thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

নিখোঁজ ৪ জনের খোঁজ মেলেনি, ফের পাহাড় ধস

২০১৭ জুলাই ২৪ ১৯:৩৯:২৫
নিখোঁজ ৪ জনের খোঁজ মেলেনি, ফের পাহাড় ধস

বান্দরবান প্রতিনিধি : অবিরাম বর্ষণে বান্দরবানের রুমা উপজেলা সড়কে রবিবারের (২৩ জুলাই) পাহাড় ধসে নিখোঁজ ৪ জনের সন্ধান মেলেনি এখনও। বৃষ্টির কারণে নিখোঁজদের উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্বজনদের খোঁজে ঘটনাস্থলে ভীড় জমিয়েছেন নিখোঁজদের আত্মীয় স্বজনেরা। এদিকে অব্যাহত ভারী বর্ষণে সোমবারও (২৪ জুলাই) রুমা সড়ক’সহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড় ধসে চট্টগ্রাম-বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, টানা ভারী বর্ষণে রবিবার (২৩ জুলাই) সকাল ১১টায় বান্দরবান-রুমা সড়কের দলিয়ানপাড়া এলাকায় বিধস্ত ভাঙ্গা সড়ক পায়ে হেটে পার হওয়ার সময় পাহাড় ধসে পড়ে পাহাড়ী মারমা সম্প্রদায়ের দুই বোন’সহ ৫ জন নিখোঁজ হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য’সহ স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে। দুর্ঘটার প্রায় চার ঘন্টা পর উদ্ধারকর্মীরা রবিবার বিকেলে মংশৈহ্লা কার্বারীর ছোট মেয়ে চিংমে হ্লা (১৮) এর মৃতদেহ উদ্ধার করেন। এখনও নিখোঁজ অপর ৪ জনের সন্ধান মেলেনি।

নিখোঁজরা হচ্ছেন- রুমা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা অফিস সহকারী মুন্নি বড়ুঁয়া, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা গৌতম নন্দী, ডাক বিভাগের কর্মচারী মো. রবিউল, এবং পাড়া কার্বারী মংশৈহ্লা’র বড় মেয়ে উমেচিং মারমা।

স্বজনদের খোঁজে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘটনাস্থলে ভীড় জমিয়েছেন নিখোঁজদের আত্মীয় স্বজনেরা।

নিখোঁজ স্বাস্থ্য সহকারী মুন্নি বড়ুঁয়ার ছোটভাই রাহুল বড়ুঁয়া ছোটন বলেন, পাহাড় ধসে নিখোঁজ রয়েছেন আমার বড়বোন মুন্নি বড়ুঁয়া (৩৫)। সে রুমা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা অফিস সহকারীর চাকরি করতো। দুদিন হয়ে যাচ্ছে আমার বোনকে উদ্ধার করা যায়নি। বাড়িতে ছোট্ট ভাগ্নি মায়ের জন্য কান্না করছেন।

পাড়া প্রধান মংশৈহ্লা কার্বারী বলেন, পাহাড় ধসে আমার দুই মেয়ে মাটি চাপা পড়েছে। ছোট মেয়ে চিংমে হ্লা (১৮) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু বড় মেয়ে উমেচিং মারমা’র এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। রবিবার সকালে বান্দরবান যাওয়ার পথে তারা পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট অফিসার ইকবাল হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিস এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা দ্বিতীয় দিনের মত সোমবার সকালে নিখোঁজ চারজনকে উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। কিন্তু ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় উদ্ধার তৎপরতা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টিতে পানির সঙ্গে নামছে পাহাড় ধসের মাটি। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধারকর্মীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এদিকে অব্যাহত ভারী বর্ষণে সোমবারও রুমা সড়ক’সহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড় ধসে জেলা শহরের কালাঘাটা, বালাঘাটা, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নতুন করে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এদিকে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

বান্দরবানের মৃত্তিকা সংরক্ষণ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘন্টায় বান্দরবানে ২০১ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তার মধ্যে রবিবার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১২৩ মিলি মিটার। এখনও ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। টানা বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কা আরও বাড়ছে।

জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, পাহাড় ধসে নিখোঁজ ৪ জনের মৃতদেহ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অব্যাহত ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির শঙ্কা বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো ছেড়ে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম-বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

এদিকে টানা ভারী বর্ষণে বান্দরবানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেড়েছে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানিও। বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং রাঙ্গামাটি জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে দুদিন ধরে।

প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানায়, গত শনিবার থেকে বান্দরবানে টানা ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টিতে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়া থেকে বাইতুল ইজ্জত পর্যন্ত কয়েকটি স্থানে প্রধান সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কের পুলপাড়া বেইলী ব্রিজ পানিতে ডুবে গেছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং রাঙ্গামাটি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

দুদিন ধরে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। অনেকে নৌকা, রিক্সা এবং ভ্যান গাড়ীতে করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পার হচ্ছে তলিয়ে যাওয়া সড়কপথ।

স্থানীয় যাত্রী আলমগীর হোসেন, জোবায়ের আহমেদ বলেন, ভোগান্তির যেন শেষ নেই। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মাঝখানের পথটি পার হতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া ১১০ টাকা, কিন্তু ছোট্ট এ পথটি পার হতেই ক্ষেত্র বিশেষে লাগছে তার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা। দুর্যোগ সবার জন্য দুর্ভোগ নয়, কারও জন্য আর্শীবাদও বয়ে আনে।

পরিবহন শ্রমিক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কে পানি উঠায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, কেরানীহাট সড়কে চলাচলকারী সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ঢাকার গাড়ীগুলো পানির উপর দিয়ে রিস্ক নিয়ে চলাচল করছে। সকালেও ঢাকার গাড়ীগুলো বান্দরবান এসেছে।

এদিকে বৃষ্টিতে বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী তীরবর্তী অনেক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বান্দরবান শহরের আর্মীপাড়া, ইসলামপুর, শেরেবাংলা নগর এবং লামা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, ক’দিন ধরে বান্দরবানে অবিরাম ভারী বর্ষণ হচ্ছে। বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম এবং রাঙামাটি দুটি পথেই সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে লোকজনদের আশ্রয় কেন্দ্র এবং নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/জুলাই ২৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর