thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

হজ্জ পরবর্তী হাজীদের করণীয়

২০১৭ আগস্ট ০৩ ১১:৫৯:২৪
হজ্জ পরবর্তী হাজীদের করণীয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : আমরা জানি হজ্জ ইসলামের পাঁচটি মৌলিক ইবাদতের একটি। হজ্জ পালনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি মু’মিন মুসলমান আল্লাহ তায়ালার খুব কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পান।

প্রতি বছর জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মুসলমান আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেন। লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হয় : লাব্বায়েক আল্লাহুমা লাব্বায়েক। লাব্বায়েক, লা শারিকালাকা লাব্বায়েক।

ইসলামের প্রাণকেন্দ্র মক্কা ও মদিনায় সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। গোটা মুসলিম বিশ্বের মধ্যকার সৌভ্রাতৃত্ব, প্রেম-প্রীতি এবং ঐক্য ও সংহতির চরমতম নিদর্শন প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। ভ্রাতৃত্বের এ ধরনের নিদর্শন অন্য কোথাও দেখা যায় না। হজ্জ মানুষকে ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শের বাস্তব প্রশিক্ষণ প্রদান করে এবং নতুন চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা ও প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে পৃথিবীর প্রত্যেক অঞ্চলকে আলোকিত করে। সঙ্গে সঙ্গে মদীনা মনওয়ারা গমন, প্রিয়নবী (সা.) এর রওজা মুবারক জিয়ারত, মসজিদে নববীতে নামাজ আদায়, ইস্তেগফার ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং বিশ্বনবীর খাঁটি্ উম্মতে পরিণত করে। তাছাড়া সাফা ও মারওয়া সায়ী করা, মুজদালিফায় অবস্থান করা, রমী করা বা শয়তানকে ঢিল ছোঁড়া, কুরবানি করা, মাথা মুণ্ডন করা, বিদায়ী তওয়াফ করার মাধ্যমে হজ্জের আনুষ্ঠানিক কার্যাদি শেষ করার হয়। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন হজ্জ হতে প্রত্যাবর্তন করতেন তখন প্রতিটি উঁচু ভূমিতে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন এবং এ দু’আ পড়তেন : আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং তাঁরই যাবতীয় প্রশংসা। তিনি সবার উপর সর্বশক্তিমান। আমরা ফিরে এসেছি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতকারী, সিজদাকারী ও প্রভুর প্রশংসাকারী হয়ে। হজ্জকারী বাড়ি পৌঁছবার পূর্বে বাড়িতে খবর দেয়া মুস্তাহাব। বাড়ি পৌঁছবার আগে মহল্লার মসজিদে দু’রাকাআত নামাজ পড়বেন। তারপর এ দু’আ পড়তে পড়তে বাড়িতে প্রবেশ করবেন : “আল্লাহ তওবা। আল্লাহ তওবা, আল্লাহার উদ্দেশেই আমরা ফিরে এসেছি, আশা করি আমাদের সব গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন।”

হজ্জ সমাধা করে হাজীরা যখন দেশে ফিরে আসেন তখন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও দেশবাসী তাঁদের সম্মানে অভ্যর্থনা জানাবেন, তাদেরকে সালাম বলবেন। তাদের সাথে মুসাফাহা করবেন এবং তাঁদের নিকট দু’আ চাইবেন। কারণ তাঁদের দু’আ কবুল হয়। হাদিস শরীফে আছে : “কোন হাজীর সাথে সাক্ষাত্’ হলে তাঁকে সালাম দিবে। তাঁর সাথে মু’আনাকা ও মুসাফাহা করবে এবং দু’আর দরখাস্ত করবে যেন তিনি বাড়ির ভিতর প্রবেশ করার পূর্বে তোমার জন্য দু’আ করেন। কারণ হাজীর সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে।”

আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ ও ওহীর ভিত্তিতে জীবন পরিচালনার সিদ্ধান্ত। হাজী সাহেবানরা ইহরামের সময় সাদা সেলাই বিহীন দু’টুকরো কাপড় পরিধান এক দিকে অহংবোধ দূর করে অপর দিকে মৃত্যুর সময়ের কাফন পরার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তারা এক আল্লাহর কাছে আত্মসর্ম্পণকারী, আল্লাহর আইন ছাড়া কারো আইন মেনে চলবে না, আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বুনিয়াদে সমগ্র জীবনধারা পরিচালনা করবে বলে শপথ গ্রহণ করে বিধায় হজ্জ থেকে ফিরে এসে এ ধারাগুলো খেয়াল রাখতে হবে।

হজ্জ সমাধা করে ফিরে যে কাজ গুলো করা উচিত-

হজ্জের শিক্ষা ভুলে না যাওয়া : হজ্জ হতে প্রত্যাবর্তনের পর বায়তুল্লাহ শরীফ ও রওযা মুবারক জিয়ারতের যে নিয়ামত আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন তা ভুলে না যাওয়া এবং উদাসীন হয়ে ক্রীড়াকৌতুক, খেল-তামাশা ও পাপ কার্যে লিপ্ত হয়ে অকৃতজ্ঞ না হওয়া। কারণ মাককুল হজ্জের নিদর্শন হলো- হজ্জ থেকে ফিরে এসে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত এবং আখিরাতের জন্য অধিক উদগ্রীব হয়ে ওঠা।

বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ব শিক্ষাকে কাজে লাগানো : একাকী বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকবেন না বরং মুসলমানদের সাথে সংঘবদ্ধভাবে জামা’আতী জিন্দেগী যাপন করবেন। বিশ্বভ্রাতৃত্ব, মানব ঐক্য ও অবিচ্ছেদ সংহতির যে মহান শিক্ষা হজ্জ থেকে নিয়ে এসেছেন তা বাস্তবায়নের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করবেন।বিশ্ব মুসলিম হজ্জ সম্মেলন হতে গোটা মুসলমান জাতি ও আপনার দেশের উন্নতি সাধন এবং ইসলামকে জীবনের সর্বস্তরে বাস্তবায়নের কোন পরিকল্পনা ও কর্মসূচী গ্রহণ করে থাকলে তদনুযায়ী অবশ্যই কাজ করবেন।

হজ্জ ত্যাগ-তিতিক্ষার আদর্শ : হজ্জের পবিত্র অনুষ্ঠান আল্লাহর রাহে উৎসর্গকৃত প্রমাণের অধিকারী মুসিলম উম্মাহর মধ্যে হযরত ইব্রাহিম(আ.), ইসমাইল(আ.) ও হাজেরা (আ.) এর ত্যাগ-তিতিক্ষা, শ্রম কুরবানি, আত্মসমর্পণ ও অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সুমহান ঐতিহ্য হৃদয় মনকে অনুপ্রাণিত করে তোলে। তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার শিক্ষণীয় ঘটনাবলি মুসলিম মন-মানসকে অভিভূত করে ত্যাগ-তিতিক্ষা ও প্রেরণাকে জাগ্রত করে তোলে এবং সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে ত্যাগের মানসিকতা তৈরি করবেন।

দুনিয়ার আচরণের সাথে মিশে না যাওয়া : হজ্জ করে এসে যার তার কাছে অযথা কিছু বর্ণনা করে বেড়াবেন না। তাতে মনে রিয়া ও অহংকার জেগে উঠতে পারে। হজ্জে যে টাকা পয়সা ব্যয় হয়েছে তা উল্লেখ করে আফসোস ও গল্প করবেন না। হজ্জে যে কষ্ট তকলীফ হয়েছে তা বর্ণনা করবেন না। এসব কাজে হজ্জের সওয়াব বিনষ্ট হয়। হজ্জের নাম দিয়ে হাজী সাহেব সেজে রোজগার করবেন না। বরং অত্যন্ত পরহেজগারীর সাথে বাকি জিন্দেগী অতিবাহিত করবেন। হজ্জ করে এসে অনেকে আবার হালাল কাজ কারবারও করতে চায় না। হালাল করতে গিয়ে হারামে পা রাখবেন না। এদিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে।

পুনরায় তাগুতের অনুস্রণ না করা : মুসলমান সর্বক্ষেত্রেই মুসলমান। তিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রেই একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করবেন, অপর কারো নয়। কা’বা শরীফ, মসজিদ ও নিজ গৃহে আল্লাহর আইন মেনে চলা এবং বহিরবাড়িতে, কাজ ও কারবারে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানবরচিত আইন কানুন মেনে চলা মুসলমানদের নিদর্শন নয়। বরং সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার দেয়া আইন কানুন মেনে নেওয়াই হলো হজ্জের শিক্ষা। এই শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবেন।

দুনিয়ার নানাবিধ অন্যায় কাজের সাথে নিজেকে জড়িত না করা : কাবাঘর জিয়ারতের মাধ্যমে নিজেকে যে নিষ্পাপে পরিণত করলেন হজ্জ থেকে ফিরে সে ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সুদ ঘুষের সাথে নিজেকে জড়িত করা যাবে না, হারাম খাওয়া যাবে না, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ দখল করা যাবে না, ইয়াতিমের সম্পদ ভক্ষণ করা যাবে না, হজ্জে যাওয়ার আগে কোন অন্যায় কাজের সাথে জড়িত থাকলে ফিরে এসে পুনরায় তার সাথে জড়িত হওয়া যাবে না। নিজেকে আল্লাহর রাস্তায় সপে দিতে হবে। নিজের জীবন ও সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে হবে। অহংকার পরিত্যাগ করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/একেএ/এনআই/০৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর