thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

পাকিস্তানে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি: কিসের আলামত?

২০১৭ জুলাই ২৮ ২১:২৮:১১
পাকিস্তানে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি: কিসের আলামত?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণার পর তিনি পদত্যাগ করেছেন। নওয়াজ তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন এবং তিনবারই তিনি মেয়াদ শেষ হবার আগেই ক্ষমতা হারিয়েছেন। প্রথমবার রাষ্ট্রপতির সাথে দ্বন্দ্বের জের ধরে পদত্যাগ করেছেন, দ্বিতীয়বার সেনাবাহিনী তাঁকে হটিয়েছে, এবার আদালত।

শুধু নওয়াজের ক্ষেত্রেই নয়, পাকিস্তানে অন্য প্রধানমন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও ইতিহাস একইরকম। নওয়াজ পাকিস্তানের ১৮তম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর আগের ১৭জনের কেউই তাদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।

বিবিসি বাংলার এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেকেই মনে করছেন সুপ্রিম কোর্ট দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যেটা গণতন্ত্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে। অন্যরা বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন। পাকিস্তানে রাজনৈতিক কূটকৌশলের মাধ্যমে দেশের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী যেভাবে বেসামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে আসছে, তারা এই ঘটনাকে সেই দীর্ঘ ইতিহাসের ধারাবাহিকতা হিসেবেই দেখছেন।

পনেরো মাস ধরে চলা মামলার শুনানি বিতর্কে জর্জরিত ছিল। এই মামলা হবার কথা ফৌজদারি আদালতে। সুপ্রিম কোর্ট, যেটা একটি আপিল আদালত, প্রথমে মামলা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু পরে তারা শুধু মামলাটি আমলেই যে নিলো, তাই নয়, তারা নিজেরাই একটি তদন্ত শুরু করলেন যেখানে সামরিক গোয়েন্দা সার্ভিসকে প্রধান ভূমিকা দেওয়া হয়।

অনেকেই মনে করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সার্বিক অভিযান হয়তো স্বপ্নই রয়ে যাবে, তবে এই রায় হয়তো দেশে নতুন রাজনীতিকদের আগমনের পথ খুলে দেবে। যেটা অতীতেও প্রায়ই ঘটেছে।

শুক্রবারের রায়ে আসলো নওয়াজের পরিবারের সম্পদ নিয়ে তদন্তের প্রেক্ষাপটে। দু'বছর আগে পানামা পেপারসে যে তথ্য ফাঁস করা হয়, তাতে দেখা যায় নওয়াজের পরিবারের সদস্যরা অফ-শোর কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচার করে থাকতে পারে।

নওয়াজ শরিফ এই অভিযোগ সব সময়ই অস্বীকার করেছেন। কিন্তু পাঁচজন বিচারপতি সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেন যে তদন্তে দুর্নীতির যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিচারপতি এজাজ আফজাল খান বলেন, নওয়াজ শরিফ আর ‘সংসদের একজন সৎ সদস্য থাকার যোগ্য নন।’

সুপ্রিম কোর্ট দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)কে দুর্নীতি বিরোধী আদালতে নওয়াজ শরিফ এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে চারটি নোটিস পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। আদালত এনএবিকে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই নোটিস দাখিল করতে বলেছে। দুর্নীতি বিরোধী আদালতগুলোকে ছয় মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।

নওয়াজ শরিফ আর মাত্র এক বছরের কম সময় পরে পাকিস্তানের ইতিহাসে মেয়াদ পূর্ণ করা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছিলেন। তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন, এবং ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত সরকার প্রধান ছিলেন।

নওয়াজের বিরুদ্ধে ১৯৮০র দশক থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। পানামা পেপারসে ২০১৫ সালে যেসব তথ্য ফাঁস করা হয়েছিল, সেগুলো ১৯৯০ দশকের মাঝা-মাঝি সময়ে আরেকটি ফেডারেল তদন্তের অংশ ছিল।

নওয়াজ শরিফের উত্তরাধিকারী হিসেবে কে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ভাই শাহবাজ শরিফকে অনেকেই শক্তিশালী দাবীদার হিসেবে দেখছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)কে একজন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে অনুমতি দেবেন, যিনি ২০১৮ সালে নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

এই বিষয়ে পিএমএল-এন সংসদে যাদের সব চেয়ে বেশি আসন আছে শীঘ্রই একটি বিবৃতি দেবে। বিরোধী দলগুলোরও সুযোগ থাকবে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তাদের নিজস্ব প্রার্থী দেওয়ার।

বিরোধীদের উল্লাস

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মোশাররফ নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিওতে সন্তোষ প্রকাশ করেন পাকিস্তানের সাবেক সেনা শাসক জেনারেল পারভেজ। অপরদিকে পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ (পিটিআই) এর প্রধান ও সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খানও রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

এদিকে শুক্রবার আদালত প্রাঙ্গণে অনেক মানুষকে বিচারপতিদের রায়কে উল্লাস করে স্বাগত জানাতে দেখা গিয়েছে। রায় ঘোষণার পরপরই বিরোধী দলের সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পরে। বিভিন্ন খবরে জানা যায়, তারা রাস্তায় স্লোগান দিয়ে আনন্দ করে এবং মিষ্টি বিতরণ করে।

আদালতের পিটিআই-এর ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মেহমুদ কুরেশি দিনটিকে 'ঐতিহাসিক দিন' বলে বর্ণনা করে বলেন, তদন্তকারীরা 'প্রবল চাপ উপেক্ষা করে ন্যায় বিচারের পক্ষে কাজ করেছেন।'

রায় ঘোষণার সময় আদালত ঘিরে ৩,০০০ অতিরিক্ত সশস্ত্র পুলিশ এবং আধা-সামরিক 'পাকিস্তান রেঞ্জার্স' মোতায়েন করা হয়।

যে নাটকীয় ঘটনা মাসের পর মাস ধরে গণমাধ্যমে খবরের খোরাক জুগিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সমর্থন এনেছে এবং তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরাও হয়েছে, এই রায়ের মাধ্যমে সেই নাটক চরম পর্যায়ে চলে গেল।

এই বিভেদ মূলত দলীয় ভিত্তিতেই প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু এ'সব উত্তপ্ত অভিযোগের মাঝে অনেকেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

তবে নওয়াজ শরিফই প্রথম প্রধানমন্ত্রী নন, যাকে পানামা পেপারসে তথ্য ফাঁসের ফলে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এবং তার স্ত্রী একটি অফ-শোর কোম্পানিতে লক্ষ লক্ষ ডলারের বিনিয়োগ লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে পানামা পেপারসে তথ্য ফাঁস হলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/জুলাই ২৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর