরায় ডাকাতের উপদ্রব ও ভারতীয় ট্রলার যা মংলার বাইরে দুরবিন দূরত্বে থাকে। এদের নিয়ন্ত্রণে নৌবাহিনীর একান্ত প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

এ নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দের সঙ্গে কথা হলে বলেন, এই বিষয়গুলো তারা ইতিমধ্যে জানতে পেয়েছেন। এ নিয়ে সম্প্রতি সভা হয়েছে তাদের। সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়েছেন। এমনকি অপারেশন করতে হেলিকপ্টার পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। ডাকাতদের বিষয়ে বলেন, এরা উপকূল থেকে সমুদ্রে যায়। এদের উপকূলে রোধ করার ব্যবস্থা করলেই আর ডাকাতি করতে পারবে না। আর আমাদের সমুদ্রসীমা ব্যাপক হওয়াতে যখন আমাদের রক্ষীরা অন্যদিকে টহল দেয় ঠিক তখন সুযোগ বুঝে ভারতীয় জেলে বোটগুলো প্রবেশ করে। এসব রোধ করে জেলেদের রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।

(দ্য রিপোর্ট/এম/জুলাই ১৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর