thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

ইবনে সিনায় ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

২০১৭ আগস্ট ০৬ ১৫:৩২:৩৩
ইবনে সিনায় ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৃত রোগীর নাম আমির হোসেন (৫৫)।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ইবনে সিনার প্রফেসর ডা. জাফরুল্লাহ সিদ্দিকের গাফিলতি, অবহেলা ও ভূল চিকিৎসার কারণে আমির হোসেনের অকালমৃত্যু হয়েছে। এজন্য তারা সিএমএম আদালতে মামলার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে করবেন সংবাদ সম্মেলন।

তবে ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেছেন, আমির হোসেনের চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি ছিল না।

মৃত আমির হোসেনের স্ত্রী রুবী বেগমের অভিযোগ, ‘পেটে ব্যথার কারণে ১ জুলাই ধানমন্ডি শংকরের ইবনে সিনা হাসপাতালে ডা. জাফরুল্লাহ সিদ্দিকের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করানো হয় আমার স্বামীকে। শুরু থেকেই ব্যথা উপশমের জন্য ডা. জাফরুল্লাহ প্যাথেডিন ও নেলবন সেবন করাতে থাকেন। ৩ জুলাই আলট্রাসনো করা হলে আমাদের জানানো হয়, পিত্তথলীতে পাথর হয়েছে। ৪ জুলাই পাথর অপসারণের জন্য অপারেশন করানো হয়। অপারেশন শেষে আমাদের বলা হয়, অপারেশন সাকসেস। ৫ জুলাই বেডে নেওয়া হয়। কিন্তু ব্যথা কমেনি। আমাদের আবারো নানান টেস্ট করতে বলা হয়। কিন্তু কি পাওয়া যাচ্ছে আমাদের জানানো হচ্ছে না। রিপোর্টও দেখানো হচ্ছিল না। এরপরও ব্যথা না কমায় আবারো প্যাথেডিন ও নেলবন সেবন করানো হতে থাকে। ১০ তারিখে জানানো হয়, রিপোর্ট ভালো। কিন্তু ব্যথা কমেনি। ১০ তারিখের রিপোর্ট আমরা অনেক পরে হাসপাতাল থেকে গোপনে তুলি। সেখানে দেখি, নাড়িতে প্যাচ ও সংক্রমণ হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে তা গোপন করা হয়েছিল। ডুপ্লিকেট কপি তুলে এগুলো দেখতে পাই। এরপরও ডা. জাফরুল্লাহ আমাদের বলেন, রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু ব্যথা কমেনি। পরে আবার বলা হয়, হাড় ক্ষয় হয়েছে। মেডিকেল বোর্ড গঠন করতে হবে। এ কথা বলে আমাদের কাছ থেকে আবারো টাকা নেওয়া হয়। ১৩ তারিখ বিকেলে একটা ইনজেকশন দেওয়া হলে আমার স্বামীর ব্যথা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ১৪ জুলাই ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, রোগী চাইলে আপনারা বাসায় নিতে পারেন। আমরা ১৪ জুলাই বিকেলে রওনা হই কিন্তু সড়কে গাড়িতেই আবার ব্যথা শুরু হয়। ১৬ জুলাই জানতে পারি, নাড়িতে প্যাঁচ লেগে গেছে। খাদ্যনালী বন্ধ হয়ে আছে। ১৭ জুলাই আবারো হাসপাতালে ভর্তি করাই আমার স্বামীকে। ১৮ তারিখে ক্যাবিনে নেওয়া হয়। ১৯ জুলাই আবারো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয় কিন্তু ব্যথা কমেনি। ২৩ জুলাই বলা হয় সামান্য একটা অপারেশন করতে হবে। অপারেশন করে বলা হয়, নাড়ি পচে গিয়েছিল। এখন আইসিইউতে রাখতে হবে। অথচ এতো বড় একটা অপারেশন হলো ডাক্তার আমাদের সাথে কোনো চুক্তি করেনি। আমাদের কোনো সাক্ষর নেয়নি। ডাক্তার বলে, পায়খানার রাস্তা পঁচা ছিল। অথচ অপারেশনের আগেই উনি পায়খানা করেছেন। পচা হলে পায়খানা করলো কীভাবে। এরপর ২৫ জুলাই থেকেই উধাও হয়ে যান ডা. জাফরুল্লাহ সিদ্দিক। আমাদের চিৎকার ও বার বার ফোনে ২৮ জুলাই সন্ধ্যার পর হাসপাতালে উপস্থিত হন। তার সামনে আমরা চিৎকার করলে নিজের ভুলের কথা স্বীকার করে আল্লাহকে ডাকতে বলেন। ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় আমার স্বামী মারা যান।’

রুবি বেগমের অভিযোগ, ‘আমার স্বামী পেটে পাথরের ব্যথায় কাতরাচ্ছে বলে ডাক্তারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। অপারেশনও হলো। কিন্তু মূত্রনালীর নাড়ি কীভাবে পচে গেল? এটা অবশ্যই ডাক্তারদের গাফিলতি। ৪ জুলাইয়ের ভূল অপারেশনের কারণেই আমার স্বামীর নাড়ি পচে গিয়েছে। তা না হলে তিনি কীভাবে মলত্যাগ করতেন?’

রুবি বেগম বলেন, ‘আমরা তিনটি বাচ্চা। ওরা এখন এতিম। এদের নিয়ে আমি এখন কোথায় যাবো? আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে প্রফেসর ডা. জাফরুল্লাহ সিদ্দিক রবিবার সকালে বলেন, ‘রোগী দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। টেলিফোনে সবকিছু বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়। আপনি হাসপাতালে আসুন। দেখা করে কথা বলি।’

ইবনে সিনা হাসপাতালের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে বসেছি। তাদের বলেছি, আমরা কেউ ডাক্তার নই। আপনাদের যদি মনে হয় আমাদের গাফিলতি আছে তাহলে আপনাদের পছন্দমতো বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসুন। একটা বোর্ড করি। তারপর আপনাদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে আমরা করণীয় ঠিক করবো। কিন্তু তারা এখনও আসেননি। আমিও কয়েকবার ফোন করেছি। আমাদের ডা. জাফরুল্লাহ সাহেবের চিকিৎসায় কোনো ধরনের গাফিলতি আমরা পাইনি।’

(দ্য রিপোর্ট/সাআ/এপি/আগস্ট ০৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর