thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার

‘খিদেও লাগে না আর ক্লাস ফাঁকিও দেই না’

২০১৭ জুলাই ২৮ ২২:১৬:৩২
‘খিদেও লাগে না আর ক্লাস ফাঁকিও দেই না’

শহীদুল ইসলাম পলাশ, কিশোরগঞ্জ : ‘দুপুরে খিদেও লাগে না এখন আর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাড়িতেও যাই না। বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার চালুর পর তিন মাসেই আমাদের স্বাস্থ্য-চেহারাও মাশ আল্লাহ্ অনেক ভালো হয়েছে।’ এভাবেই কথাগুলি বলছিল কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের নাজিমুদ্দিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র হাকিম মিয়া ও ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী জেসমিন আক্তার।

তাদের দুজনের মতো সকল ছাত্র-ছাত্রী এক সুরে বলে উঠে এখন পড়াশোনাতেও অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগী আমরা। যতগুলো ক্লাস হয়, সবগুলোতেই থাকে তাদের আনন্দঘন উপস্থিতি। সব মিলিয়ে শিশুবান্ধব ও অনুকরণীয় পরিবেশ বিরাজ করছে বিদ্যালয়টিতে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নাজিমুদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা দুপুরে খিচুরি খাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, এখন ক্লাস চলাকালে আর ক্ষুধায় কষ্ট করতে হয় না। তাদের জন্য স্কুলে প্রতিদিন দুপুরে খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগে দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীদের অনেকে দুপুরের খাবারের বিরতিতে বাড়ি গিয়ে আর ক্লাসে ফিরত না। এখন তাদের আর বাড়িতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সবাই মিলে বিদ্যালয়ে বনভোজনের আমেজে পরম তৃপ্তিতে দুপুরের ভোজ সেরে নেয় তারা।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তৃষ্ণা রাণী দাসের কাছে এমন আনন্দেও কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি দেখার মতো এক দৃশ্য। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী মনে হয় একই পরিবারের সন্তান। সবাই কি সুন্দর বাড়িতে যেভাবে খায়, সেভাবে খেয়ে দেয়ে সবকিছু নিজেরাই আবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখে দিচ্ছে। অন্যদিকে যেসব শিশু বাড়িতে কম খেত কিংবা খাবারদাবারে অমনোযোগী ছিল, তারাও পেট ভরে খাচ্ছে।

তিনি বলেন, এসব আয়োজন করে আমরা মূলত শিশুদের মিলেমিশে থাকা বা যৌথতার একটা অনুশীলন করানোর চেষ্টা করছি বিদ্যালয়ে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, অভিভাবকদের সহযোগিতায় গত আগস্ট মাস থেকে এ বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার চালু করা হয়েছে। বাইরে থেকে কোনো খাবার কিনে এনে শিশুদের খাওয়ানো হয় না। অভিভাবকরা সপ্তাহে একবার এক কেজি চাল, নগদ ৫০ টাকা অনুদান হিসেবে পাঠিয়ে দেন স্কুলে। সেই চাল ও টাকা দিয়ে আয়োজন করা হয় রান্নাবান্না। শুধু তাই নয়, এলাকার সচ্ছল লোকজনও শিশুদের খাবারের জন্য নিয়মিত অনুদান দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে শিশুদের প্রায় প্রতিদিন পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে।

শিক্ষকরা আরও জানান, বিদ্যালয়টিতে ৩৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। মূলত তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যই দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম পালার (শিশু ও প্রথম শ্রেণি) শিক্ষার্থীদর ১২টার মধ্যেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। তাই তাদের দুপুরের খাবার প্রয়োজন হয় না। দুপুরের খাবার চালু করার পর বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতি অনেক বেড়ে গেছে। দুপুরে শিশুদের জন্য যে আয়োজনটা করা হয়, এতে অংশ নিতে মুখিয়ে থাকে তারা। অনেকের আবার স্কুলের পাশেই বাড়ি। তারা ইচ্ছে করলে বাড়ি যেতে পারে, কিন্তু দেখা যায় এখন আর দুপুরে কেউ বাড়ি যায় না। স্কুলেই সবার সঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয় তারা।

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র হাকিম মিয়া বিদ্যালয় থেকে এক কিলোমিটার দূরে তেরহাশিয়া গ্রামে তাদের বাড়ি। প্রায়ই সে দুপুরের খাবার বিরতিতে বাড়ি গিয়ে আর ফিরে আসত না। কিন্তু এখন সে সব ক্লাস করে বাড়ি যায়।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নয়নমণিসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, দুপুর ১২টার পরই তাদের খিদে লেগে যায়। এখানে শহরের মতো তারা খাবার নিয়ে যায় না। তাই পরের সময়টা পেটে খিদে নিয়ে ক্লাস করতে হতো তাদের। অনেক সময় খিদেও জন্য ক্লাস ফাঁকি দিয়ে চলে যেতাম। এখন আর খিদেও লাগে না আর ক্লাসও ফাঁকি দেই না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খায়রুল বাসার মহসীন বলেন, কোনো দিন খিচুরি, কোনো দিন বিরিয়ানি, কোনো দিন সবজি আর ভাত, কোনো দিন ভাতের সঙ্গে ডিমের তরকারি দিয়েই প্রতিদিনের খাবার চলছে। তিনি আরও বলেন, করিমগঞ্জের ইউএনওর উৎসাহ ও অভিভাবকদের সহযোগিতা না পেলে এ আয়োজন সম্ভব হতো না।

তিনি আরও জানান, এসব করতে গিয়ে শিক্ষকদের পরিশ্রম অনেক বেড়ে গেলেও তাঁরা হাসিমুখে সব মেনে নিয়েছেন।

করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মাহমুদা বলেন, আমরা প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু করতে চাই। জনপ্রতিনিধি ও প্রধান শিক্ষকদের এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। তবে নাজিমউদ্দিন বিদ্যালয়ে যা হচ্ছে, তা এক কথায় অনুকরণীয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ ধরে রাখতে যা সম্ভব তার সবই করা হবে বলে জানান তিনি ।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর