thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

অবিরাম বর্ষণে নীলফামারীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

২০১৭ আগস্ট ১১ ১৯:৩৭:১৩
অবিরাম বর্ষণে নীলফামারীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, নীলফামারী : অবিরামবর্ষণে নীলফামারীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলার সবকয়টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।

গত দুইদিন ধরে নীলফামারীতে চলছে অবিরাম বৃষ্টিপাত। অবিরাম বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি জেলার ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার (১১ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৪০) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া অবিরামবর্ষণে চারালকাটা, ধাইজান, বুড়িতিস্তা, খড়খড়িয়া, ঘাঘট, ধলেশ্বরী , বুড়িখোড়া, শালকী ও দেওনাইসহ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৪টি নদীর পানি বেড়েছে। ফলে, নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে বেশ কিছু এলাকার আমন ধানের ক্ষেত।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, তিস্তায় শুক্রবার সকালে পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও বিকালে আরও ২ সেন্টিমিটার কমে ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় নীলফামারী পৌর এলাকার বাবুপাড়া, সওদাগর পাড়া, জম্মাপাড়া, মেলার ডাঙ্গা, মুন্সিপাড়া, হাড়োয়া, প্রগতিপাড়া ও কলেজ পাড়াসহ কয়েকটি পাড়া ও মহল্লায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে, দুর্ভোগে পড়েছে এইসব এলাকার মানুষজন।

গত দুই দিনের প্রবলবর্ষণে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে আছে ৫ শতাধিক পরিবার। প্রবল বর্ষণের ফলে উপজেলার বেশকটি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। উপজেলার বামুনিয়া, গোমনাতি, ভোগডাবুড়ি, জোড়াবাড়ী ও ডোমার পৌরসভার প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ডোমার উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বসুনিয়া জানান, দুই দিনের বৃষ্টিপাতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, টানাবর্ষণে ডিমলাসহ আশপাশের এলাকা নতুনভাবে বন্যাপ্লাবিত হয়ে পড়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনরবাসন কর্মকর্তা এটিএম আখতারুজ্জামান জানান, দুই সপ্তাহ আগে বন্যার্তদের জন্য শুধুমাত্র ডিমলা উপজেলায় দুই লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা ও ৭ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও মজুদ রয়েছে ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ও ১৭৪ মেট্রিকটন চাল।

পৌরসভার ৩নং, ৪নং এবং ৮নং ওয়ার্ডের বেশকিছু পরিবারের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের গণসাহায্য সংস্থা সংলগ্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বাড়ীতে পানি প্রবেশ করায় এক প্রকার গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো। প্রায় কোমর পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে তাদের ঘরবাড়ী। পানি নি্ষ্কাশনের ব্যবস্থা ও পানি যাওয়ার রাস্তার ক্যানেল প্রভাবশালীরা বন্ধ করে দেওয়ায় প্রায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দী হয়ে থাকতে হয় এই এলাকার পরিবারগুলোকে।

পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড ও সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের প্রায় চার শতাধিক পরিবার প্রতিবছর বর্ষার সময় পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বর্ষা মানেই তাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়। প্রতিবছর বর্ষার সময় তাদের বাড়ীর ভিতর পানি প্রবেশ করে কোমর পানি পর্যন্ত থাকে। পানি না নামা পর্যন্ত শুকনো খাবার খেয়েই দিনযাপন করতে হয় দুর্গতদের। ঐ এলাকার বৃষ্টির পানি ড্রেন দিয়ে সাবেক তহশিলদার অফিস ক্যানেলের মধ্য দিয়ে চলে যায়। সবকিছু ঠিক থাকলেও প্রভাবশালী একটি পরিবার ঐ ক্যানেলটি মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ায় পানি বের হতে না পেরে প্রতিবছর এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আখতারুজ্জামান সুমন পানিবন্দী হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এখানে জরুরী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া অনেকেই পানি নিষ্কাশনের সরকারী ইউ ড্রেনগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।’

৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সামিউল হক জানান, তার এলাকার শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

এদিকে, প্রবল বৃষ্টিপাতে ডোমার পৌর শহরের প্রায় সব রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের উপজেলা থেকে থানা পর্যন্ত রাস্তাগুলো পানিতে চলাচলের অযোগ্য হয়ে আছে। শহরের রেলগেটের পশ্চিম ও পৌরভবনের পূর্ব দিকের রাস্তাগুলো এতটাই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে যে, স্থানীয়রা এই রাস্তা ব্যবহার করতে পারছে না।

এ ব্যাপারে নীলফামারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকেীশলী একেএম হামিদুর রহমান জানান, বৃষ্টির ফলে জেলার সড়ক ও মহাসড়কের রাস্তাগুলো খানাখন্দে পানিতে ভরে গেছে। পানি কমে গেলে সড়কগুলো সংস্কার করা হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এজে/এনআই/আগস্ট ১১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর