thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি

২০১৭ জুলাই ২১ ১৪:১৬:২২
গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধায় চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। প্রতিদিনেই চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্লাবিত হওয়া ১৯৪ গ্রামের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও বিস্তীর্ণ আবাদি জমি থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। জেগে উঠছে বানভাসীদের ঘরবাড়ি। অনেক বানভাসী মানুষ নতুন করে তাদের ঘরবাড়ি ও বাড়ির উঠান মেরামত করছেন। তবে পানিবন্দি আড়াই লাখ মানুষের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটের পাশাপাশি দুর্ভোগ কমেনি।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ব্রক্ষপুত্র নদের পশ্চিম তীরের উচু বাঁধ ও রেলের জায়গায় আশ্রয় নেওয়া শতশত পরিবার। এসব পরিবারে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া পয়ঃনিস্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এসব মানুষ আরও বিপাকে পড়েছেন। অনেকের মধ্যে পানিবাহিত নান রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়লেও মিলছেনা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা। ফলে দিনদিন এসব মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালাসী ঘাটের রেলের জমিতে শতাধিক হতদরিদ্র পরিবার বন্যা আর ভাঙনের শিকার হয়ে তাদের শেষ সম্বল নিয়ে কোনও রকমে বাঁধ ও রেলের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। কর্মহীন এসব মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অনেকে এক বেলা ভাত খেলেও মেলেনি তরকারি। ফলে লবণ, মরিচ, আলু ভর্তা আর পাট শাক দিয়ে কোনো রকমে ভাত খেতে হচ্ছে তাদের।

এসব মানুষ অভিযোগ করে বলেন, গত ১৫ দিন ধরে এ অবস্থা চললেও তাদের কপালে জোটেনি ত্রাণ সহায়তা। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের কেউ কোনো খোঁজখবরও নেয়নি।

বাঁধে আশ্রয় নেওয়া জোহরা বেগম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বন্যার কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে রেলের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি। থাকার মতো খড়ের ছাপড়া তুলে তার মধ্যে হাঁস-মুরগিসহ স্বামী সন্তান নিয়ে থাকতে হচ্ছে। হাতে টাকা আর কাজকর্ম না থাকায় চাল, ডাল কেনা সম্ভব হচ্ছেনা। এ কারণে খেয়ে না খেয়ে দিনা কাটাতে হচ্ছে।’

বাঁধে আশ্রয় নেওয়া আরেক নারী আমেনা বেগম বলেন, ‘১৫ দিন ধরে আশ্রয় নিয়ে এখানে থাকলেও কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি। এমনকি কেউ খোঁজ খবরও নেয়নি। বিশুদ্ধ পনি, খাবার ও পয়ঃনিস্কাশননের অভাব থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে। কোনো রকম এক বেলা দুমুঠো ভাত জুটলেও কপালে তরকারি জোটেনা। এ কারণে আলু ভর্তা, কচু ভর্তা, পাট শাক দিয়ে ভাত খেতে হচ্ছে।’

আনোয়ার হোসেন নামে আর একজন বলেন, ‘কেমনে পড়ে আছি, কি খাই নাকি খাই না তার কেউ খোঁজ রাখেনা। বন্যা আর ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। রেলের জায়গায় গরু, ছাগল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এভাবে এখানে কতদিন থাকতে পারবো তাও জানিনা।’

এবারের বন্যায় জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ পনিবন্দি হয়ে পড়েন। গত শুক্রবার থেকে পানি কমা শুরু করলেও এখনো অধিকাংশ লোকজন পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যার পনিতে ডুবে ইতোমধ্যে জেলার চার উপজেলার বিস্তীর্ণ জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। চার উপজেলায় বন্যায় অন্তত ৫০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এছাড়া পুকুরের মাছ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পানিতে ভেসে যাওয়ায় ক্ষতির শিকার হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পানিতে ডুবে তিন শিশু ও এক বৃদ্ধার মৃত্যুও হয়েছে।

উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন সরকার বলেন, ‘তার ইউনিয়নের বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিরতরণ অব্যহত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া আশ্রয়হীন পরিবার ও আশ্রয় নেওয়া মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল হালিম টলষ্টয় বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা অব্যহত রয়েছে। আশ্রয় নেওয়া মানুষের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের সহায়তার প্রক্রিয়া চলছে।’

(দ্য রিপোর্ট/কেএনইউ/এস/জুলাই ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর