thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

‘হারবাল নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা ভাঙতে চাই’

২০১৭ আগস্ট ০৩ ২০:৪৭:৪৮
‘হারবাল নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা ভাঙতে চাই’

বাবা ও দাদা দুজনেই ছিলেন নামকরা কবিরাজ ও হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। পরিবার থেকেই হারাবালের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তার। এরপর স্বামীর সঙ্গে লন্ডন গিয়ে সেখানে হারবাল ও পুষ্টিবিজ্ঞানে উচ্চতর পড়াশুনা করেন নন্দিতা শারমিন।দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা ও ভালোবাসা এবং পারিবারিক উত্তরাধিকার ও ঐতিহ্য বজায় রাখতে তিনি হারবাল নিয়ে কাজ করতে চান। হারবাল নিয়ে তার পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে।

দ্য রিপোর্ট : আপনি হারবাল চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে আগ্রহী হলেন কেন ?

নন্দিতা শারমিন : সত্যি কথা বলতে কি এটা আমার পারিবারিকভাবে পাওয়া বলতে পারেন। আমার জন্ম ও আদি নিবাস নরসিংদী জেলায়। আমার বাবা ও দাদা দুজনেই ছিলেন ঐ অঞ্চলের নামকরা কবিরাজ ও হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। বাবা ব্যাংকে চাকরি করলেও পাশাপাশি আয়ুর্বেদ চর্চা করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় আয়ুর্বেদ চর্চায় আগ্রহী হয়ে উঠি। বলতে পারেন আমার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড হারবালের দিকে ঝোঁকার কারণ।

দ্য রিপোর্ট : আপনিতো বিদেশে গিয়ে বাণিজ্য বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। ব্যাংকে চাকরি করেছেন। সেটা কেন ছাড়লেন?

নন্দিতা শারমিন : ২০০২ সালে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি লাভ করি। এরপর বার্কলেস ব্যাংক-এ চার বছর চাকরি করেছি। তারপর হারবাল ও পুষ্টি বিজ্ঞান নিয়ে আমার উচ্চতর পড়াশুনার কারণে আর চাকরি করা হয়নি।

দ্য রিপোর্ট : কোথায় পড়াশুনা করেছেন পুষ্টি বিজ্ঞানের উপর ?

নন্দিতা শারমিন : ‘শ’- একাডেমিতে পুষ্টি বিজ্ঞানের উপর পড়ালেখা শুরু করি। সেখান থেকে ডিপ্লোমা এবং অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা করেছি। এছাড়া ন্যাচারাল হেলথ এন্ড সাইন্স ইন্সটিটিউট থেকে হারবাল বিষয়ে এবং অর্গানিক কসমেটিকসের উপর কোর্স করি। বর্তমানে হারবাল স্কিন কেয়ারের উপর উচ্চতর ডিপ্লোমা করছি।

দ্য রিপোর্ট : এই বিষয়ে আপনার ভবিষৎ পরিকল্পনা কি?

নন্দিতা শারমিন : আমার প্রথম কাজ হারবালের উপর নিয়মিত গবেষণা করা। পাশাপাশি আমি শতভাগ প্রিজারভেটিভ ও ক্যামিক্যালমুক্ত হারবাল উপাদান উৎপাদন ও বাজারজাত করার কথা ভাবছি। সে লক্ষ্যে আমি কাজও শুরু করেছি। ‘আমলকি’ নামে একটি উপাদান তিন মাস হলো বাজারে বেশ সাড়া ফেলেছে। দেশের মানুষের উপকার হয় এমন উপাদানগুলো আমি উপহার দিতে চাই দেশবাসীকে। এটাই আমার আসল উদ্দেশ্য। দেশে ভেজালের ভিড়ে মানুষকে একটি নির্ভেজাল পণ্য দিতে চাই। হারবাল উপাদানের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি করতে চাই।

দ্য রিপোর্ট : আমাদের দেশে নকল হারবাল উপাদান বিক্রি হচ্ছে, এতে মানুষের শরীরে কি প্রভাব পড়ছে?

নন্দিতা শারমিন : নকল হারবাল ব্যবহারের কারণে মানুষের শরীরের চামড়া কালো ও নষ্ট হয়ে যায়। যে উদ্দেশে ব্যবহার করা হয় সে উদ্দেশ্য সাধন হয় না। বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। স্কিনে নানা উপসর্গ দেখা দেয়।

দ্য রিপোর্ট : আপনি দীর্ঘদিন লন্ডনে বসবাস করছেন। ওখানে হারবাল পণ্য কি নকল হয় ?

নন্দিতা শারমিন : লন্ডনে হারবালে নকলের কোনো সুযোগই নেই। কারণ ওখানকার স্টোরগুলো কিংবা কোম্পানিগুলো রেজিস্টার্ড। তাছাড়া প্রত্যেকটা পণ্য চেক করে মার্কেটে আসে। সুতরাং নকল হারবালের কথা ইংল্যান্ডে ভাবাই যায় না।

দ্য রিপোর্ট : আপনি একইসঙ্গে হারবাল ও পুষ্টিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করছেন। এর একটার সঙ্গে আরেকটার প্রয়োজনীয়তা বা সম্পৃক্ততা কতখানি ?

নন্দিতা শারমিন : হারবালের সঙ্গে পুষ্টিবিজ্ঞানের নিবিড় সম্পর্ক। কারণ দুটোই স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এবং সুস্বাস্থ্যের কথা বলে।

দ্য রিপোর্ট : বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় হারবাল চিকিৎসা বা প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্র কতখানি? কিংবা জনগণের সচেতনতার মাত্রা কি যথেষ্ট মনে করেন ?

নন্দিতা শারমিন : আমাদের দেশে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা আছে হারবাল ও হারবাল প্রোডাক্ট নিয়ে। আমি তাদের ভুল ধারণা ভেঙে দিতে চাই। গত তিন মাসের অভিজ্ঞতা বলে আমি সেটা পারব। আমি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী। অনেকে আমাকে বলেছেন আমার প্রোডাক্টগুলোর দামটা একটু বেশি। আমি অকপটে বলি, আমার তো প্রিমিয়াম কোয়ালিটি নিয়ে আসতে হচ্ছে। সুতরাং দামতো একটু বেশি হবেই। আমি মনে করি আমাদের দেশে হারবালের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমাদের দেশ হারবালের দেশ। আমাদের এখানে সবকিছুই প্রাকৃতিক উপাদানে সমৃদ্ধ।

দ্য রিপোর্ট : হারবাল চিকিৎসার উপকারিতা সম্পর্কে বলবেন কি ?

নন্দিতা শারমিন : হারবাল চিকিৎসা তড়িৎ কোনো সমাধান দিতে পারে না; তবে ধৈর্য্য নিয়ে একটা সময় পর্যন্ত নিয়মিত ব্যবহার করলে এর সুফল পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক উপায়ে একটা সমস্যা সমাধানের জন্য একটু সময়তো লাগবেই। সেই ধৈর্য্য ও ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে আমাদের এর ব্যবহার করতে হবে। হারবালের বড়ো গুণ হলো এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই নিজেদের সচেতন হয়ে ধৈর্য্য ধরে এর ব্যবহার করলে উপকার আসবেই।

দ্য রিপোর্ট : হারবাল পণ্য বাজারজাত করার কথা মাথায় এলো কীভাবে?

নন্দিতা শারমিন : আমি আমার ব্যবহৃত সকল পণ্য নিজেই তৈরি করি। এক সময় বিভিন্ন অনলাইনে বাংলাদেশের বিভিন্ন হারবাল পণ্য দেখতাম। সেটা দেখেই মূলত বাংলাদেশে পণ্য বাজারজাতের চিন্তা আসে। তাছাড়া ভারতের শাহনাজ হোসাইন আমাকে খুব হিট করত। তার প্রোডাক্টগুলো কিন্তু এখনো লন্ডনে ভালো চলে। তিনি তার গুণগতমানটা ধরে রেখেছেন। এমনকি তিনি লন্ডনে যান হারবালের কোর্স করাতে। তখন ভাবলাম তাহলে হারবালের ওপর কোর্সটা করি। এইসব নিয়েই হারবাল পণ্যের প্রতি আগ্রহ নিয়ে কাজ শুরু করা। তাছাড়া ইংল্যান্ডের হারবাল স্টোরগুলোতে হারবালের উপাদানগুলো এশিয়া বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হচ্ছে। সেটা দেখে মনে হলো আমার দেশেই তো সব উপাদান আছে। তাহলে আমি কেন বসে থাকব। তারপর আমি আমার স্বামী সৈয়দ জাহিদুন নবীর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় শুরু করার কথা ভাবলাম। লন্ডনে খুব দাম দিয়ে কিন্তু এসব হারবাল পণ্য কিনছে মানুষ।

দ্য রিপোর্ট : বাজারের অন্যান্য হারবাল পণ্যের থেকে আপনার পণ্যের গুণগত পার্থক্য কোথায় ?

নন্দিতা শারমিন : আমাদের দেশেই ৯৫ শতাংশ হারবাল উপাদান উৎপন্ন হয়। আমি চেষ্টা করি আমাদের দেশে যেটা আছে সেটা নিয়েই সকল পণ্য তৈরি করতে এবং গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখতে। কিছু তেল আমি লন্ডন থেকে আনি। যেগুলো এখানে পাওয়া যায় না। এমনকি ভারতেও না। লন্ডন থেকে আনলে আমি নিশ্চিত থাকি যে এটা নির্ভেজাল। আমার সকল পণ্য আমি নিজে থেকে নিজের লোক দিয়ে তৈরি করাই। এখানে মিডিয়া বলে কোনো কথা নেই। আমি আমার সকল পণ্যের শতভাগ গুণগতমানের নিশ্চয়তা দিতে পারি। তেল-মসলা নিজে ভাঙিয়ে তারপর ব্যবহার করি। আমি মানুষকে আমার ব্যবসার চেয়ে প্রোডাক্টের গুণগত মানের নিশ্চয়তা দিতে চাই।

দ্য রিপোর্ট : আপনি সম্প্রতি হারবাল ও পুষ্টি বিষয়ে একটি কর্মশালা করেছেন, যেটি সাধারণত আমাদের দেশে নতুন একটি ধারণা। এই প্রথমবার কাজটি করে কেমন সাড়া পেলেন?

নন্দিতা শারমিন : যে সব বিষয় নিয়ে মেয়েরা সাধারণত কথা বলে না; কর্মশালার মধ্য অনেক নতুন সমস্যার কথা জানা গেছে, যেগুলো আমিও জানতাম না। সেটা ভালো দিক। যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই প্রশংসা করেছেন।

দ্য রিপোর্ট : আপনার হারবাল প্রোডাক্ট ‘আমলকি’ তিন মাস হলো বাজারজাত শুরু করেছেন, এই তিন মাসে কেমন সাড়া পেলেন ?

নন্দিতা শারমিন : আমার প্রোডাক্টগুলো বাজারজাত হওয়ার পর আমি এতো রেসপন্স পেয়েছি যা আমি ভাবতেই পারিনি। এই তিন মাসে মানুষের আস্থা ও জনপ্রিয়তায় আমি সত্যি আনন্দিত।

দ্য রিপোর্ট : এই তিন মাসের অভিজ্ঞতায় ভবিষ্যৎ ভাবনা কি ভাবছেন ?

নন্দিতা শারমিন : আমার প্রোডাক্টগুলো আগে আমি নিজে ব্যবহার করে তারপর গুণাগুণ বিবেচনা করি। বিভিন্ন কোম্পানি যেমন অন্য প্রাণির উপর ব্যবহার করে থাকে। তবে আমার তো কেবল শুরু। আগামীতে ভারতের কিছু হারবাল প্রোডাক্ট আছে যেটা আমাদের দেশে পাওয়া যায় না। সেগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করার ইচ্ছে আছে। পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকান কিছু হারবাল আছে সেটাও নিয়ে আসার ইচ্ছে আছে।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/এনআই/আগস্ট ০৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর